Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

মহাবিপদ এখনো স্ব অবস্থানে

আবদুর রহিম

আগস্ট ২৪, ২০২০, ০৭:০৫ পিএম


মহাবিপদ এখনো স্ব অবস্থানে

করোনার মহাবিপদ এখনো স্ব অবস্থায়। মৃত্যু এখনো ৩০-৫০ এর ঘরে। আক্রান্তও স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। করোনায় উখিয়ায় রোহিঙ্গা এলাকায় শিশুদের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। বয়স্ক ও পুরুষের মৃত্যুও নিয়ন্ত্রণে নেই। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পর্যবেক্ষণও সন্তোষজনক নয়। বন্ধ হয়ে গেছে নিয়মিত ব্রিফিং।

প্রশ্ন পর্ব না থাকায় বৃত্তান্তও সারা দেশের মানুষ জানতে পারছে না। মানুষের মধ্যে নেই কোনো সতর্কতা। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব কোনোটিই নেই। মাস্ক ব্যবহারও উঠে গেছে। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছে। একটুও সচেতনতা নেই।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তথ্য জানছে দেশের মানুষ। গতকাল একদিনে আরও ৪২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৯৮৩ জন। সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই হাজার ৪৮৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৮৩ জনে।

আইইডিসিআরের হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ও বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মধ্যে আরও তিন হাজার ৭৮৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৮২ হাজার ৮৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৯১টি ল্যাবে ১৩ হাজার ৩৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সর্বমোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।গত একদিনে যারা মারা গেছেন তাদের ৩১ জন পুরুষ, ১১ জন নারী। ৩৮ জন হাসপাতালে এবং চারজন বাড়িতে মারা গেছেন।

তাদের মধ্যে ১৯ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি। ১২ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং দুইজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিলো। ২১ জন ঢাকা বিভাগের, সাতজন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন রাজশাহী বিভাগের, ছয়জন খুলনা বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের, দুইজন রংপুর বিভাগের এবং দুইজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া তিন হাজার ৯৮৩ জনের মধ্যে তিন হাজার ১৩৭ জনই পুরুষ এবং ৮৪৬ জন নারী। তাদের মধ্যে এক হাজার ৯৪৭ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি।

এছাড়া এক হাজার ১০৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৫৩৩ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ২৪৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৯৫ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৩৫ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১৯ জনের বয়স ছিলো ১০ বছরের কম।

এর মধ্যে এক হাজার ৯২০ জন ঢাকা বিভাগের, ৮৮০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ২৭০ জন রাজশাহী বিভাগের, ৩২২ জন খুলনা বিভাগের, ১৫৫ জন বরিশাল বিভাগের, ১৮৪ জন সিলেট বিভাগের, ১৬৭ জন রংপুর বিভাগের এবং ৮৫ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, তা আড়াই লাখ পেরিয়ে যায় গত ৭ আগস্ট। এর মধ্যে ২ জুলাই চার হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১২ অগাস্ট সেই সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যায়।

এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। সংক্রমণ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫তম স্থানে। সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলেছে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানকে।

এদিকে কোভিড-১৯ কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত চার লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশুর জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মার্চ থেকে শিবিরগুলোতে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ।

প্রায় তিন লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু ও কিশোর-কিশোরী তাদের শিক্ষাকেন্দ্রের বাইরে রয়েছে। বাবা-মা ও সেবাদানকারীদের সম্পৃক্ত করে এবং ওয়ার্কবুক ও ভিজ্যুয়াল এইড দেয়ার মাধ্যমে বাড়তি শিশুদের পড়াশোনায় সহায়তা করতে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও তার সহযোগীরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় ইউনিসেফ। বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক জিন গফ বলেন, বাংলাদেশে নির্বাসিত অবস্থায় থাকা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু এবং পরিবারগুলো অসাধারণ দৃঢ়তা দেখিয়েছে।

অকল্পনীয় রকম কঠিন পরিস্থিতিতে তারা রয়েছে যা মৌসুমি বৃষ্টি ও বৈশ্বিক মহামারির কারণে আরো কঠিন হয়ে উঠেছে এবং এই কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও শক্তি, সাহস ও অধ্যবসায় কী তা পরিবারগুলো প্রতিদিনই আমাদের শিখিয়ে চলেছে।

আমারসংবাদ/এআই