Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

আতঙ্কের মধ্যে পাঠদান চলছে জরাজীর্ণ ভবনে

প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন

এপ্রিল ১০, ২০১৯, ০৬:৩৪ পিএম


আতঙ্কের মধ্যে পাঠদান চলছে জরাজীর্ণ ভবনে

একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুলভবনের ছাদের একাংশ কোথাও আবার পলেস্তার ধসে পড়া এখন নিত্ত-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনায় বাধ্য হয়ে অনেক স্কুলেই শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। আবার কোথাও টিনের বেড়া দিয়ে, কোথাও ঘড় ভাড়া করে চলছে ক্লাস। এতে করে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন অভিভাবকরা। সম্প্রতি বরগুনা জেলার তালতলীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের পলেস্তার ধসে স্কুলছাত্রী নিহতের ঘটনায় সারাদেশেই অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের স্কুলগুলোর বেশির ভাগ শিক্ষকের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছবিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ পাঠালে তার কাজ হয় অনেক ধীরগতিতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব। এ ছাড়া ভবন তদারকি এবং নতুন ভবন নির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এলজিইডির ভেতরে তেমন তৎপরতা নেই বলে জানান ভুক্তভোগী অভিভাবকরা। বগুড়া সদর উপজেলার আটাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমার সংবাদকে জানান, স্কুলটির বয়স ৩১ বছর হলেও এখন পর্যন্ত সংস্কারের কাজ করা হয়নি। অনেক রুমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ছাদের দিকে তাকালে রড দেখা যায়। মাঝে মধ্যে ছেলে-মেয়েরা বলে পলেস্তার ধসে পড়ে। সবসময় আতঙ্কের মাঝে থাকি, কখন কী হয়। কথা হয় বাগেরহাট সদর উপজেলার শহরতলির মাঝিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বাবার সাথে। স্কুলের অবস্থা করুণ জানিয়ে অভিভাবক বেল্লাল বলেন, টিনশেডের তিন কক্ষের মধ্যে দুটিই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে শিশুদের সিঁড়িঘরে বসে পাঠদান করতে হচ্ছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে বাড়িতে আতঙ্কে থাকতে হয়, কখন যেন মাথার ওপর পলেস্তারা খসে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিদ্যালয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তিনি। অধিদপ্তরের বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ৪৯৩ উপজেলায় ১০ হাজারেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ। প্রায় প্রত্যেক উপজেলায় ২০ থেকে ৪০টি বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন আছে। এগুলো ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে পাঠদান চলছে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জরাজীর্ণ ও ভবন না থাকা ১৪ হাজার ৮৬৭টি স্কুল চিহ্নিত করে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এ ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় ছয় হাজার ৭১৭টি এবং পুরাতন সরকারি বিদ্যালয় আট হাজার ১৫০টি। সম্প্রতি এক মিটিংয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন জানান, সংস্কারের জন্য প্রতিবছর পাঁচ হাজার স্কুল চিহ্নিত করে বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৬৩৭টি এবং চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৬০৮টি ভবনের সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলায় জরাজীর্ণ বিদ্যালয় চিহ্নিত করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় বিদ্যালয় ভবনগুলোতে বেশি সমস্যা, সেগুলোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সারাদেশে ৩০ শতাংশ বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকির মধ্যে আছে উল্লেখ করে গিয়াস উদ্দিন আরো জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তো একা কাজ করে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করতে হয় এতে করে সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা শিগগিরই আমাদের নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ারিং সেল তৈরি করতে যাচ্ছি। এই সেল মূলত প্রতিটা বিদ্যালয়ের ভবন তিন বছর অথবা পাঁচ বছর অন্তর মনিটরিং করবে। সারাদেশের এই বিশাল প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার, একবারে তো ঠিক করা সম্ভব না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি। অপরদিকে স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, সংস্কারের মাধ্যমে সাময়িক সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু ওই ভবন কয়েক বছর পর আবার জরাজীর্ণের তালিকায় ওঠে। তখন ওই জরাজীর্ণ ভবনেই পাঠদান করতে হয়।উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে তালতলী উপজেলার ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পলেস্তারা ধসে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মানসুরা বেগম মারা যায়। এ সময় আহত হয় আরো পাঁচজন। এ ঘটনায় আমতলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল বরগুনায় আবারো একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ছাদের একাংশ ধসে পড়ে। ক্লাস চলাকালে বরগুনা পৌরশহরের আমতলাপাড় এলাকার ১৬ নং মধ্য বরগুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। অল্পের জন্য শিক্ষার্থীরা বেঁচে যায়।