Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

দলে-জোটে তারেকের নির্দেশনা

প্রিন্ট সংস্করণ॥আবদুর রহিম

এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০৬:১৬ পিএম


দলে-জোটে তারেকের নির্দেশনা

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে ১৪ মাস পর ফের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে আসছে বিএনপি। মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশ, আলোচনা সভা, কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আপাতত কোনো কঠিন কর্মসূচিতে যাচ্ছে না দলটি। সভা-সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দাবি তোলা হবে। যদিও দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফখরুলের গোঁজামিল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। প্রকাশ্যে একটি অনুষ্ঠানেও এমন প্রশ্ন তুলেছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। তবে এ নিয়ে তারেক জিয়ার বড় পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মত, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপি কেন আন্দোলনে যাবে না, এ নিয়ে তারেকের দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ও জোটের নেতাদের কাছে নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ডের ওপর যারা ক্ষুব্ধ তাদের অনেককেই ডেকে তারেকের নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যারা এখনো দৃষ্টিভঙ্গি জানেন না অনেক নেতাই গুলশানে ডাক পাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর থেকে লন্ডনের শীর্ষনেতার ভূমিকায় অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, শামসুজ্জামান দুদু, দলের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জয়নুল আবেদীন ফারুক, বরকত উল্লাহ বুলুসহ বেশ কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে অধিকাংশ নেতার সঙ্গেই তারেক জিয়া কথা বলেছেন এবং সান্ত্বনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তাদের চাওয়া-দাবি তারেক জিয়া শুনেছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতেই একদফা আন্দোলনের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এ জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। এখন আপাতত সভা-সমাবেশে শান্ত থেকে দলের পক্ষে কথা বলতে বলেছেন তিনি। দলের মহাসচিবসহ কোনো নেতার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দল টিকিয়ে রাখতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরব থাকতে সবাইকে অনুরোধ করেছেন। এছাড়া সবার আমলনামার ভিত্তিতে আগামীতে বিবেচিত হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটি তারেকের নির্দেশনা পুরোপুরি অনুসরণ করছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের মত।গতকাল ২০ দলীয় জোটের বৈঠকেও ক্ষুব্ধ অনেককে তারেকের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সান্ত্বনা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও এখনো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ ২০ দলের শরিক নেতারা। গত সোমবার রাতে জোটের বৈঠকে এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিকদের ক্ষোভ প্রশমনে বিদ্যমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। ড. কামালকে ঐক্যতে এনে বিএনপির কী লাভ হয়েছে, খালেদার মুক্তিতে বিএনপির নীরবতার রহস্য কী অনেকে জানতে চাইলে লন্ডন নেতার প্রেসক্রিপশনের আলোকে ব্যাখ্যা দেন ফখরুল। যদিও এক প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের দাবি ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোনো টানাপড়েন নেই। দাবি আদায়ে একসঙ্গে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।এদিকে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে বিএনপি চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। হঠাৎ কেন সরকার খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয় মাঠে নিয়ে আসছেন। গণমাধ্যমও কেন এ বিষয় নিয়ে টানা সংবাদ প্রচার করছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক সূত্রগুলোর দাবি, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন কারাগারে রাখার ‘রাজনৈতিক মূল্য’ আর আছে বলে মনে করছে না সরকার। এদিকে খালেদা জিয়া দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় কোনো ঘটনা ঘটে গেলে এর দায়ও সরকার নিতে চান না। তাই প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে সরকার আন্তরিক। তবে অন্য একটি সূত্রের দাবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার। তবে বিএনপির সূত্রগুলো বলছে এখনো তারা প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আবেদন করেনি। এ নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আসায় বিএনপিকে ভাবতে হচ্ছে। তবে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্যারোলে মুক্তি হলে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসায় আন্তরিক তারেক জিয়া। এ নিয়ে দলে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্যারোলে মুক্তি চাইবে বিএনপি। দলের ধারণা প্যারোলে আবেদন করলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সরকার নমনীয় কিনা, স্পষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তি বা জামিন নিয়ে কিছু চিন্তা করছে, এটা বলতে পারি। কিন্তু কী, কেন, তা আরও পরে বলবো।’ তবে প্যারোলের বিষয়টি খালেদা জিয়ার ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে।’ তবে গত পরশু এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে আমরা প্যারোলের কথা বলিনি। আমরা জামিনে তার নিঃশর্ত মুক্তির কথা বলেছি। সরকার দেশনেত্রীকে আটক করে রেখেছে। কারণ তারা ভয় পায়।