Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

শুধু ব্যাংক ডুবাননি ঋণের বিনিময়ে ঘুষও নিয়েছেন

প্রিন্ট সংস্করণ॥বিশেষ প্রতিবেদক

মার্চ ২৮, ২০১৯, ০৭:৪৭ পিএম


শুধু ব্যাংক ডুবাননি ঋণের বিনিময়ে ঘুষও নিয়েছেন

মহীউদ্দীন খান আলমগীর ফারমার্স ব্যাংকটি শুধু যে ডুবিয়েছেন তা না, ব্যাংকের ঋণ দেয়ার বিনিময়ে ঘুষও নিয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত সংগ্রহ করে কমিশন খেয়েছেন। এসব অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি শত শত কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ দিয়ে ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঋণ নেওয়া গ্রাহকের হিসাব থেকে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নামে পে-অর্ডার করার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শক দল।অনিয়ম দুর্নীতির কারণে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে ব্যাংক থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এখন ব্যাংকের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, মখা আলমগীর আবারো ব্যাংকটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য নানা তদবির করে যাচ্ছেন।এ বিষয়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তার জিপি নাম্বারে বারবার কল করেও পাওয়া যায়নি। ডুবে যাওয়া বেসরকারি খাতের চতুর্থ প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত সংসদীয় (পাবলিক অ্যাকাউন্টস) কমিটির সাবেক সভাপতিও ছিলেন। তার হাত দিয়ে ব্যাংকটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে— এমনটাই প্রত্যাশা করেছিল সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক ও সাবেক আমলা। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ প্রদানের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, তনুজ কর্পোরেশনের ‘টাইম লোন’ হিসাব থেকে ২০১৭-র ১৯ জুলাই এক কোটি ২২ লাখ টাকা গ্রাহকের চলতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। ওইদিনই চলতি হিসাব থেকে ৪২ লাখ টাকা নগদ তুলে নেওয়া হয়। বাকি ৮০ লাখ টাকা পে-অর্ডার হিসাবে (নং ০১৪০১০০০০১৪৭৪) স্থানান্তর করে পিও (নং ০১২০৫৩৯) ইস্যু করা হয়। পরের দিন পে-অর্ডারটি বাতিল করে ৮০ লাখ টাকা পার্কিং হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। ওইদিনই ১৮ লাখ টাকা এবং ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। প্রথম পে-অর্ডারটির আবেদনকারী হিসেবে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নাম।ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলের মন্তব্য ছিল, গ্রাহকের হিসাব থেকে উত্তোলিত অর্থের মাধ্যমে নিজস্ব প্রয়োজনে পে-অর্ডার ইস্যু করার মাধ্যমে মহীউদ্দীন খান আলমগীর অনিয়ম বা জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ফারমার্স ব্যাংকের তারল্যসংকট কাটাতে ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (আইসিবি)। ব্যাংকটিতে সরকারের শেয়ার রয়েছে ৬৪ শতাংশ। আর বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শেয়ার রয়েছে ৩৬ শতাংশ।ফারমার্স ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটায় ২০১৭ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় ওই সিদ্ধান্ত নিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে।২০১৬ সালের মার্চে ড. আতিউর রহমান পদত্যাগের আগেও একাধিকবার ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম বন্ধে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেন। কিন্তু তখন সরকারি হিসাবসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থেকে মহীউদ্দীন খান আলমগীর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা টুকিটাকি ব্যয় নিয়েও খুঁত ধরতে শুরু করেন। এতে আতিউর রহমান কিছুটা দমে গেলেও বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম বন্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন।অভিযোগ রয়েছে, সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বেপরোয়া ঋণ বিতরণ করে নিজের স্বার্থ হাসিল করেন। তিনি ব্যাংকটিকে ব্যক্তিগত স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ব্যাংকিং নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিয়েছেন, নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছেন।জানা গেছে, মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রতিটা ক্ষেত্রেই অনিয়ম করেছেন। ঋণ বিতরণ, আমানত সংগ্রহ ও জনবল নিয়োগে তার অনিয়ম সব ধরনের আইন লঙ্ঘন করেছে। জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতির ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত সংগ্রহ করে কমিশন খেয়েছেন। পাশাপাশি এসব আমানত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। এতে তিনি কয়েকশ কোটি টাকার লাভবান হলেও হাজার কোটি টাকার ক্ষতিতে ফেলেছিলেন ব্যাংটিকে।বর্তমানে অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে নাম পরিবর্তন করা ফারমার্স ব্যাংক। যা পদ্মা ব্যাংক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকে কোনো সংকট নেই। তারল্যসংকট, ইমেজসংকট আর অনিয়ম থেকে বেরিয়ে এসেছে ব্যাংকটি। এখন কেবল এগিয়ে যাওয়া। নতুন নামে সফল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে দেশের শীর্ষ ২০ ব্যাংকের মধ্যে নাম লেখাতে চায় ব্যাংকটি। এ লক্ষ্যেই বর্তমান পর্ষদ কাজ করছে।