প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন
এপ্রিল ৩, ২০১৯, ০৬:২২ পিএম
বকেয়া বেতন-ভাতাসহ নয় দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটকল শ্রমিকরা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়নসংক্রান্ত একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মজুরি স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য মিল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিজেএমসির আওতাধীন শ্রমিকদের ১ জুলাই ২০১৫ হতে বেতন নির্ধারণ করা হবে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটকল শ্রমিকদের খুব দ্রুত বেতন-ভাতা দিয়ে দেয়ার জন্য তাদের পে ফিক্সেশন শুরু করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রায় ৬০ হাজার পাটকল শ্রমিকদের এই বিশাল অংকের অর্থ দেয়ার বিষয়ে সরকার আন্তরিক। এ বিষয়ে বিজেএমসির চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করার জন্য সকল মিল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতীয় মজুরি স্কেল ২০১৫ বাস্তবায়নের জন্য পে ফিক্সেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আন্দোলনের বিষয়ে বিজেএমসির চেয়ারম্যান বলেন, এটা তাদের পূর্বঘোষিত আন্দোলন ছিলো। এই শ্রমিকদের মধ্যে কিছু লোক বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নেতারা বিষয়টি জানেন। আমরা তো বেতন নির্ধারণের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আগামী ৩ মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পাওনা পরিশোধ করা হবে। একসঙ্গে অনেক টাকা দিতে হবে। এই টাকা আগামী অর্থ বছরের শুরুতে দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান। এদিকে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো রাজপথ-রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি পালন করে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া খুলনা অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে শুরু হওয়া টানা ৭২ ঘণ্টার শ্রমিক ধর্মঘট চলছে। গতকাল শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করেছে। শ্রমিকদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করার কারণে নতুন রাস্তা মোড় দিয়ে যানবাহন ও খুলনার সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা বলেন, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ. গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া টাকা প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ, পাট মৌসুমে পাটক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ নয় দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলো। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা রাজপথে আবার নামতে বাধ্য হয়েছি। পাটকল শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন জানান, শ্রমিকরা ৭ থেকে ৯ সপ্তাহের মজুরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, ঘর ভাড়া দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।