Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

অব্যাহত পতনে আবারো উত্তাল শেয়ারবাজার

প্রিন্ট সংস্করণ॥সঞ্জয় অধিকারী

এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০৭:১৫ পিএম


অব্যাহত পতনে আবারো উত্তাল শেয়ারবাজার

ধারাবাহিক দরপতনের কারণে আবারো উত্তাল হয়ে উঠছে দেশের শেয়ারবাজার। বিগত জাতীয় নির্বাচনের পর কিছুদিন পুঁজিবাজারের সূচকের উত্থান ঘটলেও গত প্রায় আড়াই মাস ধরে পতনের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এই পতনের প্রতিবাদে আবারো রাজপথে নেমে এসেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। অব্যাহত দরপতনের জন্য তারা কারসাজিকারী একটি চক্র ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিস্ক্রিয়তাকেই দায়ী করছেন।গত জাতীয় নির্বাচনের আগে (২৭ ডিসেম্বর) ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৩৮৬ পয়েন্টে এবং তখন মোট লেনদেন ছিল ৫৩৮ কোটি টাকা। ধারাবাহিক পতনের কারণে বর্তমানে সূচক তার চেয়েও নিচে নেমে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইএক্স সূচক নেমে গেছে ৫৩১৮ পয়েন্টে এবং লেনদেন কমে হয়েছে ৩৬৫ কোটি টাকা। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর সূচক এক মাসে ৫৬৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর থেকেই ধারাবাহিক পতন চলছে। গত ২৮ মার্চ এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল নিজেকে হিসাবের লোক উল্লেখ করে বলেন, পুঁজিবাজার তার জন্য চ্যালেঞ্জের। এখানে যারা বিনিয়োগ করবে, তারা বিজয়ী হবে। অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরও সূচক ও লেনদেনে খরা কাটছে না। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৭৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ইস্যু মূল্যের নিচে অবস্থান করছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সূচকের উত্থান-পতনে বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর বেশ প্রভাব রয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে সূচক বাড়ে আর দরপতনে সূচক কমে। এ কারণে সূচকের উত্থান-পতন ঘটানোর জন্য বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ার বেছে নেন কারসাজিকারীরা। পতনের ধারা থেকে যখনই বাজারকে টেনে তোলার চেষ্টা হয়, শুরুতেই বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। বাজার উত্থানের ধারায় ফিরলে ভালো কোম্পানির শেয়ারের চেয়ে মন্দ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। গত এক বছরে এ ধরনের ২৫ থেকে ৩০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। এছাড়া, মন্দ কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আনা এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারের রমরমা বাণিজ্যের কারণেও পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ধারাবাহিক এ পতনের প্রতিবাদে গত দুদিন ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে বিনিয়োগকারীরা বাজার স্থিতিশীলতায় ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম— ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে পতন হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। পাতানো খেলার মাধ্যমে কৃত্রিম প্রভাব খাটিয়ে দরপতন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২০১০ সালের রাঘব বোয়ালরা জড়িত। তাদের আইনের আওতায় আনতে পারলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া শেয়ারবাজারের বর্তমান মন্দাবস্থায়ও আইসিবি কেন শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে নিস্ক্রিয় রয়েছে, তাও তদন্ত হওয়া উচিত।বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজার অর্থনীতির মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। সরকার দেশের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অর্থ শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। কিন্তু আমাদের দেশে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে লুটপাটের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেই লুটপাটের শিকার হচ্ছে।পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর থেকেই বাজারে সূচকের একধরনের নিয়ন্ত্রিত উত্থান-পতন চলছে। এটা দেখে মনে হচ্ছে কারসাজির মাধ্যমে সূচকের ওপর একধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে একটি চক্র বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার থেকে মুনাফা তুলে নিচ্ছে। এই উত্থান-পতনের পেছনে বড় ধরনের কারসাজি আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর সাবেক একজন পরিচালক বলেন, সেকেন্ডারি বাজারের বাইরে প্লেসমেন্টের অনানুষ্ঠানিক আরেকটি বাজার গড়ে উঠেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকেই লোভে পড়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে প্লেসমেন্টে বিনিয়োগ করছেন। এতে বাজারে তারল্যসংকট তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানির আইপিও শেয়ারও বাজারে তারল্যসংকট তৈরির জন্য দায়ী বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অনেক মানহীন কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। ফলে অনেক বিনিয়োগকারীর টাকা ওইসব কোম্পানিতে আটকে গেছে। বিএসইসির উচিত মানসম্পন্ন কোম্পানিকে বাজারে আনা। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেইসঙ্গে যদি কেউ বাজারে কারসাজি করে থাকে, তাহলে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।