Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

স্বপ্নে বিভোর জয়ী-পরাজিত প্রার্থীরা

প্রিন্ট সংস্করণ॥রফিকুল ইসলাম

এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০৬:৩৯ পিএম


স্বপ্নে বিভোর জয়ী-পরাজিত প্রার্থীরা

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ওই নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করে বিএনপি। শুধু তাই নয়, দলটির দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত ছয় প্রার্থী এখনো শপথ গ্রহণ করেননি। এদিকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ গ্রহণ না করায় ফের এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আ.লীগের নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থীরা। ওই নেতারা বলছেন- দলের যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনীত হয়ে বিজয়ী হন আটজন। এর মধ্যে গণফোরাম থেকে বিজয়ী দুজনের একজন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও গণফোরামের মোকাব্বির খান দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইতোমধ্যে শপথ গ্রহণ করেছেন। তবে জোট থেকে ওই দুজনের মধ্যে একজনকে বহিষ্কার করা হয়। ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ীদের মধ্যে ছয়জন বিএনপির। তারা হলেন- বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মো. হারুন অর রশীদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া।আইন অনুযায়ী, সংসদ অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিতদের শপথ নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে আগামী ৩০ এপ্রিলের আগেই শপথ নিতে হবে বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীদের। নির্বাচন বর্জন করে সংসদে যাবে না বলে বারবার বলে আসছেন বিএনপি নেতারা। তবে অনেকদিন থেকেই গুঞ্জন রয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে প্যারোল মুক্তি দিলে শপথ গ্রহণ করবেন তারা। বিএনপির সূত্র বলছে, শপথের বিষয়ে হাতে সময় রয়েছে মাত্র ২০ দিন। দলের মধ্যে এ ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এত কম সাংসদ নিয়ে সংসদে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। বরং পুনরায় নির্বাচনের দাবি হারিয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে বিএনপির রাজনীতি গতি পাবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সমঝোতা বা আলোচনার কোনো আভাস এখনো পায়নি বিএনপি। তবে সব মিলে এখনো খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি অটুট রয়েছে বিএনপির। নেত্রীর মুক্তি না হলে শপথ গ্রহণ করবেন না তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি ছাড়া কোনো সমঝোতা হতে পারে না। তবে শপথ নেয়ার বিষয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ করেই এ ব্যাপারে দলের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে করছেন তারা। এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয় আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে যেতে রাজি নয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, আপনাদের (বিএনপি) অনেক বিজ্ঞ ব্যারিস্টার রয়েছে। যারা অন্য সম্পত্তি দখল ও জাল দলিল করে নিজেদের নামে রেখেছেন। এ রকম ব্যারিস্টার আপনাদের অনেক আছে। তাদের নিয়ে আপনারা আইনি প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করেন। খালেদার প্যারোলে মুক্তির কথা কোথা থেকে কিভাবে আসছে আমার জানা নাই? খালেদা জিয়া আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে বলে জানান তিনি। সরকার দলীয় নেতাদের এমন বক্তব্য বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল মুক্তি এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার দিকেই দেখছে বিএনপির হাইকমান্ড।আ.লীগ সূত্রে মতে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত প্রার্থীদের এখন পর্যন্ত শপথ গ্রহণ না করাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে পরাজিত প্রার্থীরা। তারা ফের এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এজন্য নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় কাজ শুরু করেছেন। তবে কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। এর মধ্যে অনেকেই গোপনে এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কাজ শুরু করেছেন। শুধু ওই সব প্রার্থীই নয়, দলটির স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও একই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তারাও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে জোর যোগাযোগ শুরু করেছেন। নাম প্রকাশ না করার প্রতিশ্রুতিতে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দল আমাকে না দিয়ে অন্য একজনকে দিয়েছিলো। যার কোনো জনপ্রিয়তা ছিলো না। সেই জন্য নৌকা হেরেছিলো। বিএনপির প্রার্থীরা যদি শপথ গ্রহণ না করেন। আবার যদি নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি প্রস্তুত আছি। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের নৌকা পরাজিত প্রার্থী মো. ইয়াসিন আলী আমার সংবাদকে বলেন, আমি নির্বাচনে হেরেছি। আমি চাই এই আসনে বিএনপি যে প্রার্থী জয়লাভ করেছে সে শপথ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করুক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, যে দলের জনপ্রিয়তা সবার থেকে বেশি। তারা (বিএনপি) শপথ না নিলে দল চাইলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী মো. জিয়াউর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। আমি ভোটে জয়লাভ করতে পারিনি। এখানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তারা যদি শপথ গ্রহণ না করে তাহলে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী আমি কাজ করব।