Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

দল থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে খালেদার অনুসারীদেরও

প্রিন্ট সংস্করণ॥আবদুর রহিম

এপ্রিল ৫, ২০১৯, ০৬:১৯ পিএম


দল থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে খালেদার অনুসারীদেরও

*খালেদা অধ্যায়ের অবসান ঘটাতে লন্ডন বুদ্ধিজীবীদের কৌশল
*আন্দোলনে না গিয়ে স্থায়ী কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ তালিকায় ফেলা
*ফখরুল-রিজভীর মাধ্যমে শুধু বিএনপি জিইয়ে রাখার ছক
*ব্যর্থতার দায়ে এখন বড় অংশ বাদ পড়লে তৃণমূলেও চাপ পড়বে না
*হঠাৎ বৃহৎ পরিবর্তন হলেও পাবে পুনর্গঠন সনদ

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপিতে নীরবতা। কারাগারে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া যে নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন, তারও কার্যত রূপ নেই। নির্বাচনে ভরাডুবির পর আন্দোলনের ছক থাকলেও অদৃশ্য ইশারায় থেমে গেছে। মওদুদ আহমেদ-মোশাররফ হোসেনসহ স্থায়ী কমিটির নেতারা দলে এখন প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপির শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শেরও কোনো মূল্য নেই। জোশের নেতারা হারিয়ে গেলেও হুঁশ নেই। এর পেছনে বিএনপির শীর্ষ নেতারা নয়, লন্ডন নেতার রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলে দলটির বুদ্ধিজীবী অংশ থেকে দাবি উঠেছে।জানা গেছে, লন্ডন নেতা ভাবছেন, আগামীতে বিএনপির একমাত্র নীতিনির্ধারক হবেন তিনি। দেশ পরিচালনা থাকবে তার হাতে। তাই এখন থেকেই কৌশলে খালেদা জিয়া অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাতে বাঁকা পথে চলছেন, সঙ্গে নিঃশেষ করা হচ্ছে খালেদার শক্তিশালী অনুসারীদেরও। সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খানদের রাজনীতি থেকে সমাপ্তি ঘটাতে লন্ডন বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে ফাঁদ পেতেছেন তারেক জিয়া। কারণ এরা যদি তারেক অধ্যায় পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে, তাহলে তারেকের পথ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সিনিয়র-জুনিয়র ব্যবধানে তারেকের নেতৃত্ব সহজ হবে না। তাই তাদের (খালেদা অনুসারীদের) তারেক অধ্যায়ের আগেই ব্যর্থতার কাতারে ফেলে দল ত্যাগে বাধ্য করতে সব ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তার অনুপস্থিতিতে এ প্রক্রিয়া শক্তভাবে শুরু করছেন। এ কৌশলে ব্যর্থতার দায়ে স্থায়ী কমিটির বড় অংশ যেকোনো মুহূর্তে বাদ পড়লে তৃণমূলেও চাপ পড়বে না। দলে ভাঙনের পরিস্থিতিও তৈরি হবে না। কেন না, ইতোমধ্যে আন্দোলন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র সব নেতাই ব্যর্থতার পরিচয় ও প্রশ্নের মুখে রয়েছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে আন্দোলন ও রাজনৈতিক ভূমিকার যে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন এবং নির্বাচনে পরাজয় ঘটলে আন্দোলনের ছক তৈরি থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে এর কিছুই করা হয়নি। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই মুক্তি ও বিজয়ের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ইশারা নিয়েই আদালতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কারাগারে গেছেন। ছিল আন্তর্জাতিক সবুজ সংকেতও। মুক্তি পেয়ে নির্বাচনে গেলে খালেদা জিয়া আবারো দেশ পরিচালনা করবেন। অবশেষে সব ছকই ভেস্তে গেলো। এখন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধানের স্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতিতে বড় যে পরিচয়- আপসহীন নেত্রী, আপসহীন মা! অবশেষে রাজনীতির শেষ অধ্যায়ে এসে প্রতিষ্ঠিত এ রাজচরিত্রে বহাল থাকা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের সঙ্গে আঁতাত না করা, ২০১৪ সালে সরকারের সঙ্গে আপসে না গিয়ে নির্বাচনে না যাওয়া, এবার কারাগারে যাওয়ার আগে আপসের প্রশ্ন উঠলেও সিদ্ধান্তে অটল থাকা, সেই নেত্রীকে আপসে মুক্তি দিলে ব্যক্তিত্বের জায়গা নষ্ট হয়ে যাবে বলেও দাবি বুদ্ধিজীবীদের। ইতোমধ্যে লন্ডন ছকের অধিকাংশই বাস্তবায়নের পথে, যেকোনোভাবে খালেদা মুক্তি পেলেও প্রশ্ন উঠবে না, মওদুদ-মোশাররফদের ব্যর্থতার তকমা লাগিয়ে বহিষ্কার করলেও কেউ কথা বলবেন না। হঠাৎ দলে বৃহৎ পরিবর্তন এলেও পাবে পুনর্গঠনের সনদ। তবে ইতোমধ্যে লন্ডন নেতার এ কৌশল বিএনপির অনেক নেতাই ধরে ফেলেছেন। অনেকে আতঙ্কেও আছেন, হঠাৎ খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে একজনও রেহাই পাবে না। তাই এখন লন্ডন নেতাকেই একমাত্র ভরসা হিসেবে গ্রহণ করছেন তারা। বিএনপির যেসব নেতা দলের সাইনবোর্ড বিক্রি করে দুই-তিন দশক ধরে হাজার হাজার টাকার সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন, সেই সম্পদ রক্ষায় উপরেরঅনুগত হয়েই অনেকে চলছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে এখন আর কেউ রাজপথের কার্যকর কর্মসূচিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাই চান গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে দল চলছে, সেভাবেই চলুক। পুলিশ ও প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে যেটুকু করা যায়, সেটুকুই থাক। কোনো রকমের ঝামেলায় যেতে রাজি হচ্ছেন না তারা। এতে সরকারও খুশি। উপর নেতাও খুশি। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র মতে, স্কাইপি ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তারেক জিয়া সবসময় তার অনুগত লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আলাদা সিন্ডিকেট তৈরি করে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। বিচ্ছিন্নভাবে অনেকের সঙ্গেই কথা বলছেন। তবে সমর্থন ছাড়াই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মাধ্যমে অস্তিত্ব ও টিকে থাকার কৌশলে দল পরিচালনা করছেন। রিজভীর মাধ্যমে পল্টন চাঙা রাখছেন আর ফখরুলের মাধ্যমে গুলশান। আর তৃণমূলের যেসব নেতার আগামীর নেতৃত্বে প্রয়োজন শুধু তাদের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন। উপরের নির্দেশ মতে, ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভী সবসময় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নরম বাণী দিয়ে যাচ্ছেন। গতকালও ফখরুল ঘরোয়া বৈঠকে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন রাজনীতি নেই, রাজনীতি একটা দলের কাছে চলে গেছে। পঁচাত্তরে এ দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা এসেছিল। সেটা চলে যাওয়ার পর আবার একদলীয় শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে। এখন যেটা আছে সেটা হলো ছদ্মবেশী গণতন্ত্র। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আজকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আইনগতভাবে পাওনা জামিনও তিনি পাচ্ছেন না। আমরা প্রতিদিনই মনে করবো, একটা বেআইনি দখলদারি সরকার বসে আছে। তাকে মেনে নেয়ার তো কোনো কারণই নেই। আমরা সরকারকে বলেছি, এই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আর কষ্ট দেবেন না, তাকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিন, তার পছন্দের বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। কারণ আপনার নির্দেশেই বেগম জিয়া কারাগারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, দলকে সুসংগঠিত করতে আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। খালেদা জিয়ার মুক্তির পরিবেশ সৃষ্টি করছি। আওয়ামী লীগকে চিরতরে বিদায় করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি নিয়েই আমরা মাঠে নামবো।