Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

চাতালে চাতালে ধান আর ধান

আফছার আহমদ রূপক॥ প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ৩, ২০১৭, ০৫:৪৭ এএম


চাতালে চাতালে ধান আর ধান

 দেশের চাতালগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ধান দেখা গেলেও বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছেন একশ্রেণির চাল ব্যবসায়ী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধান কিনে চাতালগুলোতে প্রতিদিনই হাজার হাজার টন চাল উৎপাদন করা হচ্ছে। সেই চাল বাজারে ঠিকমতো সরবরাহ করছে না অতি মুনাফালোভীরা। তাই প্রতিদিনই দাম বাড়ছে চালের।

সরেজমিন আশুগঞ্জ থানার সোনারামপুর, সোহাগপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার চাতালে দেখা গেছে টনের পর টন সেদ্ধ ধান শুকাচ্ছেন শ্রমিকরা। শুকানোর পর অটো মেশিন দিয়ে ধান ভাঙিয়ে চাল করছেন। এমন কোনো চাতাল দেখা যায়নি, যেখানে ধান শুকানোর কাজ চলছে না।

শ্রমিকরা জানান, ৭ জেলার হাওর এলাকার ধান নষ্ট হলেও চাতালে একদিনের জন্য হলেও ধান আসা বন্ধ হয়নি। চাতাল মালিকরা ধান কিনে আনছেন এবং শ্রমিকরা সেই ধান প্রথমে সেদ্ধ করেন এবং পরে রোদে শুকিয়ে ভাঙার উপযোগী করে দিচ্ছেন। এ কাজে চাতালগুলোতে শত শত শ্রমিক কাজ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুগঞ্জ থানার সোনারামপুরের একজন চাতাল শ্রমিক বলেন. হাওর এলাকার ফসল নষ্ট হলেও অন্যজেলা থেকে ধান আসছে। ফলে প্রতিদিনই দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না তারা। অথচ শুনতে পাচ্ছেন শহরের বাজারে চাল সংকট এবং অতিরিক্ত দাম। তার প্রশ্ন- তাহলে চাতালের এত চাল যায় কোথায়?

একদিকে দেশের চাতালে চাতালে এত ধান, অন্যদিকে আমদানি শুল্কও (ট্যারিফ) ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরও বাজারে চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে অবাক সরকারের খোদ উচ্চ মহলও। গত ২০ জুন সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করে এখন থেকে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করা যাবে। এতে করে চলমান বাজার মূল্য দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তিনি বলেন, চালের কোনো সংকট নেই। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়েছে।

বাজারে দেখা গেছে, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা কেজি প্রতি ৪৮-৫০ টাকা ও পাইজাম কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট কেজিতে ৫৪-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫-৬০ ও আঠাইশ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। সরকারি হিসাবে জুন পর্যন্ত গত এক বছরে সাধারণ মানের মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশের বেশি; আর এক বছরে বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।

চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে বলে সংসদে বাজেট আলোচনায় বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি বলেছেন, দেশে এক কোটি ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ থাকার পরও খাদ্য ঘাটতি হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

আশুগঞ্জ থানার সোহাগপুর এলাকার একজন চাতাল মালিক বলেন, তারা বেশি দামে ধান কিনে এনে চাল করছেন। তাই বেশি দামে বিক্রিও করছেন। সেই চাল শহরে যাওয়ার পর আরও দাম বাড়ছে।