Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ধানের উৎপাদন বাড়লেও ভাগ্য বদলাচ্ছে না কৃষকের

প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম

এপ্রিল ৫, ২০১৯, ০৭:০০ পিএম


ধানের উৎপাদন বাড়লেও ভাগ্য বদলাচ্ছে না কৃষকের

সরকার কৃষকদের কাছে ধান-চাল কেনার কথা থাকলেও কেনে মিলারদের কাছ থেকে। ফলে বাজারে কৃষক সঠিক দাম না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন। কারণ এবারের মৌসুমে ৯৭ লাখ টন বোরো ধান থেকে চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দুই লাখ টন বেশি। কিন্তু প্রতি বছর কৃষকদের ধান উৎপাদনে ব্যয় বাড়লেও বাড়েনি ধান ও চালের দাম। বরং গত বছরের মতো এবারো প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে কিনবে সরকার। আর চাল প্রতি কেজি ৩৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৬ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সারাদেশের কৃষকরা সরকার ও মিলারদের উভয়ের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮ সালে এক কোটি ৯৫ লাখ টন এবং ২০১৭ সালে এক কোটি ৮০ লাখ টন বোরো ধান থেকে চাল উৎপাদন হয়। এবার অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে ইরি-বোরোর আবাদ করেছেন কৃষকরা, এমন তথ্য দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু সরকার চলতি বছর ১০ লাখ টন সিদ্ধ বোরো চাল কিনবে। প্রতি কেজি চাল কিনবে ৩৬ টাকায়, যা গত বছর কিনেছিল ৩৮ টাকায়, ৩৫ টাকা কেজি দরে বোরোর দেড় লাখ টন আতপ চাল। তবে গতবারে মতো এবারো ২৬ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন ধান কিনবে। এ ছাড়া ২৮ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন গম কিনবে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার কথা থাকলেও কেনে মিলারদের কাছ থেকে। ফলে বাজারে কৃষক সঠিক দাম পায় না। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এবার কৃষকদের ধান উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও দাম বাড়েনি। এতে ধান নিয়ে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কৃষকদের। বরাবরের মতো এবারো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম নেই। সরকারি পর্যায়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে। ঋণ করে ধান চাষ করে এখন কৃষকের মাথায় হাত। ঋণ পরিশোধের চিন্তার পাশাপাশি মাঠ থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের চিন্তা এখন থেকেই শুরু হয়েছে।জানা যায়, ঋণ নিয়ে চাষ করতে হয় বিধায় দেশের প্রান্তিক চাষিদের শুরুতেই ধান বিক্রি করে দিতে হয়। ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার সুযোগ বেশির ভাগ কৃষকের নেই। আবার শুকনো ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করতে গেলেও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রায় ৮৮ শতাংশ জমিতে উফশি জাত, ১১ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড এবং বাকি জমিতে স্থানীয় জাতের বোরোর আবাদ করেছেন কৃষকরা। দুর্যোগে ক্ষতি না হলে এবারের উৎপাদনও গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। চলতি অর্থবছরে আউশ, আমন ও বোরো মিলে মোট তিন কোটি ৬৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে আউশ, আমন ও বোরোর অংশ যথাক্রমে- ২৭ লাখ টন, এক কোটি ৪১ লাখ টন এবং এক কোটি ৯৬ লাখ টন। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের আউশ মৌসুমে ২৯ লাখ ২০ হাজার টন ও আমনে এক কোটি ৪৩ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে।কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও ব্যস্তবায়ন) আলহাজ উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, বোরো রোপণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যেহেতু ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য, সেহেতু কৃষককে ধান উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হবে। গত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, সরকার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তিন কোটি ৫০ লাখ টন, যার বিপরীতে উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৪৭ লাখ টন। এর পরের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ৪৮ লাখ এবং উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৩৮ লাখ। আর গত অর্থবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। সে বছর (২০১৭-১৮ অর্থবছর) মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ৫৫ লাখ টন। আর উৎপাদন বেড়ে হয়েছিল তিন কোটি ৬২ লাখ টন। প্রতি বছরই আবাদের পরিমাণ ও ফলন বেশি হয় ইরি-বোরো মৌসুমে। দেশের মোট চালের ৫৬ শতাংশ উৎপাদন হয় এ মৌসুমে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আমন ও আউশ। তবে অধিক মাত্রায় সেচে খরচ ও ধান বিক্রিতে কম মুনাফার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বোরো উৎপাদনে আগ্রহ হারান কৃষকরা। আফজাল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারি দিনাজপুর থেকে ঢাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এসেছেন। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, কৃষকদের এখনো নতুন ধান কাটা শুরু হয়নি। কিন্তু সরকার এবারো ধান ও চালের দাম বৃদ্ধি করেনি। উল্টো ৩৮ টাকা কেজি চালের দাম কমিয়ে ৩৬ টাকা করেছে। এতে ব্যবসায়ীদের যেমন লাভ নেই, তেমনি কৃষকরা ফসলের ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত থাকবেন বলে মনে করেন তিনি। দিদারুল রহমান নামে এক কৃষক বলেন, ধান উৎপাদন করি, কিন্তু বাজারে দাম পাই না। প্রতি মন ধান ৬০০ টাকা দরে আড়ৎদাররা কিনছেন। সেই তুলনায় ধান থেকে চালের দাম বেশি। এতে ব্যবসায়ীরা ধান কিনে লাভবান হচ্ছেন। আর কৃষক হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও দু’পায়সার মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি ও সারের দাম বেশি। তাই উৎপাদন খরচ বেশি। আর বিক্রির সময় দাম কম। এতে করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে উৎপাদন খরচ বিবেচনায় বাজার মনিটরিং করে ধানের দাম নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।