Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

সংস্কার হবে ৩৪৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন

প্রিন্ট সংস্করণ॥রাসেল মাহমুদ

এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০৬:২১ পিএম


সংস্কার হবে ৩৪৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন

২০১৩ সালে সর্বশেষ জাতীয়করণকৃত ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৯৩টি। তবে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মাঝে মাঝে ঘটে নানা দুর্ঘটনা। এর মধ্যে মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিদ্যালয় ভবন সংস্কার, নতুন ভবন নির্মাণ, স্কুল বাউন্ডারি দৃষ্টিনন্দন করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর পূর্বাচল ও উত্তরার ১৪টি নতুন স্কুল নির্মাণ, ১৭৭টি স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়ন ও দৃষ্টিনন্দন এবং ১৫৪টি স্কুলের ২ হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। এর জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯২০ কোটি ৫৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প। যা আগামী সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওঠার কথা রয়েছে। বরাবরের মতোই এ কাজ বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।এদিকে এলজিইডির নির্মাণ করা প্রকল্পগুলোর মান নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠলেও প্রাথমিকের সকল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ তাদেরই দেওয়া হয়। ফলে সংস্থাটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে যা বুঝিয়ে দেয় তাই-ই মেনে নিতে হয়। এলজিইডির নির্মাণকাজে সন্তুষ্টও নয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিদ্যালয়গুলোর ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) আদলে আলাদা অধিদপ্তর করতে চায় তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা আটকে আছে।প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার সংশ্লিষ্টরা জানান, গত তিন বছর ধরে এলজিইডি রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করে কোন স্কুলে কেমন সংস্কার বা কতটি নতুন কক্ষ প্রয়োজন তা নির্ধারণ করেছে। তাদের হিসাবমতোই এ প্রকল্পটির সকল পরিকল্পনা প্রস্তাব আকারে প্রস্তুত করা হয়।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। সরকার তা সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা কমবে। তবে কাজের মানের বিষয়টিতে আরও নজর দিতে হবে বলে জানান তারা।প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে বর্তমানে জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। জাতীয়করণ হলে প্রতি অর্থবছরে ৫ থেকে ৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ, একই পরিমাণ স্কুলে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়। এরপরও অধিকাংশ বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ থেকে যাচ্ছে। নতুন করে যেসব ভবন নির্মাণ করা হবে তার মান যাচাই করে নিতে পারলে এ সংখ্যা কমতো।গত শনিবার বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের গ্রেড বিম ভেঙে মানসুরা (৮) নামে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনায় একই শ্রেণির আরও পাঁচজন আহত হয়। ওই স্কুল ভবনটি ২০০২ সালে নির্মাণ করে এলজিইডি। নির্মাণের মাত্র ১৬ বছরের মাথায় ছাদ ভেঙে এ দুর্ঘটনা ঘটলো।স্থানীয়দের অভিযোগ, ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। একই অভিযোগ করেছেন ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তৌফিকুজ্জামান তনু। তিনি বলেন, স্কুল ভবনটি নির্মাণ কাজে যেসব ম্যাটেরিয়েল ব্যবহার করা হয়েছে তা ভালোমানের নয়। এ জন্য ১৬ বছরের মাথায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় আগামী জুলাই থেকে সেই এলজিইডির অধীনে ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে ৩৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন করার প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে।প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা) এনামুল কাদের খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘পিডিইপি ৪-এর অধীনে রাজধানীর ৩৪৫টির মধ্যে বেশকিছু স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ, কিছু স্কুলে নতুন কক্ষ নির্মাণ এবং বাকিগুলোর কক্ষের অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনের একটি প্রকল্প শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। বরাবরেই মতই এই কাজটিও করবে এলজিইডি। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে— শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা, শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানো, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার, উচ্চশিক্ষা এবং পরিপূর্ণ উন্নতির ধারাবাহিকতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য হ্রাাসকরণ, প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর জন্য শিশুবান্ধব শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিতসহ শিক্ষার মান বৃদ্ধিকরণ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পের জন্য এলজিইডি অর্থ প্রস্তাব করেছে ১১৫,৯২০.৫৩ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারি কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরে স্কুল ভবন নির্মাণে দুটি প্রকল্পের অধীনে কাজ চলছে। ‘চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্প’-এর অধীনে নির্মিত হচ্ছে ৮ হাজার ১৫০টি স্কুল। আর ‘চাহিদাভিত্তিক নব্য জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্প’র অধীনে নির্মিত হচ্ছে আরও ছয় হাজার ৭১৭টি স্কুল।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আমাদের সব ভবনই নির্মাণ করে এলজিইডি। প্রাথমিকের জন্য আলাদা প্রকৌশল অধিদপ্তর করার প্রস্তাবও রয়েছে। সেটা যত দিন না হবে সে পর্যন্ত এলজিইডির সঙ্গেই কাজ করতে হবে। তবে ভবনের মান নিশ্চিত করতে এলজিইডির সঙ্গে আমরা নতুন করে সমঝোতা স্বাক্ষর করবো।