Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

চার বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত বায়তুল মোকাররমের খতিব

প্রিন্ট সংস্করণ॥এনায়েত উল্লাহ

অক্টোবর ২৩, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম


চার বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত বায়তুল মোকাররমের খতিব জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন প্রায় চার বছর যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তার পরিবার ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী। জাতীয় মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করার সক্ষমতা নেই বলেও জানিয়েছে তার পরিবার। যেহেতু তিনি শয্যাশায়ী সে কারণে তারাও চান না যে তিনি আর মসজিদে আসুক। তার মসজিদে না আসা নিয়ে মুসল্লিদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তারা মনে করেন, যেহেতু এটি জাতীয় মসজিদ তাই এখানে নির্ধারিত খতিব থাকা দরকার এবং সেটা আছেও। কিন্তু তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে আসতে পারছেন না। মুসল্লিদের দাবি— ধর্ম মন্ত্রণালয় যদি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার ইচ্ছা না থাকে তাহলে অন্তত একজন ভারপ্রাপ্ত খতিব নিয়োগ দেয়া হোক। এ বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম নামের একজন মুসল্লির সাথে। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, এটি একটি জাতীয় মসজিদ। এখানে প্রতিদিন নামাজ পড়ার সুযোগ আমাদের হয় না। শুক্রবার নামাজ পড়তে আসি। আমরা কার পেছনে নামাজ পড়ছি সেটাই জানি না। কোনো একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিই তো নামাজ পড়াচ্ছেন, তাহলে সমস্যা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাহলে নির্ধারিত খতিবেরই কি প্রয়োজন? যদি নির্ধারিত খতিবের প্রয়োজন না থাকতো তাহলে তো ইসলামে খতিবের প্রসঙ্গটিই আসতো না। যেহেতু ধর্মীয়ভাবে বিষয়টি উল্লেখ আছে সেহেতু এর বাধ্যবাধকতা অবশ্যই আছে। আমরা চাই উনি একজন সম্মানিত মানুষ, তাকে যদি সরকার সম্মান দিতে চায় তাতে আমাদের আপত্তি নেই। সরকার সেটা এমনিতেই দিতে পারে। এ জন্য উনাকে দায়িত্বে রেখে দিতে হবে না। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, উনাকে যদি দায়িত্বে রাখতেই চায় তাহলে অন্তত একজন ভারপ্রাপ্ত খতিব নিয়োগ দেয়া হোক। আমরা যেন একজন নির্ধারিত খতিবের পেছনে নামাজ পড়তে পারি, এটাই আমাদের আবদার। উনার মতোই আরেকজন নিয়মিত মুসল্লি শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে অনেক উলামায়ে কেরাম রয়েছে। এদেশের জাতীয় মসজিদের খতিব যদি চার বছর অনুপস্থিত থাকেন তাহলে সেটা কিভাবে হয়। সরকার যদি উনাকে রাখতে চায় তাহলে একজন ভারপ্রাপ্ত খতিব নিয়োগ দিক। এছাড়াও উনি যেহেতু বার্ধক্যজনিত কারণে মসজিদে আর আসার সম্ভাবনা নেই তাহলে একজন নতুন খতিব নিয়োগ দিলেই সমস্যা কি? তাকে যদি সরকার সম্মান করতে চায় তাহলে তার জন্য একটি ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক, তাহলেই তো হয়ে গেলো। জাতীয় মসজিদের মতো জায়গায় নির্ধারিত একজন খতিব খুবই প্রয়োজন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু খতিব হওয়ার পর তার আমৃত্যু এই পদে থাকার নিয়ম রয়েছে, সেহেতু সরকার চাইলেই মাওলানা সালাহউদ্দিনকে বাদ দিতে পারবেন না। জীবিত থাকাবস্থায় তার সম্মতি থাকলেও অন্য কাউকে নিয়োগে বাধা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকার চাইলে ভারপ্রাপ্ত খতিব বা বিকল্প খতিব হিসেবে কাউকে নিয়োগ দিতে পারে। তবে নতুন নিয়োগকৃত ব্যক্তিকে পূর্ণ খতিব হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না। এ ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল আমার সংবাদকে বলেন, এখানে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইন অনুযায়ী যা হয়, তাই করা হবে। এদিকে খতিবের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর ধরে বার্ধ্যক্যজনিত রোগে আক্রান্ত মাওলানা সালাহউদ্দিন। হার্টে রিং পরানোর পর থেকে সোডিয়াম কমে যাওয়ায় তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক আগেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে জানিয়ে দেয়া হয়, মাওলানা সালাহউদ্দিন বায়তুল মোকাররমে আর ইমামতি করাবেন না। গতকাল বিকালে অধ্যাপক সালাহউদ্দিনের স্ত্রী সুফিয়া আখতার আমার সংবাদকে জানান, ওনার শরীর খুব দুর্বল। বাইরে যান না। সব সময় শুয়ে থাকেন। ইমামতি করার ইচ্ছা তার আর নেই। আমরাও চাই না। বিষয়টি আমরা ফাউন্ডেশনের ডিজিকে জানিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। নতুন কাউকে নিয়োগ দিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। পারিবারিক সূত্র মতে, প্রায় চার বছর ধরেই বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের ইমামতি করেন না মাওলানা সালাহউদ্দিন। তার অনুপস্থিতিতে পেশ ইমাম মুহিব্বুল্লাহ বাকী, কখনো মাওলানা মিজানুর রহমান বা মাওলানা এহসানুল হক জুমার নামাজের ইমামতি করছেন। জানা গেছে, প্রফেসর সালাহউদ্দিন সর্বশেষ ২০১৫ সালের শুরুর দিকে বায়তুল মোকাররমে ইমামতি করেছেন। ইসলামি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সর্বশেষ তিনি কবে ইমামতি করেছেন এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য মিছবাহুর রহমান চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবতই উনি অসুস্থ থাকার কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। আমরা বিষয়টি নিয়ে আগামী বোর্ড মিটিংয়ে কথা বলব। আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই খতিবরা আমৃত্যু দায়িত্বে থাকে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের দেশেও এ নিয়ম রয়েছে। যেহেতু উনি আর নামাজ পড়াতে পারবেন না। সুতরাং আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। এ বিষয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। বৃদ্ধ বয়সে আমরা তার মনে কষ্ট দিতে চাই না। তাই উনার স্থানে কিছু করার ব্যাপারে আপাতত চিন্তা নেই। প্রধানমন্ত্রীও চান না যে, শেষ বয়সে উনি কষ্ট পাক। তাই তাকে এ পদে বহাল রাখা হয়েছে। তিনি ইমামতি করতে পারবেন না বলে তার পরিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে জানিয়েছেন বললে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি হচ্ছেন একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে সালাহউদ্দিনকে নিয়োগ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর আগে মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল, মহাখালী মসজিদে গাউসুল আজমের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে একই মাদ্রাসার হেড মাওলানা হিসেবে বিদায় নেন। ২০০৭ সালের রমজান মাসে খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের আকস্মিক ইন্তেকালের পর থেকে সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা নূরুদ্দিন বায়তুল মোকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসটিএমএ