Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

দুই গ্রুপের বিরোধ প্রকাশ্যে

প্রিন্ট সংস্করণ॥রাসেল মাহমুদ

এপ্রিল ১, ২০১৯, ০৬:৩৯ পিএম


দুই গ্রুপের বিরোধ প্রকাশ্যে

 সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবিতে গত ৭ বছর ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তবে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চললেও এখনো সফলতার মুখ দেখেনি ছাত্রসমাজের এই দাবি। আর সরকারের কাছে বয়স বৃদ্ধির দাবিটি সঠিকভাবে উপস্থাপন ও বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন নিয়ে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আন্দোলনকারী দুটি গ্রুপের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে সেই বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করছে বলে মনে করছেন আন্দোলন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। জানা যায়, গত বছর কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মাত্র এক থেকে দেড় বছর কঠোর আন্দোলন করে দাবি আদায় করেছে। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছর ধরে আন্দোলনের পরও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার আন্দোলন ফলপ্রসূ হয়নি। দাবি আদায়ের জন্য চলতি বছরে এসেও কয়েক দফা কর্মসূচি পালন ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠায় আন্দোলনের গতি কমতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৭ বছর ধরে আন্দোলন করলেও ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারেনি ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন। এতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এছাড়া আন্দোলনকারীদের মধ্যে একাধিক গ্রুপও তৈরি হয়েছে। তাদের চলতি মাসেই আলাদা কর্মসূচি ঘোষণা করতে দেখা গেছে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে মনোমালিন্যও দেখা গেছে। তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।আন্দোলনকারী চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে আলাদাভাবে কর্মসূচির ডাক দেয়ায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ আন্দোলনকারীরা। কোন গ্রুপের কর্মসূচিতে যোগ দিলে দাবি আদায় হবে- তা নিয়েও দ্বিধায় পড়েছেন তারা। ফলে অধিকাংশ কর্মসূচিতেই কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি থাকছে না। তারা জানান, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির আন্দোলনে এখন অনেকেই নেতৃত্বের পর্যায়ে আসতে চায়। তাদের অনেকেই শিগগিরই আন্দোলন সফল হতে পারে- এমন ধারণায় এ অবস্থান নিতে চাইছেন। ফলে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা কাদের সমর্থন দেবেন বুঝতে পারছেন না। ফলে আন্দোলন ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়ছে। যদিও তাদের দাবি, মতবিরোধ থাকবে, তবে দাবি আদায় করাই মূল উদ্দেশ্য। এজন্য যে পদ্ধতিতে এগোলে ভালো হয়, সেটাই তারা করবে। একাধিক আন্দোলনকারী বলেন, এখানে যাদের বয়স ৩৫ বছর ছাড়িয়ে গেছে তাদের অনেকেই নেতৃত্ব দিতে চায়। অন্যদিকে যাদের বয়স ৩৫ এর কম তারাও অনেকে নেতৃত্ব চান। মূলত যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি; তারা ২০১২ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন বলে দাবি করেছেন। এতদিন ধরে আন্দোলন করার কারণে তারা নেতৃত্বে আসতে চান। এর মধ্যে কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকেই নেতৃত্ব তাদের ‘কাছের ছোট ভাই’কে দিতে চান।অন্যদিকে, যাদের বয়স ৩৫ বছরের কম তারাও নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নিতে চান। তাদের মতে, যাদের বয়স ৩৫ ছাড়িয়ে গেছে এ আন্দোলনে তাদের থাকা যৌক্তিক নয়। এই প্রশ্নে তারা ৩৫-র বেশি বয়সিদের হাতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে নারাজ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপ থাকলেও শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে আসা ইমতিয়াজ হোসেন, সঞ্জয় দাসের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি উল্লেখ্যযোগ্য।সঞ্জয় দাসের গ্রুপের সমর্থকদের মতে, তিনি আগে থেকেই এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই তিনি এতে নেতৃত্ব দিতে চান। অন্যদিকে ইমতিয়াজ গ্রুপের মতে, সঞ্জয় চাকরি করেন। তিনি আগে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক এম এ আলী। জানা গেছে, এ দুগ্রুপের নেতা আলাদা থাকার পাশাপাশি তাদের ফেসবুক গ্রুপও আলাদা। কর্মসূচিও আলাদাভাবে পালন করছেন তারা। এছাড়া আরও বেশকিছু গ্রুপের মাধ্যমে এ আন্দোলন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি গ্রুপ চলতি মাসের ২৯ তারিখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। অপর গ্রুপ আগামী ১২ এপ্রিল থেকে দুদিনের অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘সঞ্জয় আগে আন্দোলন করত। এখন সে চাকরি করে তাই আর নেই। তাকে এক সময় সাধারণ সম্পাদক রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন সাধারণ সম্পাদক এম এ আলী। তিনি বলেন, ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন আমরা সবার আগে শুরু করেছি। সে দু-তিন বছর পরে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে আলাদা আন্দোলনের চেষ্টা করছে। তাদের ফেসবুক গ্রুপও আলাদা।’সঞ্জয় দাস বলেন, ‘৩৫ চাই’ আন্দোলনের অনেকগুলো গ্রুপ আছে। কিন্তু আমাদের গ্রুপটাই বড়। দ্বিমতের কারণে আমাদের অনেকগুলো গ্রুপ হয়েছে। আন্দোলনের বয়স অনেক হওয়ার কারণে নানা সমস্যা চলছে। যারা কমিটিতে নতুন তাদের দ্বিমত পোষণের কারণে এসব সমস্যা চলছে।তিনি আরও বলেন, বয়সের পার্থক্যের কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। ৩৫ বছরের বেশি বয়সের নেতাদের কমিটিতে না রাখার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।