Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

আক্রান্ত কমলেও বেড়েছে মৃত্যু

আবদুর রহিম ও মাহমুদুল হাসান

আগস্ট ২৬, ২০২০, ০৬:০১ পিএম


আক্রান্ত কমলেও বেড়েছে মৃত্যু

প্রায় অর্ধবছর ধরে করোনা সংক্রমণ চলছে। মার্চ থেকে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হচ্ছে। ইতোমধ্যে মৃত্যু চার হাজারেরও বেশি ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তিন ভাগের দুই ভাগ সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরলেও এখনো যন্ত্রণা ভোগ করছেন লক্ষাধিক রোগী। সমপ্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা কমলেও কমেনি মৃত্যু।

এদিকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দিলেও স্থবির দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। জনস্বাস্থ্যবিদরা এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিপক্ষে। তাদের ভাষ্য, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সংক্রমণ  নিয়ন্ত্রণে আসেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে সরকার। পুরো রাজধানীতেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। প্রায় সব এলাকায় নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে মহামারির শুরু থেকেই রাজধানী ঢাকায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ছিলো। সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে আক্রান্তের হার কমতে দেখা যায়।

কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো শিথিল হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর জীবনযাত্রা মহামারি শুরুর প্রায় আগের অবস্থায় চলে এসেছে। রাস্তায় মানুষের ঢল আর যানজট অনেকটা আগের মতো। খুব কম মানুষ মাস্ক পরে রাস্তায় বের হচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিষয়টি গুরুত্ব হারিয়েছে। কাঁচাবাজার শুধু নয়, অফিস ও ব্যাংকপাড়াতেও পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যাচ্ছে না।

মানুষ অনেকটা বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে চলাফেরা-যাতায়াত করছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো সরকারি উদ্যোগ মানুষ দেখতে পাচ্ছে না, মানুষের সামনে কোনো বিধিনিষেধ কার্যত নেই। তাই বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে সংক্রমণ থেমে নেই। পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এবং ওয়ারীতে লকডাউন হলে ফলাফল তেমন দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজধানীসহ সারা দেশের ৯২টি আরটি পিসিআর ল্যাবে গত একদিনে ১৪ হাজার ৮৩৫টি নমুনা সংগ্রহ হয়। আগের নমুনাসহ মোট ১৫ হাজার ৭০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৬১টিতে। গতকাল নতুন আরও দুই হাজার ৫১৯ জন শনাক্ত হয়েছেন।

এ নিয়ে ভাইরাসটিতে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। একদিনে আরও ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৩৯ জন ও নারী ১৫ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে ৪৯ জন ও বাড়িতে পাঁচজন মারা যান। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো চার হাজার ৮২ জনে। এ ছাড়াও গতকাল সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৪২৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো এক লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ জনে।

একদিনে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৬২ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৫ শতাংশ।গতকাল মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী। এখন পর্যন্ত তিন হাজার ২০৮ জন পুরুষ এবং ৮৭৪ জন নারী মারা গেছেন।

নতুন মারা যাওয়াদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব ২৯, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৪, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে আট, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তিনজন রয়েছেন।

বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ২৩, চট্টগ্রামে ৯, রাজশাহীতে চার, খুলনায় ৯, বরিশালে দুই, সিলেটে দুই, রংপুরে তিন এবং ময়মনসিংহে দুইজন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৪৯ এবং বাড়িতে পাঁচজন মারা গেছেন।

নতুন মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী চার হাজার ৮২ জনের মধ্যে তিন হাজার ২০৮ জন পুরুষ এবং ৮৭৪ জন নারী। শতাংশের হিসাবে ৭৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ পুরুষ ও ২১ দশমিক ৪১ শতাংশ নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বয়সভেদে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা। মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক তারা। ৪৯ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ ষাটোর্ধ্ব। সংখ্যায় দুই হাজার তিন জন। এর পরে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ২৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ বা এক হাজার ১২৯ জন। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রয়েছে ৫৪৭ জন বা ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪১ বছর বয়সি মারা গেছে ২৫৩ জন।

শতকরা হিসেবে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছে দুই দশমিক ৩৫ শতাংশ। সংখ্যায় ৯৬ জন। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে মারা গেছে ৩৫ জন এবং ১০ বছরের নিচে মারা গেছে আরও ১৯ জন। এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মৃতের হিসেবে ঢাকা বিভাগের এক হাজার ৯৬৮ জন।

শতকরা হিসাবে ঢাকাতেই বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃত্যুর অর্ধেক বা ৪৮ দশমিক ২১ শতাংশ। চট্টগ্রামে ৮৯৮ জন বা ২২ শতাংশ। রাজশাহীতে ২৭৬ জন বা ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, খুলনায় ৩৩৫ জন, বরিশাল ১৫৯ জন, সিলেট ১৮৬ জন, রংপুর ১৭১ জন এবং ময়মনসিংহে ৮৯।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, সারা দেশে সাধারণ বেড আছে ১৪ হাজার ৮৪৩টি। সেখানে রোগী ভর্তি আছে চার হাজার ৫৬ জন এবং ফাকা আছে ১০ হাজার ৭৮৭টি। সারা দেশে আইসিইউ আছে ৫৪৮টি।

সেখানে ভর্তি আছে ৩২৪ জন এবং ফাকা আছে ২২৪টি। ঢাকা মহানগরীতে সাধারণবেড আছে ছয় হাজার ৬২৫টি। সেখানে রোগী ভর্তি আছে দুই হাজার ১৬৫ জন এবং বেড ফাকা আছে চার হাজার ৪৬০টি। ঢাকায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ ৩১০টি। সেখানে রোগী ভর্তি আছে ২০০ জন এবং ফাকা আছে ১১০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ বেড আছে ৭৮২টি সেখানে ভর্তি আছে ১৮০ জন এবং ফাকা আছে ৬০২টি।

আইসিইউ ৩৯টি, ভর্তি আছে ২২ জন এবং ফাকা আছে ১৭টি। সারা দেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ বেড আছে সাত হাজার ৪৩৬টি। রোহী ভর্তি আছে এক হাজার ৭১১ জন এবং বেড ফাকা আছে পাঁচ হাজার ৭২৫টি।

সারাদেশে আইসিইউ আছে আরও১৯৯টি। ভর্তি আছে ১০২ জন এবং ৯৭টি। সারা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫৮৩টি। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সংখ্যা ৪২৯টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সংখ্যা ১৭৬টি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, গতকাল একদিনে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৫৩ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ২৮৭ জন। আইসোলেশন থেকে গতকাল ৭৪১ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২৮৭ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৬৮৬ জনকে। গতকাল প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে এক হাজার ৮৪৯ জনকে।

এসময় কোয়ারেন্টাইন থেকে এক হাজার ৯০৫ জন এবং এখন পর্যন্ত চার লাখ ৩৪ হাজার ৩০৭ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে চার লাখ ৮৭ হাজার ১২ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫২ হাজার ৭০৫ জন।

আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, ‘রাজধানীতে জনঘনত্ব বেশি। অফিসুআদালত ঢাকায় বেশি। এখন স্বাস্থ্যবিধিও সবখানে মানা হচ্ছে না। ঈদের আগে পরে এখানে নানাভাবে লোকসমাগম ও যাতায়াত বেশি হয়েছে। এসবের একটা প্রভাব রয়েছে।

এছাড়া রাজধানীতে বড় বড় হাসপাতাল থাকলেও কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা একেবারেই নেই। কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে বা আক্রান্তদের সবার নিয়মিত ফলোআপ করা গেলে মৃত্যু ও সংক্রমণ আরও কমানো যেতো।

আমারসংবাদ/এসটিএম