Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বলয় ভাঙতে কঠোর কেন্দ্র

রফিকুল ইসলাম

অক্টোবর ২৩, ২০২০, ০৬:১৭ পিএম


বলয় ভাঙতে কঠোর কেন্দ্র

বর্তমান রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সুসময়। এদিকে দলটির দক্ষ নেতৃত্বে মাঠের আন্দোলন সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে সৃষ্ট ইস্যুগুলো দূরদর্শিতার সাথে মোকাবিলা করে রাষ্ট্রপরিচালনায় সফল। তাই রাজনীতির এই সুসময়কে শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে কাজে লাগাতে চান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

বিশেষ করে দলে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের ছেঁটে ফেলা, অভ্যন্তরে বলয়ভিত্তিক রাজনীতি ভাঙা, ভাই লীগ, এমপি লীগ নিশ্চিহ্ন করা এবং সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ত্যাগী, পরিশ্রমী এবং পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে নতুন ও শক্তিশালী তৃণমূল গঠন করতে চান তারা। এ জন্য বন্ধ থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন আগামী নভেম্বর থেকে শুরু করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আ.লীগ সূত্র জানায়, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে আঘাত করে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস। এমন অবস্থায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশনায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় সারা দেশে সক্রিয় দলটির নেতাকর্মীরা। বর্তমানে প্রায় করোনা ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে দেশ। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সীমিত পরিসরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

এমন পরিস্থিতিতে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর এবং উপজেলাসহ প্রতিটি ইউনিটির সম্মেলনের কার্যক্রম পূর্ণরূপে শুরু করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দলটির বিভাগীয় দায়িত্বে থাকা নেতারা সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন।

গতকাল দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জানা যায়, প্রায় একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, ক্ষমতার লোভ এবং দায়িত্বশীল নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে দলটি তৃণমূলের রাজনীতি। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও অধিকাংশ এমপি-মন্ত্রীর বলয়-ভিত্তিক রাজনীতির কারণে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষ, হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। একের পর এক মামলার শিকার হচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।

আর দেশের অধিকাংশ স্থানে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বিরোধ সৃষ্টির মূলে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। এমপি পরিবারের সদস্যরা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতি। শুধু তাই নয়, দল ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে অধিকাংশ এমপিই নিজ পরিবার ও পছন্দের লোকদের দায়িত্বশীল পদ-পদবিতে স্থান করে দিচ্ছেন। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং রাজনীতির কারণে একদিকে যেমন দল জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, অন্যদিকে অভিমানে দূরে সরে যাচ্ছেন দলটির ত্যাগী, পরিশ্রমী ও পরীক্ষিত নেতারা।

চলমান দলের প্রতিটি ইউনিটির সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও দুর্বলতা দূর করতে দায়িত্বশীল নেতাদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব গঠনে  ছেঁটে ফেলা হবে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত নেতাকর্মীদের।

একই সাথে ভেঙে দেয়া হবে প্রভাবশালীদের বলয়-ভিত্তিক রাজনীতি। বিদায় করা হবে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের ক্ষমতার প্রভাবে সৃষ্ট ভাই লীগ, এমপি লীগ। আর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ত্যাগী, পরিশ্রমী এবং পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে নতুন ও শক্তিশালী তৃণমূল গঠন করতে বেশ কঠোর তারা।  

গ্রুপিং রাজনীতি বন্ধ করা উচিত এবং করতেই হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘অনেকেই গ্রুপিংয়ের রাজনীতি করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে গেছে।তাদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দল ও সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

তারা গ্রুপিংয়ের রাজনীতির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কর্মীদের কোণঠাসা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার অপচেষ্টা করছে। এদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এগুলো কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবাদী ও অনুপ্রেবেশকারীরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করা হবে।’  

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএস কামাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আছে। যারা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নানামুখী নির্যাতনের মধ্যেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। নেত্রীর মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ওই সকল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আছে, সাধারণ মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অপকর্মের অভিযোগ নেই। তাদের মূল্যায়ন করা হবে।’  

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘যারা দলীয় পদের অপব্যবহার করে অপরাজনীতির সাথে যুক্ত তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। দল ও দলের ত্যাগী পরিশ্রমী নেতাকর্মীদের স্বার্থে এদের ছেঁটে ফেলা হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য জামায়াত-বিএনপি থেকে এসে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে দল ও সরকারের সুনাম নষ্ট করছে।  এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদেরও ছাড় দেয়া হবে না।  ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেক নেতাকে দল ও সহযোগী সংগঠন থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বাকিদেরও বের করে দেয়া হবে।’

তবে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সক্রিয় ছিলো জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা কথা বলা হয়, এতদিন সব সাংগঠনিক কার্যক্রম নাকি বন্ধ ছিলো। এ কথা ঠিক নয়। সাত মাস ধরেই আমাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিলো।

সারাদেশে বন্যা মোকাবিলা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় আমাদের নেতাকর্মীরা সারা দেশে সক্রিয় ছিলো। আওয়ামী লীগ কোথাও অনুপস্থিত ছিলো না। আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলো কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে।

এগুলো তো আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের বাইরে নয়। এগুলো আমরা আমাদের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা করেছি। শুধু আপনি এটুকুই বলতে পারেন যে, করোনাকালে আমাদের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াটা বন্ধ ছিলো।’

আমারসংবাদ/এসটিএম