Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

নতুন বইয়ের সঙ্গে স্কুলড্রেস-টাকা দিতে মন্ত্রণালয়ের তোড়জোড়

প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন

নভেম্বর ৫, ২০১৯, ০৫:২২ এএম


নতুন বইয়ের সঙ্গে স্কুলড্রেস-টাকা দিতে মন্ত্রণালয়ের তোড়জোড় বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেলে আত্মহারা হয় কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা। নতুন বইয়ের আনন্দের সাথে আগামী বছর থেকে যোগ হতে যাচ্ছে স্কুল ড্রেস। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২০ সাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন বইয়ের পাশাপাশি স্কুল ড্রেস ক্রয়ের জন্য ৫০০ টাকা করে দেবে সরকার। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তবে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের পোশাক ক্রয়ের টাকা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। এখনো বলা যাচ্ছে না যে, টাকাটা আগামী বছরের শুরুতে দেয়া যাবে কিনা? নতুন বই যেন শিক্ষার্থীদের জন্য নববর্ষেরই এক উপহার। আবার এর সাথে স্কুল ড্রেস যোগ হলে পড়াশোনায় তাদের উৎসাহ আরও দ্বিগুণ বেড়ে যাবে বলে অভিমত অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের। আবার শিক্ষাবিদরা আশঙ্কা করে বলছেন, যদি সরকার পোশাক ক্রয়ে টাকা দেয় আর এ টাকা যদি মায়েদের হাতে না পৌঁছে তাহলে অর্থের শ্রাদ্ধ হবে। প্রত্যেক বছর সারা দেশের স্কুল, মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয় নতুন বই। সর্বশেষ ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল, মাদ্রাসা ও ভোকেশনালে চার কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে মোট ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২টি নতুন বই বিতরণ করা হয়। ২০১০ সাল থেকে এ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ২৯৬ কোটি সাত লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এছাড়াও চলতি বছর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ব্রেইল বই। এদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নতুন বইয়ের সঙ্গে স্কুলের পোশাক ক্রয়ে ৫০০ টাকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বিষয়টা নিয়ে মিটিং হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত মাসে বাজেট প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, নতুন বছর আসতে আর দুই মাস বাকি। এর মধ্যে একনেকে পাস হলে ২০২০ সালের শুরুতেই প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মায়েদের কাছে নতুন পোশাকের জন্য টাকা দেয়া হবে। তবে টাকাটা আগামী বছরের প্রথমদিনে নতুন বইয়ের সঙ্গে দেয়া নিয়ে শঙ্কায় আছে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস কেনার টাকা দেয়ার বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, আমার চেষ্টা করছি আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে ৫০০ টাকা করে দিবো। তবে এখনো বলা যাচ্ছে না কি হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি, এটার এখন কাজ চলছে। তিনি বলেন, যদিও এ টাকা দেয়া হয় সেটা উপবৃত্তির মতো করেই মায়েদের হাতে পৌঁছে দিবো। নতুন বইয়ের সঙ্গে স্কুল পোশাক ক্রয়ের টাকা দেয়ার সংবাদ শুনে অনেক অভিভাবকই এ বিষয়ে তাদের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র দিপু ইসলামের অভিভাবক আশিকুর রহমানের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, আমি দিপুর চাচা। ওর বাবা-মা গরিব হওয়ায় পড়ানোর ক্ষমতা নাই। আমার বাসা থেকে লেখাপড়া করে। উপবৃত্তির টাকা পাওয়ার কারণে একটু হলেও লেখাপড়ায় সহায়তা হয়। আগামী বছর থেকে নতুন বইয়ের সাথে স্কুলের পোশাক ক্রয়ের জন্য ৫০০ টাকা দিলে উপকার কেমন হবে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশিকুর রহমান বলেন, অনেক উপকার হবে। আমরা গরিব, এই টাকাটা পেলে বাচ্চাদের নতুন বইয়ের সাথে নতুন জামা তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে। তিনি বলেন, স্কুলের স্যার সব বাচ্চাদের বলে দিয়েছেন নিয়মিত স্কুলে না এলে এবং পরীক্ষায় পাস না করলে উপবৃত্তির টাকা পাবে না। এতে করে এখন বাচ্চারা নিয়মিত স্কুলে যায়। পড়াশুনাও ভালো করে বলে জানান দিপুর চাচা। বগুড়ার খান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী কাঞ্চন নাহারের মা রেহেনা আকতার এ প্রতিবেদককে বলেন, নতুন বইয়ের সঙ্গে স্কুলের পোশাক কেনার জন্য টাকা দিলে আমাদের অনেক উপকার হবে। সন্তানকে কে না চায় বছরের প্রথমে স্কুলে যাওয়ার সময় নতুন জামা দিতে। আমরা তো আর নতুন জামা কিনে দিতে পারবো না। তিনি বলেন, উপবৃত্তির মতো এই টাকাও যদি মোবাইলে আসে তাহলে অনেক ভালো হয়। রেহেনা আকতার আরও বলেন, স্কুলের ম্যাডামরা বলে দিয়েছেন যদি ক্লাসে ঠিকমত না যায় আর পরীক্ষায় ভালো না করলে উপবৃত্তির টাকা পাবে না। তিনি বলেন, আগের তুলনায় এখন ছেলে-মেয়েরা স্কুলে বেশি যায়, পড়াশোনা ভালো করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মো. কায়কোবাদ আমার সংবাদকে বলেন, একটা স্কুলের সব শিক্ষার্থী যদি একই রকমের স্কুল ড্রেস পড়ে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ভালো একটা ফিলিংস কাজ করবে। তিনি বলেন, যারা ধনী তারা ভালো কাপড় পরে আসবে, যারা গরিব তারা পরবে না, এতে অনেকেরই কষ্ট হয়। এখন যদি সরকার এ ব্যবস্থা চালু করতে পারে তাহলে এটা অসাধারণ কাজ হবে। এ শিক্ষাবিদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তবে এই কাজ করতে গিয়ে যেন পয়সার শ্রাদ্ধ না হয়, টাইম লস না হয়, যাতে করে নিখুঁতভাবে কাজটি করা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, উপবৃত্তির টাকা যেভাবে রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে শিওর ক্যাশে মা-দের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়। ঠিক এমনভাবেই এই স্কুল ড্রেস কেনার টাকাটাও মায়েদের কাছে পৌঁছাতে হবে। তা না হলে আগে অনেক সময় দেখা যেতো উপবৃত্তি টাকা নেয়ার জন্য ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর হিসাব দিয়ে সেখানে পরে তদন্ত করে পাওয়া যায় ৮ হাজার জনের হিসাব। দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রী লাপাত্তা এটা যেনো না হয়। শিক্ষাবিদ কায়কোবাদ বলেন, অবশ্যই স্কুল থেকে নির্দিষ্ট পোশাক কিনে দেয়ার বিষয়টি ইনশিওর করতে হবে। সরকার এই উদ্যোগ যদি সঠিকভাবে পালন করতে পারে তাহলে অনেক ভালো হবে। প্রসঙ্গত, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বইয়ের সঙ্গে মাথাপিছু দুই হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। স্কুল ড্রেস, জুতা ও ব্যাগ কেনার জন্য এ টাকা দেয়া হবে। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে এক সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর প্রথমবার ৫০০ টাকা করে দেয়ার পরিকল্পনা করে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত সেপ্টেম্বরে কুড়িগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আগামী বছর শুরুর দিন দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বইয়ের পাশাপাশি দুই হাজার করে টাকা দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের স্কুলের পোশাক কেনার জন্য এ টাকা দেয়া হবে। এমএআই