Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

‘দেশে ফিরে ভিক্ষা করে খাবো আমাকে উদ্ধার করো’

প্রিন্ট সংস্করণ॥হাসান-উজ-জামান

এপ্রিল ১, ২০১৯, ০৫:৪৮ এএম


‘দেশে ফিরে ভিক্ষা করে খাবো আমাকে উদ্ধার করো’

‘জীবনে কী পাপ করেছি, কী অন্যায়? যে কারণে আমাকে সৌদি আরবে পাঠাইলা। এখানে কিভাবে আছি- জানতে চেয়ো না। শুধু এটুকু বলতে পারি, যদি দোজখ বলতে কিছু থাকে; তা এখানে আছে। দেশে গিয়ে ভিক্ষা করে খাবো। তোমাদের পায়ে পড়ি, এখান থেকে উদ্ধার করো।’ আড়াই মাস আগে সৌদি আরবে যাওয়া এক নাসিমা দেশে ফিরে আসার জন্য পরিবারের সদস্যদের কাছে এভাবেই আকুতি জানিয়েছেন। ভুক্তভোগীর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। স্বামী-সংসার সবই আছে। তবুও ভাগ্য বদলাতে আড়াই মাস আগে গৃহকর্মীর কাজে পাড়ি দিয়েছেন সৌদি আরবে। তাকে সেখানে নিতে মিথ্যা প্রলোভন ও ভালো থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন জনৈক জাকির হোসেন ও আনোয়ার। তারা পরিচয় করিয়ে দেন পল্টন থানাধীন ১৪৭/৩ ডিআইটি এক্সটেনশন রোডের মেসার্স ন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। ওই জাহাঙ্গীর আলমই তাকে ভালো বেতন ও ভালো পরিবেশে কাজ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার পর নাসিমা বেগম বুঝতে পারেন বাস্তবতা। সেখানের গৃহকর্তা ও তার সহযোগীদের ভয়ঙ্কর ও হিংস আচরণ ফুটে ওঠে তার আর্তনাদে। একেকটা মানুষ যেন পশুর চেয়েও নিষ্ঠুর। এ ব্যাপারে নাসিমার মা দিলরুবা বেগম আমার সংবাদকে বলেন, ‘মেয়েটা সৌদি আরবে যাওয়ার পর কোনো খোঁজখবর নেই। হঠাৎ একদিন ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে। একটি কথাই মেয়ে বলতে থাকে- যেভাবেই হোক দেশে ফিরিয়ে নাও। আর কিচ্ছু চাই না। আর কিছুদিন দেরি করলে ওরা আমাকে লাশ বানিয়ে ফেলবে। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই।’ দিলরুবা বলেন, ‘আমার কিচ্ছু চাই না, শুধু মেয়েকে সুস্থভাবে ফিরে পেতে চাই। তিনি এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেন মেসার্স ন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির কর্তৃপক্ষের সাথে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক বলেছেন, ভুক্তভোগীকে ফিরিয়ে আনতে বিমান ভাড়ার অর্ধেক টাকা পরিশোধ করলে তিনি বিষয়টি ভেবে দেখবেন, যাতে দ্রুত তাকে ফিরিয়ে আনা যায়। দিলরুবা বেগম এ ব্যাপারে ১৮ মার্চ পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তার স্ত্রী রিসিভ করেন। তিনি জানান, জাহাঙ্গীর চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। জাহাঙ্গীরের ভাই ফালু সবকিছু দেখাশোনা করেন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিক্রুটিং ব্যবসার আড়ালে মেসার্স ন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি নাসিমার মতোই মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে সহজ-সরল নারীদের বিদেশে পাচার করছে। সৌদি আরবের বিভিন্ন মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জাহাঙ্গীর এদেশের অসহায় কিশোরী ও নারীদের বিদেশে পাঠায়। এ নারীরা সেখানে গৃহকাজের পাশাপাশি গৃহকর্তাদের লালসার শিকার হতে বাধ্য হন। কখনো কখনো শিশুদেরও সাবালিকা সাজিয়ে পাসপোর্ট বানানো হয়। আর সুকৌশলে এসব শিশুদের পাঠানো হয় বিভিন্ন দেশে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের জীবনের বড় সর্বনাশ ঘটে যায়। তারা নিংস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসেন। মান-সম্মানের ভয়ে সত্যকে লুকাতেও বাধ্য হন। আর আইনি আশ্রয়ে গেলেও এসব পাচারকারীদের প্রভাবের কাছে তারা হেরে যান।