Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

নৌযানে বাধ্যতামূলক হচ্ছে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট

প্রিন্ট সংস্করণ॥বিশেষ প্রতিনিধি

এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০৭:১৩ পিএম


নৌযানে বাধ্যতামূলক হচ্ছে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট

পানি ও মৎস্যসম্পদ রক্ষা এবং পানিবাহিত নানা রোগ প্রতিরোধ করতে চায় সরকার। এজন্য পানির দূষণ রোধের মাধ্যমেই তা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এজন্য নদী দূষণমুক্ত করতে দেশের সব নৌযানে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ নৌযান থেকে নির্গত মনুষ্যবর্জ্য ও পোড়া তেল সরাসরি পানিতে ফেলা প্রতিরোধ করা গেলে নদীর পানি দূষণ রোধ হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও রক্ষা পাবে।জানা গেছে, সদরঘাট টার্মিনালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন সভায় এই বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বর্জ্য অপসারণব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। নৌযানে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য বিদ্যমান নৌযানগুলোর ডিজাইন পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে যাতে নৌযানের কিচেনের বর্জ্য নদীতে না ফেলা হয় তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।সূত্র জানায়, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নৌযানে এসটিপি স্থাপন বা বর্জ্য ধারণের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নৌযান মালিকদের চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতেউল্লেখ করা হয়— অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশে-১৯৭৬ ও এর সংশোধনী ২০০৫-এর (৬০ক) ৪ ধারা অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ নৌযান থেকে নৌপথে তেলজাতীয় বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য ফেলা নিষিদ্ধ। জানা গেছে, এ সংক্রান্ত আইনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ নৌপথে পূর্ণাঙ্গ স্যানিটেশনব্যবস্থা না থাকলে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। তৈলাক্ত কোনো পদার্থ, তেল মিশ্রিত উপকরণ বা স্যুয়ারেজের ময়লা নদীতে ফেলা যাবে না। এটি নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএর হিসেবে, দেশে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষ নৌপথে চলাচল করে। এ হিসাবে ৭ লাখ মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করলে প্রতিদিন ৭৭ দশমিক ১৬ টন বর্জ্য নদীতে পড়ছে। যা প্রতি মাসের হিসাবে দুই হাজার ৩১৫ টন এবং বার্ষিক হিসাবে ২৭ হাজার ৭৮০ টন বর্জ্য। এর সঙ্গে খাদ্য ও ফলের উচ্ছিষ্ট যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দ্বিগুণ।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বর্জ্যের ফলে দূষিত হচ্ছে নদ-নদী, দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ। এমনকি কিছু নদী মাছশূন্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় নৌযান যাত্রীদের মলমূত্র হতে সৃষ্ট তরল বর্জ্য নৌযানের অভ্যন্তরে পরিশোধনের ব্যবস্থা এখনো গড়ে তোলা হয়নি। তাই নদী ও পনি দূষণ রোধে নৌযানের বর্জ্য সংগ্রহ করতে দেশের নৌবন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে নৌযান ফেডারেশনের নেতারা বলেছেন, লঞ্চ টার্মিনালে ভেড়ানোর পর ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। সে কারণে নদীতে ফেলে পানি দূষিত করা হয়। তাই নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জে ডাম্পিং স্টেশন করার পরামর্শ দেন তারা।জানা গেছে, ১৯৬০ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শত বছরের এ নদীবন্দরকে ঢাকা (সদরঘাট) নদীবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে ঢাকা নদীবন্দর বিশ্বের সর্ববৃহৎ নদীবন্দর।