Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজউকের নকশার মিল নেই ভবনগুলোতে

প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম

এপ্রিল ১১, ২০১৯, ০৬:১০ পিএম


রাজউকের নকশার মিল নেই ভবনগুলোতে

ঢাকায় নির্মাণ করা অধিকাংশ ভবনের সঙ্গে নকশার মিল খুঁজে পাচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নকশার সঙ্গে ভবনের মিল খুঁজতে গিয়ে এমনটি দেখছে রাজউকের পরিদর্শক দল। এজন্য রাজউক কৌশল হিসেবে, ১০ তলার উপরে যে ভবনগুলো হয়েছে সেগুলোর নকশা খুঁজছে। কারণ রাজউক বুঝতে পেরেছে যে রাজধানীতে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভবনই নকশাবহির্ভূত। ফলে সবগুলো ভবন একসঙ্গে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তাই ১০ তলার উপরের ভবনগুলোর নকশা খুঁজছে। পরবর্তীতে ১০ তলার নিচের ভবনগুলোর নকশা খুঁজবে বলে রাজউকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।জানা যায়, রাজউকের ৮টি অঞ্চলে ২৪টি দল বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছে। দেখা হচ্ছে- নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হয়েছে কিনা, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা। পরিদর্শনের সময় বেশির ভাগ ভবনে রাজউক অনুমোদিত নকশার গরমিল এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থায় দুর্বলতা পাচ্ছে পরিদর্শনকারী দল। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে- দ্রুত রাজউকের আওতাধীন ১০ তলার ওপরের ভবনগুলোর তথ্য দিতে হবে। এজন্য দলগুলো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। রাজউক অঞ্চল-৬ এর পরিচালক খন্দকার অলিউর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ভবনই নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন ভবনগুলো নির্মাণে নকশার ব্যত্যয় তেমন করা হয়নি, তবে পুরনো ভবনগুলোর অধিকাংশই নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নতুন ভবনে মোটামুটি ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা রয়েছে, পুরনোগুলোর অবস্থা ভালো নয়। পরিদর্শনে দেখা হচ্ছে, ভবনে ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা রয়েছে কি-না, ভবনের চারপাশে খোলা জায়গা রাখা হয়েছে কি-না, ৭ তলার অনুমোদন নিয়ে ৮ তলা নির্মাণ হয়েছে কি-না, নকশার ব্যত্যয় হয়েছে কিনা, আবাসিকের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক, ইমারজেন্সি সিঁড়িগুলো বিভিন্ন কারণে আটকে রাখা হয়েছে কি-না।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজউকের দলগুলো ভবনে গিয়ে প্রথমেই কর্তৃপক্ষের কাছে নকশা চেয়ে নেন। তারপর নকশার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে বের করে। এ জন্য তারা ভবনের ছাদে উঠে নকশা অনুযায়ী মাপ ঠিক আছে কি-না দেখেন। পরে তারা প্রত্যেক তলা পরিদর্শন করেন। ভবনগুলোতে পরামর্শ মতো অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী রাখা হয়েছে কি-না তাও যাচাই করেন তারা। ছোটখাটো ত্রুটি থাকলে তা ভবন মালিককে নিজ উদ্যোগে সমাধানের নির্দেশ দেন। আর বড় সমস্যাগুলো লিখে নিয়ে আসেন। তবে এখনই চিহ্নিত সমস্যাগুলো রাজউক প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। রাজউক ৮ অঞ্চলের তদন্ত কাজ শেষ করে ভবনগুলোর ত্রুটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করবে।রাজউক অঞ্চল-৫-এর পরিচালক শাহ আলম চৌধুরী বলেন, উঁচু ভবনগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছেন। তথ্য সংগ্রহের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে কোন ভবনে কি ব্যত্যয় ঘটেছে, তা জানানো হবে। ত্রুটি পাওয়া ভবনগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে রাজউক। ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিন্দ্র কুমার নাথের মালিকানাধীন একটি ১৪ তলা ভবন পরিদর্শনে যায় রাজউক দল। ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্রের কাগজ থাকলেও নকশা অনুযায়ী নির্মাণে গরমিল পায় রাজউক দল। ভবনটির ফায়ার ডোর নির্মাণের জায়গা রাখা হয়নি এবং জরুরি বহির্গমনের সিঁড়ির নকশায় যতটুকু পরিমাপ থাকার কথা, তা পাওয়া যায়নি।নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এক কর্মকর্তা আমার সংবাদকে বলেন, গত ১০ বছর আগে নির্মাণ হওয়া ১০ তলার উপরের ভবনগুলো ৫০ শতাংশ এবং পুরনো ভবনগুলোয় ৯০ শতাংশের বেশি ত্রুটি পাওয়া গেছে। বড় ধরনের ত্রুটি পেয়েছেন ৬৫ শতাংশের বেশি ভবনে। ২০১৬ সালে ভবন তৈরি করা হলেও তা ২০০৬ সালের আগের নকশা অনুযায়ী। ২০০৬ সালের অনুমোদিত নকশাটি ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে করা হয়েছে। ওই বিধিমালায় ভবনের সামনে পেছনে ও দুই পাশে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল না। দ্বিতীয় সমস্যাটি হয়েছে ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় অনুমোদিত নকশা ২০১০ সালের মধ্যেই নির্মাণ করতে হবে। তা ২০১৬ সালে নির্মাণ করা যাবে না।ভবনগুলো অগ্নিঝুঁকিতে : নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভবন পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, রাজধানীর অর্ধেক ভবন অগ্নিকাণ্ডের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে বাকি ভবনগুলোও নিরাপদ নয়, কারণ তাদের অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নয়। প্রসঙ্গত, রাজধানীর পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টাসহ পরপর বানানী এফআর টাওয়ার এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গুলশান মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরই অবৈধভাবে ১০ তলার ওপরের ভবনগুলোর কাগজপত্র খুঁজতে রাজউক মাঠে নামে।