Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

গাড়ি কিনেই দুই বছর পার

জাহাঙ্গীর আলম

আগস্ট ২৫, ২০২০, ০৬:০৮ পিএম


গাড়ি কিনেই দুই বছর পার

এখনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। মন্ত্রণালয়ে শুধু দুটি স্টিয়ারিং কমিটির সভা হয়েছে। সময় চলে গেছে দুই বছর। তারপরও আসল কাজের অগ্রগতি শূন্য। তবে সরকারি ক্রয় বিধি অনুসরণ না করে গাড়িসহ কিছু পণ্য কেনা হয়েছে।

ভ্রমণ ভাতা নেয়া হয়েছে। এটি যেনতেন কোনো প্রকল্প নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভিত্তিক শিশুদের নিরাপত্তা, জীবনমান উন্নয়নে ‘সরকারি শিশু পরিবার ও ছোটমনি নিবাস নির্মাণ/ পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্পের এ হচ্ছে বাস্তব চিত্র। কাজ না হওয়ায় পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করতে হচ্ছে শিশুদের।

বিল্ডিং ভেঙে পড়ার ভয়ে তারা ঘুমাতে পারে না। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতে পারে। আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। এক বছর না যেতেই সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

তাতে ব্যয় বাড়ছে ১৯ শতাংশ। সময়ও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে তা পড়ে আছে। ২০১৮ সালে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।  

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারে এতিম ও দুস্থ শিশুদের লালনপালন করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৮টি সরকারি শিশু পরিবার এবং একটি ছোটমনি নিবাস বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তা পুনর্নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। তা আমলে নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। সব প্রক্রিয়া শেষে সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট অনুমোদনও দেয়।

যা ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনে শেষ করার কথা। ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা। যাতে শিশুরা নিরাপদ আবাসনে বসবাস করতে পারে। তাদের জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।

একই সাথে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে তারা গড়ে উঠতে পারে। এর মধ্যে পূর্ত কাজ অর্থাৎ বিল্ডিং নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৯৬ শতাংশ। এর আওতায় খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলায় ১০০ আসনের এবং রাজশাহীসহ ৯টি জেলায় ১৭৫ আসনের এবং বাগেরহাটে ১৫০ আসনের একটি সরকারি শিশু পরিবার নির্মাণ করার কথা।

শিশুদের বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কাজ দ্রুত শেষ করতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ প্রায় ৯০ লাখ টাকা দেয়া হলে তা ব্যয়ও করা হয়। গত অর্থবছরেও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ব্যয় হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু প্রায় দুই বছর চলে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রকল্পের মূল কাজ ভবন নির্মাণে ৯৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ ব্যয় করার কথা। দুই বছরেও কোনো টেন্ডার আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। মূল কাজের মে মাস পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি শূন্য।

তবে শুধু ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকায় একটি গাড়ি কেনা হয়েছে। তাতে দুই লাখ টাকার পেট্রোল কেনা হয়েছে। কর্মকর্তাদের জন্য পরিবহন ব্যয় করা হয়েছে সাত লাখ টাকা। কর্মকর্তাদের ভ্রমণেও ব্যয় করা হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা।

চার লাখ ৩৮ হাজার টাকার প্রায় ১৪ হাজার আসবাবপত্র, প্রায় ১১ লাখ টাকার যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন খাতে ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কেনাকাটার দরপত্র পেপারে দেয়া হয়নি। যা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তর ড্রয়িং ডিজাইন তৈরি করলেও প্রকল্পের মূল কাজ বা বিল্ডিং নির্মাণ কাজের কিছুই হয়নি। ২৬৩ কোটি টাকাই অব্যয়িত রয়েছে। অগ্রগতি শূন্য। সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প হলেও শুরু থেকে দুটি স্টিয়ারিং কমিটির সভা হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারির সভায় সংশোধন করতে বলা হয়েছে।

তাই সংস্থা থেকে এক বছর পরই ২০১৯ সালের ৯ জুলাই সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সময় এক বছর বাড়ানো হয়েছে। একই সাথে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা বা প্রায় ১৯ শতাংশ। সংশোধনী প্রস্তাবে ওটিএমের পরিবর্তে প্রতিযোগিতার সুফল না পাওয়া গেলেও ডিএমপির প্রস্তাব করা হয়েছে। রেট সিডিউলও ২০১৮ সাল উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়েই পড়ে আছে ডিপিপি। সংশোধনের জন্য যায়নি পরিকল্পনা কমিশনে।  

প্রকল্প অনুমোদনের পরই ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এম হুমায়ন কবীরকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সার্বিক ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলেও ফোন না ধরায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পণ্য, কার্য ও সেবা সংগ্রহের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধি, গুণগতমান ও পরিমাণ অনুযায়ী সবকিছু করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতেই আইএমইডি থেকে এই নিবিড় পরিবীক্ষণ করা হয়।

শিশু পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তথ্য সংগ্রহ করার পর কর্মশালার আয়োজন করে ডিসি, এসপিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হয়। এপ্রিলে টেকনিক্যাল কমিটিতে খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এরপর জুনে আইএমইডি সচিবের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে আলোচনা করে এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৮টি শিশু পরিবার ও একটি ছোটমনি নিবাসে দুই হাজার ৬২৫ জন শিশু থাকার অনুমতি আছে। ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে এক হাজার ৩০০ জন বাস করছে। নিবাসে অনেক প্রতিবন্ধীও রয়েছে। বসবাসকারী শিশুরা জানায়, একটাই সমস্যা বিল্ডিং কখন ভেঙে পড়ে। সবসময় শিশুরা ভয়ে আছে। বাসস্থানের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ।

তাদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রাখা হলেও ৭২ শতাংশ শিশু জানায় সরকারি শিশু পরিবারে তারা চিকিৎসাসেবা পায় না। প্রতিবন্ধী শিশুদের টেককেয়ার করার মতো প্রশিক্ষিত কোনো স্টাফ নেই।

সরকার সহযোগিতা করলেও আমলে নেয়নি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সংশোধনের প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রণালয় তার অনুমোদন দেয়নি। পাঠানো হয়নি পরিকল্পনা কমিশনে।

আমারসংবাদ/এসটিএম