প্রিন্ট সংস্করণ॥নুর মোহাম্মদ মিঠু
এপ্রিল ১, ২০১৯, ০৬:২৪ পিএম
রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাতের পাশে অর্ধশত থেকে শুরু করে শতবর্ষী গাছ ও উঁচু দালানের ছাদে কার্নিশে রাখা ফুলের টব জনজীবনে নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব গাছের কোনোটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং তা চিহ্নিত করে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কর্তন করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে এতসব সংস্থা থেকেও যেন নেই কেউই। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছ কাটার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে কমিটি করা কিংবা নতুন করে গাছ লাগানোর দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের হলেও এসব নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বেগ পেতে হচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশনকেই। এসব ঝুঁকিপূর্ণ গাছ শনাক্তকরণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের নেই আলাদা কোনো ব্যবস্থা। ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছের পাশাপাশি মধ্য চৈত্রের আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে গত রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীতে উঁচু ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় আসন্ন কালবৈশাখীতেও ইট কিংবা ফুলের টব পড়ে প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে রাজধানীতে। রাজধানীতে সড়কের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছের বেশির ভাগই ভেতরে অন্তঃসার শুকিয়ে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ছোটখাটো ঝড়ে ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে বলে শঙ্কা করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এসব গাছ চিহ্নিত করে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কাটার ব্যবস্থা না করলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা। রাজধানীতে এর আগে বিভিন্ন সময়ে গাছ পড়ে বেশকটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও আদৌ ঝুঁকিপূর্ণ গাছ চিহ্নিত করতে দেখা যায়নি কোনো সংস্থাকেই। কিন্তু কাজটি করবে কে? এমন প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থা থেকেও মেলেনি কোনো উত্তর। হেলেপড়া, উপচেপড়া, মরা গাছ কাটার দায়িত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনের হলেও সেদিকে সিটি কর্পোরেশনের খেয়াল নেই বললেই চলে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছ শনাক্তে পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও ঠিকঠাক পালন করছে না দুই সিটি কর্পোরেশন। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, জোনাল অফিসের কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে দেখাশোনা করে থাকেন। তারা যদি মনে করেন কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, তাহলে তা কাটতে পারবেন এবং সেখানে নতুন করে গাছও লাগাতে পারবেন। তবে সাধারণত এমনটা দেখা যায়নি। এদিকে ঢাকা পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষসহ (ওয়াসা) বিভিন্ন সেবা সংস্থা নানান সময়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করে থাকে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অনেক সময় সড়ক ও ফুটপাতের পাশে লাগানো গাছের শিকড়ও কাটা পড়ে। আবার ফুটপাত উন্নয়নের ফলেও গাছের শিকড় বিস্তৃত হতে পারে না। তাই মাটির ওপর গাছগুলো আপাতত সজীব দেখালেও ভেতরে অনেকটাই দুর্বল থাকে। এতে প্রায়শই সড়কের পাশের গাছ উপড়ে পড়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সামনে কালবৈশাখীতে এই ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। কালবৈশাখীর বায়ুর গড় গতিবেগ সাধারণত ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশিও হওয়ায় দুর্বল এসব গাছ সহজেই ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি মধ্য চৈত্রের গত রোববার সন্ধ্যায় আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে রাজধানীতে গাছ ও বহুতল ভবনের ইট পড়ে ছয়জন নিহত হলেও আসন্ন কালবৈশাখী ঝড়ে রাজধানীতে মৃত্যুর ঘটনা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গাছ কাটার এখতিয়ার বা ক্ষমতা কোনোটাই সম্পত্তি বিভাগের নেই। কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ বা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না, তা শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থাও সিটি কর্পোরেশনের নেই। তবে কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে এলাকার লোকজন বা আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সম্পত্তি বিভাগকে জানালে তারা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সাথে যোগযোগ করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। অবশ্য এ নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত গাছ কর্তনবিষয়ক কমিটির অনুমতি নিয়েই সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ছাড়া ঝড়ে উপড়ানো কোনো গাছ সড়কে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে সিটি কর্পোরেশন তাৎক্ষণিক তা সরিয়েও নিতে পারে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছ কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনা এড়াতে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে আর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছগুলো সিটি কর্পোরেশন দেখভাল করে না, এটা বলা ঠিক হবে না। তবে প্রতিটি গাছ ধরে পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো গাছ জনস্বার্থের ব্যাপারে হুমকি এমন খোঁজ এলে তা অপসারণ করার ব্যবস্থা করা হয়। সূত্র জানায়, সড়ক ও ফুটপাতের পাশে কত গাছ আছে, সেই পরিসংখ্যানও নেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে। এসব গাছ কে লাগিয়েছেন, কার গাছ এ বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। ১৯৭৮ সালের আগে তৎকালীন ঢাকা পৌরসভা শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগিয়েছিল। একইভাবে গণপূর্ত বিভাগ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের লাগানোও আছে অনেক গাছ। তবে এসব গাছের তথ্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে নেই।এ বিষয়ে নগরবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, সিটি কর্পোরেশন রাস্তা কাটার অনুমতি দেয়। তাই রাস্তার পাশের গাছের দেখাশোনার দায়িত্বও তার। কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ হলে তা ঘোষণার দায়িত্বও সিটি কর্পোরেশনের। দুর্ঘটনা এড়াতে গাছের তালিকা করে তা নিয়মিত দেখভাল করা উচিত বলে পরামর্শ দেন এই নগরবিদ। কোথায় কোন জাতের গাছ লাগানো হবে, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কোন সংস্থা করবে এবং কখন কোন গাছ কাটবে এসব নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। নীতিমালা করা প্রয়োজন বলে মনে করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারেক বিন ইউসুফ বলেন, গাছ শুধু লাগালেই হবে না। সেগুলো কে দেখাশোনা করবে, সেটার টেকসই কর্মসূচিও থাকতে হবে।