Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

প্রিন্ট সংস্করণ॥এনায়েত উল্লাহ

এপ্রিল ৮, ২০১৯, ০৬:১৯ পিএম


প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। আর মাত্র চারদিন পরই বাংলা বছরের দিনপঞ্জিকায় যুক্ত হবে আরও একটি নতুন বছর। পুরনো বছরের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততম সময় পার করছেন চারুকলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলছে কার্যক্রম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজের সময় প্রায়ই বিরতি দিতে হচ্ছে। তবুও থেমে নেই প্রাণের উৎসব পালনের প্রস্তুতি। ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনসহ অসংখ্যা প্রতিষ্ঠান ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্যতম অনুষঙ্গ মুখোশ। মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা। বর্ণিল কিছু মুখোশ তৈরি হচ্ছে এবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী জাবির আমার সংবাদকে বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের মুখোশ তৈরি করছি। এর মধ্যে পাখির আকৃতি আছে। রাজাদের আকৃতিসহ বিভিন্ন আইটেমের মুখোশ তৈরি করা হচ্ছে। এই উৎসবের মধ্য দিয়েই ফুটে উঠে আবহমান গ্রাম-বাংলার জীববৈচিত্র্য, বাঙালির সমাজ-সংস্কৃতির চিত্র। বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চৈত্রের খরতাপ ও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। চারুকলা অনুষদের ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে চমৎকার সব শিল্পকর্ম। কেউ আঁকছেন ছবি, কেউ মুখোশ, আবার কেউ ব্যস্তসময় পার করছেন হাঁড়ি-পাতিলের কারুকাজ নিয়ে। এসব তৈরি করা হচ্ছে মূলত বিক্রির জন্য। কারণ এসব বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়েই করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজ। অনুষদের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগ সভাপতি তন্ময় দেবনাথ আমার সংবাদকে বলেন, প্রতিবছর চারুকলা ইনস্টিটিউট পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে, তবে কাজ চলছে। আশা করছি আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার আগেই সমস্ত কাজ শেষ করে সঠিক সময়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগদান করব। পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরেই বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রার জন্য গত ১৯ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে তাদের এই কর্মযজ্ঞ। চলবে র্যালির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। শোভাযাত্রা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব ঐতিহ্যর’ স্বীকৃতি পেয়েছে। এরপর থেকে আরও বেশি গুরুত্বের সাথে এ উৎসব পালনে সোচ্চার হয়েছে বাঙালি জাতি। এবার পুরোদমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২১তম ব্যাচের আয়োজক শিক্ষার্থীরা। তাদের আশা, এবারের আয়োজনে সর্বাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করবে। সরেজমিন চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে অর্ধশত শিক্ষার্থী ব্যস্ত আছেন বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরিতে। বিশালাকৃতির পুতুল, পাখি, ঘোড়া, বিচিত্র মুখোশ, বক ও নৌকা ইত্যাদি তৈরি করছেন শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট দিনের আগেই কাজ শেষ করতে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন এসব শিক্ষার্থী। এবারের নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন কেমন তা দেখার জন্য পল্লবী থেকে পরিবারসহ ঘুরতে এসেছেন বেসরকারি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এবারই প্রথম এখানে ঘুরতে আসা। আমরা প্রতি বছরই চারুকলার কথা শুনে থাকি কিন্তু কখনো আসা হয়নি। আসছি ঘুরে ঘুরে দেখতেছি খুব ভালো লাগছে। শুধু সিরাজুল ইসলাম নন, বৈশাখী আয়োজন দেখার জন্য অনেকেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন। ‘শুভ নববর্ষ’ বলে একে অপরকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উদযাপিত হবে এবারের বাংলা নববর্ষ। চারুকলা অনুষদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদ থেকে প্রথম শোভাযাত্রা বের হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালি জাতির এই চেতনাকে ধারণ করে তরুণরা জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসবে বলে আশা করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে দেড়শ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যমণ্ডিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবারের বর্ষবরণে নিচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তাদের এবারের থিম হচ্ছে নদী বাঁচাও। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই চলছে প্রস্তুতি। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে এই সুন্দর কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ে। মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়েছে শুশুক। এছাড়া তৈরি হচ্ছে ময়ূর পঙ্খি নৌকা। বাংলার জাতীয় মাছ ইলিশসহ বিভিন্ন জাতের মাছ বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বজলুর রশীদ খান বলেন, নববর্ষকে বরণ করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। প্রতিষ্ঠানটি পুরান ঢাকায় হওয়ার ফলে এ এলাকার মানুষ প্রতি বছরই অংশগ্রহণ করে। এবার যেহেতু আমাদের থিম হচ্ছে নদী বাঁচাও আর তাদের বাড়িও বুড়িগঙ্গার পাশে, সুতরাং এবারের অংশগ্রহণ আরও বেশি হবে বলে আশাবাদী। এদিকে আসন্ন বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ তিনটি কমিটি গঠনসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আনন্দময় পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও শৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নববর্ষের দিনে চলাফেরায় কিছু নিয়মনীতিও করে দিয়েছেন। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল সকালে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশপরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের তৈরি মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। এরপর শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেলসহ কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না বলেও নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড়সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড়সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন। নববর্ষের দিন রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন ছবির হাটের গেট, বাংলা একাডেমির সামেনের গেট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বের হওয়ার পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট, রমনা কালীমন্দির সংলগ্ন গেট ও বাংলা একাডেমির সামনের গেট ব্যবহার করতে পারবেন।