Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ঘোষণার ১০ বছরেও হয়নি অধিদপ্তর

রফিকুল ইসলাম

অক্টোবর ৪, ২০২০, ১১:০১ পিএম


জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ঘোষণার ১০ বছরেও হয়নি অধিদপ্তর

প্রতিবন্ধীরা একসময় সমাজ কিংবা নিজ পরিবারে অবহেলা ও অবজ্ঞার পাত্র ছিলো। কিন্তু বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আজ প্রত্যেক প্রতিবন্ধীই সম্পদে পরিণত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন দেশের উন্নয়নে।

আর এই প্রতিবন্ধীদের মানবসম্পদে পরিণত করতে সরকারপ্রধানের নির্দেশনায় কঠোর পরিশ্রম করছেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। প্রতিবন্ধীদের সেবার মান আরও বৃদ্ধি করতে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটিকে অধিদপ্তর ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই প্রতিষ্ঠানকে অধিদপ্তর করতে নামফলকও উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ঘোষণা আটকে আছে কাগজ-কলমে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ফাউন্ডেশনটি অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হলেই শিক্ষিত বেকার প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানামুখী সুযোগ-সুবিধা পাবে। তথ্যমতে, প্রায় একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে বর্তমান সরকার।

ক্ষমতার দীর্ঘ সময়ে প্রতিবন্ধীদের ভাগ্যোন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন সরকারপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রতিবন্ধীদের দুর্ভোগ কমাতে শিক্ষিত বেকার প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সম্পদে পরিণত করতে ২০১০ সালের ২ এপ্রিল অটিজম দিবসের আলোচনা সভায় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুকন্যার এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে কার্যক্রম শুরু করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ অধিদপ্তরে রূপান্তর করার লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবের মৌখিক নির্দেশক্রমে গত ২০১০ মার্চ মাসে ফাউন্ডেশন  থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠান।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই বছরের এপ্রিলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব পাঠায়। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৩৭৩টি পদের অনুমোদন দেন। বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্রের সরকারের রাজস্ব বাজেটভুক্ত ৭৫টি এবং পিএইচটি সেন্টার ৪২টি পদ নবগঠিত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়।

এরপর ২০১৩ সালে অধিদপ্তর অনুমোদনসহ বাংলা ও ইংরেজি নামের ছাড়পত্র দেয়  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যার প্রেক্ষিতে মসাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীনে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরের জন্য ২০টি ক্যাটাগরিতে ৩৮পি পদের বেতন স্কেল অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল সপ্তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে ফের বিষয়টি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় অধিদপ্তরের নামফলক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। নামফলক উন্মোচন পর ওই বছরের ৮ জুন প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরে রূপান্তর করার বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে সমাজকল্যাণ সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের উপস্থিতিতে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করতে ২০১৫ সালের মে মাসে পুনরায় পৃষ্ঠপোষকমণ্ডলীর দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সচিব কর্তৃক তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে অধিদপ্তর না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সর্বশেষ গত বছরের  ২৫ জুন মন্ত্রণালয় পত্রের প্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরের খসড়া অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগ-বিধিমালা সংশোধন করে। প্রস্তাবিত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরে জনবল অনুমোদনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রাণালয় থেকে ২০১৯ সালের ৫ মে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠায়।

এরপর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও অধিদপ্তরের মুখ দেখেনি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। সরকারপ্রধানের ঘোষণার পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অধিদপ্তর পূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান দেশের প্রতিবন্ধীদের ভাগ্যোন্নয়নে সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ও এলজিডি ট্রাস্ট এই তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে।

ফলে একজন প্রতিবন্ধীকে একটি কাজের জন্য এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। কিন্তু জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তর ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে ওই প্রতিবন্ধীদের জীবন মান আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তারা মনে করেন, ফাউন্ডেশন অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হলে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের সকল সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে প্রতিবন্ধীরা। একই সাথে অধিদপ্তর হলে অনেক শিক্ষিত বেকার প্রতিবন্ধীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।   

জানতে চাইলে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) শেখ হামিম হাসান আমার সংবাদকে বলেন, ‘অধিদপ্তর করার প্রস্তাব সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। যথারিতি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সেই প্রস্তাব মন্ত্রপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন অধিদপ্তর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। কিন্তু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হলে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রতিবন্ধীসেবা ও সাহায্যকেন্দ্র গড়ে তুলতে পারবো। মূলত অধিদপ্তর হলে প্রতিবন্ধীদের সেবার গুণগত ও পরিমাণগত মান বৃদ্ধি পাবে।’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও কেন প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হচ্ছে না বিষয়টি জানতে চাইলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তর ঘোষণা করেন।

তিনি মনে করেন, অধিদপ্তর হলে প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অধিদপ্তরের বিষয়টি পেনডিংয়ে আছে। তবে বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। এটা নিয়ে চিন্তা করছি। আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্য বিষয়টি সমাধান হবে।’

আমারসংবাদ/এসটিএম