Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

সহায়ক সরকার নিয়ে কী ঘটবে

নূরে আলম জীবন॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ৫, ২০১৭, ০৬:৩১ এএম


সহায়ক সরকার নিয়ে কী ঘটবে

সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রেখে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপি নিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের আলোকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির সহায়ক সরকারের আন্দোলনের হুমকিকে ফাঁকা বুলিই ধরে নিচ্ছে। দলটির একাধিক নেতা মনে করছেন, সহায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করে কিছুই করতে পারবে না। উল্টো ব্যর্থ হয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে।

নেতারা বলেন, ৫ জানুয়ারির আন্দোলনের মতো বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনও ফ্লপ হওয়ার কারণ দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, বিএনপি সহায়ক সরকার বলতে কি বুঝাচ্ছে? তারা কি সংবিধান মানে না এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হবে।

ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, বিএনপি নিজেদের ঘরকেই গুছাতে পারে না তারা আবার আন্দোলন করবে কি করে। যারা (বিএনপি) পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারে না, তাদের আন্দোলন করারও শক্তি নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে তাদের (বিএনপির) দ্বিমতের কি আছে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদ নির্বাচনে তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে পরিচ্ছন্ন একটি নির্বাচন আয়োজনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ঈদুল ফিতরে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপি এবং ছাত্রদলের স্বচ্ছ ভাবমর্যাদার সাবেক নেতারাও তৃণমূলে গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন। এরই মধ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন পেশাজীবী নেতারাও। কেউ কেউ সভা-সমাবেশ কিংবা ভূরিভোজের আয়োজনও করছেন। ভোটারদের নজর কাড়তে এবং আস্থা অর্জনে অনেকে পোস্টারও সাঁটিয়েছেন এলাকায়। কেউবা উঠান বৈঠক করছেন। আর রমজান মাসজুড়ে ছিল ইফতার ও দোয়া মাহফিল। এভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে নিজেদের অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন বলে তারা মনে করেন। একাদশ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে এমনটি ধরে নিয়েই সম্ভাব্য প্রার্থীরা শুরু করেছেন গণসংযোগ। আর বিএনপি নেতাদের গণসংযোগের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য নেতারাও আদাপানি খেয়ে প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন।

নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না দিলেও ভেতরে ভেতরে ৩০০ আসনেই একাধিক প্রার্থী জরিপসহ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। একই সাথে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ২০ দলের শরিক দলগুলোর প্রভাবশালী নেতারাও। যদিও বিএনপির সাথে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কথাবার্তা এখনও হয়নি। তবে মনোনয়ন পেতে জোট নেতাদের কেউ কেউ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানকারী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের আলোকেই অনেকে নিজ নিজ এলাকায় তৎপর হয়ে উঠেছেন।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের প্রচারণায় বিগত সময়ে বিএনপির দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বহুল আলোচিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকেন্দ্রিক জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন, হত্যাসহ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বিএনপি নেতারাও বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হওয়া, ব্যাংকের টাকা চুরি, জঙ্গিদের তৎপরতা, বাজেট ইস্যুসহ নানা বিষয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ দিকে বিএনপি বর্তমানে সহায়ক সরকারের দাবি আদায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল নিচ্ছে। তাদের এ দাবি আদায় হলে শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির কার্যক্রম শুরু করবে দলটি। সূত্রমতে, জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ তথ্যের আলোকেই শুধু বিজয়ী হওয়ার মতো জোটের সুপরিচিত ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। একাধিক নেতার সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা হবে যেকোন মূল্যে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে সম্ভাব্য সকল নেতাদের মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ভোটারদের মন জয় করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না, যারা ভোটের মাঠে ইতিবাচক অবস্থান নিতে পারবেন না আগামী নির্বাচনে তাদের মনোয়ন দেওয়া হবে না। যারা ভোটের মাঠে গ্রহণযোগ্য, যারা লড়াই করে যেতার যোগ্যতা রাখে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদেরই দল মনোনয়ন দেবে বলে জানান তিনি।