Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

কার্যকর হয়নি সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার

প্রিন্ট সংস্করণ॥সঞ্জয় অধিকারী

এপ্রিল ৯, ২০১৯, ১২:০৩ এএম


কার্যকর হয়নি সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার

ব্যাংক মালিকদের ঘোষণার পর নয় মাস অতিবাহিত হলেও ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে (এক অঙ্কে) নামিয়ে আনেনি অধিকাংশ ব্যাংক। অথচ এই অযুহাতে সরকারের কাছ থেকে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা। কিন্তু ব্যাংকগুলো এখনো ঋণের বিপরীতে উচ্চ সুদারোপ করছে। ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করার অন্যতম শর্ত ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ব্যাংকে আমানত রাখবে। সরকারি ব্যাংকগুলোও উদ্বৃত্ত তহবিল বেসরকারি ব্যাংকে রাখার ক্ষেত্রে ৬ শতাংশের বেশি সুদ নেবে না। তবে কেউই তা মানছে না। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এখন আমানত নিতে ৯ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। আবার ব্যাংকের মুনাফা বাড়ানোর জন্য ব্যাংকারদের ওপর চাপ রয়েছে। প্রবৃদ্ধি কমলে ব্যাংকারদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৪টিই এখনো দুই অঙ্কে সুদ নিচ্ছে। এর মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দেয়া ঋণের বিপরীতে ১৫ শতাংশেরও বেশি হারে সুদারোপ করছে কোনো কোনো ব্যাংক। সরকারি- বেসরকারি মিলে মাত্র তিনটি ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে— একটি বেসরকারি ব্যাংক, একটি বিশেষায়িত খাতের ব্যাংক ও একটি বিদেশি খাতের ব্যাংক।২০১৯ সালের মার্চ মাসের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেসরকারি খাতের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ হারে সুদারোপ করেছে। এছাড়া সরকারি খাতের বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও বিদেশি খাতের সিটি ব্যাংক এনএ ৯ শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে। বাকি সব ব্যাংক এখনো গ্রাহকদের ডাবল ডিজিট (দুই অঙ্কে) সুদে ঋণ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রপ্তানি খাতে ৭ শতাংশ ও কৃষিতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। তবে এসএমই ঋণ, ভোক্তা ঋণ, গৃহ ঋণ, ট্রেডিংসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করছে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ হারে।গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৩১টি ব্যাংক তাদের ঋণের গড় সুদহার বাড়িয়েছে। আগের মাসে (জানুয়ারি) ঋণের সুদহার বাড়িয়েছিল ২৮টি ব্যাংক। আর ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ২৭টি। অর্থাৎ প্রতি মাসে ঋণের সুদহার বাড়ানো ব্যাংকের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে যেসব ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে তার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকই রয়েছে ২১টি। এছাড়া, বিদেশি ছয়টি, রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ও বিশেষায়িত একটি ব্যাংক রয়েছে এ তালিকায়। আর যেসব ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে, তারা এই সেবার বিপরীতে দুই অঙ্কের সুদারোপ করছে।ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রেডিট কার্ডের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে কোনোভাবেই নামবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ডাবল ডিজিট সুদে আমানত সংগ্রহ করে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ বিতরণ করা মানেই ব্যাংককে লোকসানের দিকে নিয়ে যাওয়া। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামানো সম্ভব হচ্ছে না। তারা বলছেন, বর্তমানে ১০ শতাংশ হারে আমানত নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে কমে সরকারি আমানতও পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কীভাবে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেবে ব্যাংক। কম সুদে সরকারি আমানত যদি পাওয়া যায়, তাহলে কম সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণের কথা বলা হলেও অধিকাংশ ব্যাংক এখনো তা কার্যকর করেনি। উল্টো অনেক ব্যাংকে এখন সুদহার বাড়ছে। দেশে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ঋণের সুদহার কমানোর কোনো বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংক মালিকরা বেশ কয়েকটি সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ ও সংখ্যা দুটোই বাড়িয়েছেন। ব্যাংকের কর্পোরেট কর আগের চেয়ে আড়াই শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএবির চাহিদা অনুযায়ী সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, ঋণ আমানতের হার (এডিআর) সমন্বয়সীমার সময় বাড়ানো এবং রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার আলোকে গতবছরের ২০ জুন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন— বিএবির বৈঠক থেকে ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।