Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

বড় রদবদল আসছে মন্ত্রিসভায়

প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন

জানুয়ারি ৭, ২০২০, ০৪:১৮ এএম


বড় রদবদল আসছে মন্ত্রিসভায় তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ৭ জানুয়ারি। নতুন বছরের প্রথমার্ধে রদ-বদল আনা হতে পারে মন্ত্রিসভায়। এ ক্ষেত্রে আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চে এ রদ-বদল হতে পারে। নতুন করে মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন একাধিক মুখ। পদোন্নতি পেতে পারেন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকা চারজন। বাদ পড়তে পারে অন্তত দু’জন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বহুদিন থেকেই সরকার ও দল আলাদা করার প্রক্রিয়া নিয়ে গুঞ্জন চলছিল ক্ষমতাসীন দলটির ভেতরে। সর্বশেষ কাউন্সিলে বিষয়টি পরিষ্কার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদে রদ-বদল বিষয়ে কাউন্সিলেও আভাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সরকার ও দলের মধ্যে পৃথককরণের। তবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার ও দলের মধ্যে যোগসূত্র থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা বেশি। এসব বিবেচনায় শতভাগ পৃথক করবেন না। যদিও মন্ত্রিপরিষদের ক্ষেত্রে পুনর্বিন্যাস করা হয়, তাহলে বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদে থাকা দুই থেকে চারজনকে পদোন্নিত দেয়া হতে পারে। এছাড়া সাবেক মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞদের নিয়ে আসার বিষয়ে জোর গুঞ্জন উঠেছে। অনেকের নামে আখের গোছানোর অভিযোগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে দলের একনিষ্ঠ, পরীক্ষিত ও দীর্ঘদিনের ত্যাগীদের মন্ত্রিসভায় ডাক পড়তে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। গত বছর কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কিছু বিষয় নিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়। যার ফলে সামলোচনার মধ্যে পড়তে হয় সরকারকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছরের মূল্যায়নে মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মন্ত্রণালয় পরিচালনায় দুর্বলতার বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দৃশ্যমান হয়েছে। পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেও সমালোচনার ঝড় বইছে। রেল মন্ত্রণালয়েও কাজের সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে মূল্যায়নে উঠে এসেছে। এছাড়া গত এক বছরে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ কয়েকটি বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কাজে আসেনি এবং চালের দাম বৃদ্ধি ও এর নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। এবারের কাউন্সিলে সরকারের ৪৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মধ্যে দলীয় পদে রাখা হয়েছে শুধু চারজনকে। এর মধ্যে সাতজন বাদ পড়েছেন। দলীয় পদে থাকা চার মন্ত্রীর মধ্য থেকে দুই মন্ত্রী বাদ পড়বেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যদিও সম্পূর্ণ আলাদা করার সঙ্গে একমত নন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, মন্ত্রিসভায় যারা ভালো করবেন না, তাদের দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হবে। মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস একটি রুটিনওয়ার্ক। নতুন বছরে এটা হতে পারে। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার সদস্যদের গত বছরের কাজের ফিরিস্তি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। যারা ইতোমধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন, তাদের হয়তো কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হবে। আর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দু-একজন উপমন্ত্রী থেকে প্রতিমন্ত্রী হবেন। সরকারের ভাবমূর্তি ফেরাতে সাবেক দু-একজন মন্ত্রীকে পুনরায় মন্ত্রী করার বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। সূত্র জানায়, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের একজন প্রতিমন্ত্রী পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী থেকে প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকে দুই থেকে তিনজনকে মন্ত্রিসভায় আনার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর— কয়েকজন সিনিয়র সাবেক মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের নাম পচ্ছন্দের তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ সূত্র আরো জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পরিবর্তন করে ড. আব্দুর রাজ্জাককে খাদ্য মন্ত্রণালয় দেয়া হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে— স্থানীয় সরকার (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে সরিয়ে সেখানে সাবেক মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। এ ক্ষেত্রে তাজুল ইসলামকে অন্য মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে নেয়া হতে পারে। সূত্র আরো জানায়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী করা হতে পারে। এবার পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হওয়ার জোর সম্ভাবনা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর। এছাড়া পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হতে পারেন। এদিকে সরকারের ৪৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মধ্যে দলীয় পদে রাখা হয়েছে শুধু চারজনকে। তারা হলেন— সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বাকিদের দলের পদ-পদবিতে রাখা হয়নি। এর মধ্যে সাতজন বাদ পড়েছেন। তারা হলেন— বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি (অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক), ধর্মমন্ত্রী শেখ মো.আব্দুল্লাহ (ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক) নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক), পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক), শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক), গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম (সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক), মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা (সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক)। উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী নিয়ে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করেন তিনি। পাঁচ মাসের মাথায় মন্ত্রিসভায় প্রথম পরিবর্তন আনা হয়। ফলে মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর সংখ্যা বেড়ে হয় ২৫ জনে। তবে প্রতিমন্ত্রী আগের মতোই ১৯ ও উপমন্ত্রী তিনজনই রয়েছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য ৪৭ জন। এবার মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস হয়ে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সর্বশেষ কথা— মন্ত্রিসভার রদ-বদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। তিনি এ বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞ বলেও জানান তারা। আমারসংবাদ/এমএআই