Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

চালু হচ্ছে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম

জাহাঙ্গীর আলম

আগস্ট ২৩, ২০২০, ০৬:০৯ পিএম


চালু হচ্ছে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম

বৃহত্তর ঢাকা তথা ডিপিডিসি এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় সাব-স্টেশনের সক্ষমতা কম। তাই নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এর মাধ্যমে অনেকগুলো ১৩২/৩৩ এবং ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

শুধু তাই নয়, পাঁচটি সাব-স্টেশনে পাইলটিং ভিত্তিতে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমও চালু করা হবে। নতুন এ প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা অর্জনে ৪০ জন কর্মকর্তাকে বিদেশ ভ্রমণ করতে হবে। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় ‘উপকেন্দ্র নির্মাণ, পুনর্বাসন, বিদ্যুৎব্যবস্থায় ক্যাপাসিটি ব্যাংক স্থাপন এবং স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থার প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ ১৫ হাজার নতুন গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হবে।

এতে এক হাজার ৫২৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্রমতে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি। বৃহত্তর ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর গঠন করা হয় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি।  

অপারেশন শুরু করে ২০০৭ সালের ১৪ মে থেকে।  ডিপিডিসি ছয় লাখ ৫৫ হাজার ৯০৮  জন গ্রাহক নিয়ে তার অপারেশন শুরু করে। ১৩ বছরে গ্রাহক বেড়ে গত মার্চে দ্বিগুণ ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯  পৌঁছেছে। ডিপিডিসির বর্তমান সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ১৬৭০ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট।

এর আওতায় ১৩২/৩৩ কেভির সাব-স্টেশনের সংখ্যা ১৪টি এবং এগুলোর ক্যাপাসিটি ২৪১৮ এমভিএ। অন্যদিকে ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের সংখ্যা ৪৮টি এবং এগুলোর ক্যাপাসিটি ৩০১০ এমভিএ। কিন্তু প্রতিনিয়ত ডিপিডিসি এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। বিদ্যমান সিস্টেমে চাপও বাড়ছে।

তাই নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। বেসরকারি সংস্থা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডকে দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) করা হয়েছে। সংস্থাটি গত বছরের জানুয়ারি মাসে রিপোর্টও দিয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে একটি প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।  

প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজ হিসেবে বলা হয়েছে, দুটি ১৩২/৩৩ গ্রিড সাব-স্টেশন এবং চারটি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হবে। ১৩২ কেভি লেভেলে ৪৮০ এমভিএ এবং ৩৩ কেভি লেভেলে ৫২৫ এমভিএ বিতরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। রিনোভেমনের মাধ্যমে বিদ্যমান তিনটি সাব-স্টেশনের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।

একই সাথে বিদ্যমান পাঁচটি সাব-স্টেশনের ৩৩ কেভি এয়ার ইন্সটলেটেড সুইচগিয়ার (এআইএস) স্থলে ৩৩ কেভি গ্যাস ইন্সটলেটেড  সুইচগিয়ার (জিআইএস) প্রতিস্থাপন করা হবে।

বিদ্যুতের ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নে ডিপিডিসি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম প্রবর্তন করা হবে। প্রথমে কামরাঙ্গীরচর, লালমাটিয়া, গ্রিনরোড, খানপুর এবং খিলগাঁওয়ে ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনে পাইলটিং ভিত্তিতে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম চালু করা হবে। এতে টেকনিক্যাল লস কমে যাবে।

সূত্র আরও জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ ১৫ হাজার নতুন গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় ছয়টি সাব-স্টেশন ভবনও নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ১১টি যানবহনও কেনা হবে। এভাবে বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়নে এক হাজার ৫২৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারণ করা হয়।

তা যাচাই করতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা ব্যয় কমিয়ে এক হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন।

এছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য স্টাডি ট্যুরের সংখ্যা কমিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়। এভাবে কিছু ব্যাপারে আপত্তি করে তা সংশোধন করতে বলা হয়।

সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হলে সব প্রক্রিয়া শেষে কাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।      
 
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান সম্প্রতি বলেন, ‘সবার ঘরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ডিপিডিসির প্রতিটি কর্মী সর্বোচ্চ আন্তরিতার সঙ্গে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরাই আমাদের মূল চালিকাশক্তি। তাদের সেবা দিতেই আমরা দিন-রাত কাজ করি। কাজেই আমরা কোনোমতেই চাইবো না কোনো গ্রাহক হয়রানির শিকার হন। প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৭ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ প্রকল্প বাস্তবায়নে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

ডিপিডিসির অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎসেবা পৌঁছে দিতে ডিপিডিসি বদ্ধপরিকর। গ্রাহকদের আধুনিক সেবা দিতে আধুনিক মিটার ব্যবস্থা বা স্মার্ট গ্রিড ও অ্যাডভান্স মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এএমআই) বাস্তবায়নসহ অন্যান্য উদ্যোগে ডিপিডিসি এখন একটি ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টার কলসেন্টার চালু করেছি। সিস্টেম লস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি। সর্বোপরি বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি সাবেক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, চট্টগ্রাম (বিআইটি)— যা বর্তমানে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (চুয়েট) থেকে বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রি অর্জন করেন।

আমারসংবাদ/এসটি