Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

পাতাল রেলের যুগে যাচ্ছে দেশ

প্রিন্ট সংস্করণ॥বিশেষ প্রতিবেদক

এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৬:১১ পিএম


পাতাল রেলের যুগে যাচ্ছে দেশ

ঢাকার যানজট নিরসনে পাতাল রেলের (সাবওয়ে) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রাথমিক নকশার কাজে হাত দিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে মূল পথ ও গন্তব্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে এ কাজে জনসম্পৃক্ততার জন্য পথচারী থেকে হাল্কাযানের যাত্রীদের মতামত নেয়া হচ্ছে। এজন্য তাদের নির্দিষ্ট ছকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। ফলে এখনো পরিকল্পনা আর কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে পাতাল রেল। তবে সরকার চাচ্ছে তাদের চলতি মেয়াদেই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে এসকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তারা ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় বিভিন্ন হাল্কাযানের যাত্রীদের নির্দিষ্ট ছকে প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এসব তথ্য থেকেই প্রাথমিক নকশার কাজ করা হবে। এরপর মূল নকশা হলে শুরু হবে কর্মযজ্ঞ।এবিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, রাজধানীর মানুষকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারে রয়েছে পাতাল রেল চালুর বিষয়টি। পাতাল রেলসেবার জন্য সরকার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শুরু করেছে। যদিও এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। কিন্তু ঢাকা শহরজুড়ে পাতাল রেলসেবা চালুর বিষয়টি এখন পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নের দিকে রয়েছে।পাতাল রেল নির্মাণের উদ্যোগ নিতে ২০১৬ সালে সেতু বিভাগকে চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। একই বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, উন্নত দেশগুলোর মতো ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকায় দুটি পাতাল রেল রুট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সেতু বিভাগের।সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সাবওয়ে নির্মিত হলে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এতে মাটির উপরে রাস্তায় মানুষের চলাচল কমবে। বাড়বে ফাঁকা জায়গা। যানজট দূর হবে।সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাটির ২০ থেকে ৪০ মিটার গভীরে পাতাল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। অত্যাধুনিক টানেলবোরিং মেশিন (টিবিএম) ব্যবহার করা হবে এ কাজে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় জনদুর্ভোগ হবে না। মাটির ওপরে খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে না। এতে মহানগরীর প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী পরিবহন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।তারা আরও জানিয়েছেন, উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল ৫০ থেকে ৭৫ বছর। পাতাল রেলের আয়ুষ্কাল ১০০ থেকে ১২৫ বছর। লন্ডনের শতবর্ষী পাতাল রেল এখনো সচল রয়েছে। যানজট নিরসনে লন্ডন ছাড়াও নিউইয়র্ক, সানফ্রান্সিসকোর মতো শহরে উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভার, ভায়াডাক্ট অপসারণ করে সাবওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার রাজধানীতে পাতাল রেল স্থাপনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকারে আনতে যাচ্ছে। স্বপ্নের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হয়েছে। এই সরকারের মেয়াদে ঢাকায় অন্তত দুটি পাতাল রেল রুট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ভিত্তিতে ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ টঙ্গী ও আমিনবাজার থেকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় রুট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ রুট দুটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় হতে পারে প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ জুলাইয়ে ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অনুমোদন দেয় সরকার। স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান টিপসা এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকায় চারটি পাতাল রেল রুট নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করবে এই প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকায় চারটি সাবওয়ে রুট নির্ধারণ করে সমীক্ষা কাজ চলবে। এ বিষয়ে টিপসার সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি হয়েছে একই বছরের আগস্টে। চুক্তি অনুযায়ী ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম যে রুটটি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বাছাই করা হয়েছে, সেটি হবে- টঙ্গী থেকে শুরু করে এয়ারপোর্ট-কাকলী-মহাখালী-মগবাজার-পল্টন-শাপলাচত্বর হয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত, যা পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সমপ্রসারণ করা হবে। এটির জন্য সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে ১৬ কিলোমিটার সাবওয়ে লাইন-২ হবে- আমিনবাজার থেকে শুরু করে গাবতলী-শ্যামলী- আসাদগেট-নিউমার্কেট- টিএসসি-ইত্তেফাক হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে উভয় দিকে এটি সমপ্রসারিত হবে। এর সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।এছাড়া রুট ৩-এর অধীনে গাবতলী থেকে মিরপুর ১-মিরপুর ১০-কাকলী-গুলশান ২-নতুন বাজার-রামপুরা টিভি স্টেশন-খিলক্ষেত-শাপলা চত্বর-জগন্নাথ হল হয়ে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত সমীক্ষা চলবে। রুট-৪ এর আওতায় রামপুরা টিভি স্টেশন থেকে নিকেতন-তেজগাঁও-সোনারগাঁও হোটেল-পান্থপথ-ধানমন্ডি ২৭-জিগাতলা-আজিমপুর-লালবাগ হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত পাতাল রেলের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। রুট-৩ ও ৪-এর দৈর্ঘ্য এবং ব্যয় এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ঢাকার যানজট নিরসনে ২০ বছর মেয়াদি সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, পাঁচটি মেট্রোরেল রুট নির্মাণ করা হবে। এর একটির (এমআরটি-৬) নির্মাণ কাজ চলছে। মেট্রোরেল বিদ্যমান সড়কের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হবে। কিছু অংশ থাকবে মাটির নিচে। কিন্তু সাবওয়ের পুরোটাই থাকবে মাটির নিচে।