Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ভাড়া নৈরাজ্য চলছেই

আহমেদ ফেরদাউস খান॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ৫, ২০১৭, ০৬:৩৩ এএম


ভাড়া নৈরাজ্য চলছেই

রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাসে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্তি ভাড়া আদায় হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে অভিযোগের পর অভিযোগও হচ্ছিল অনেকদিন ধরে। এর প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক সমিতিই সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাস মালিকদের কেউ কেউ এবং শ্রমিক ও চালক মিলে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কৃত্রিম বাস সংকট তৈরি করে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। এমনকী যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাগ-বিতণ্ডার একপর্যায়ে মারধর করতেও পিছপা হয়নি বাসশ্রমিকরা। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সরকার ব্যাকফুটে গিয়ে একটি কমিটি গঠন করে এবং ১৫ দিন সির্টিং সার্ভিস চলবে বলে ঘোষণা দেয়। তবে এ সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় যাতে না হয় সেব্যাপারে একটি নির্দেশনাও ছিল। কিন্তু ১৫ দিন পর আর নতুন সিদ্ধান্ত হয়নি। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্যও থামেনি। প্রতিদিনই চলছে বেশি ভাড়া আদায় এবং এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া। অথচ সিটিং সার্ভিসের সরকারি অনুমোদন ছিল না কখনও। অনুমোদনহীন এসব বাসে সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ছিল। জানা গেছে অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ এপ্রিল উচ্চ ভাড়ার অবৈধ সিটিং সার্ভিস বন্ধে অভিযানে নামে বিআরটিএ।

পরিবহন মালিকদের সিদ্ধান্তে এ অভিযান পরিচালিত হলেও মালিকরা বাসের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে রাজধানীতে বাস সংকটে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নারী যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ১৯ এপ্রিল ১৫ দিনের জন্য বিআরটিএ সিটিং সার্ভিসবিরোধী অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেয়। রাজধানীতে অনুমতি সাপেক্ষে সিটিং সার্ভিস থাকলেও লোকাল বাসকে সিটিং সার্ভিসে রূপান্তিত করা যাবে না। এবং নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না এমন সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত থাকবে সিটিং সার্ভিস। মিনিবাসে সর্বনিম্ন ৫ টাকা ও বাসে ৭ টাকা আদায়ের নিয়ম থাকলেও তা মানা
হচ্ছে না। বাসগুলোতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট এখনও নেই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বাস ও মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করছে ১০ টাকা। মিরপুর ১০ থেকে ফার্মগেটে যাতায়াত করেন মাসুদ আহমেদ নামে এক যাত্রী।

তিনি আমার সংবাদকে বলেন, প্রতিদিনই অফিসে যাওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতে হয়। আগে যেসব বাস হাত তুললে দাঁড়াত, এখন সিটিংয়ের কারণে সেগুলোও আর দাঁড়ায় না। বিকালে বাসায় ফেরার সময়ের ভোগান্তিতে পড়তে হয় সকলকে। তিনি বলেন, নারী যাত্রীদের ভোগান্তি অনেক বেশি। তারা ধাক্কাধাক্কি করে উঠতে পারে না। তাই তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। তিনি আরও বলেন, শুনলাম সিটিং সার্ভিস বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু কই? অবৈধ এ সার্ভিস বৈধ হওয়ার চেষ্টা করছে মাত্র। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-এর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মাদ মাহবুব-ই রব্বানী আমার সংবাদকে বলেন, নির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায় যেন করতে না পারে সে জন্য প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এখনও নির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায় করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাজার হাজার গাড়ি চলছে রাজধানীতে। সব গাড়িতে একদিনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব না। যদি কোনো যাত্রী অভিযোগ করে তাহলে তার ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। তবে কেউ আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করছে না বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে যাত্রীরা পুলিশের কাছে অথবা বিআরটিএর কাছে অভিযোগ করতে পারে। কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিটিং সার্ভিস থাকবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২ মে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির মেয়াদ তিন মাস। এই তিন মাসের মধ্যে সকলের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সময়মতো সকলকে জানানো হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-এর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার সেল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য বাস মালিকরা গত ১৬ এপ্রিল থেকে সিটিং সার্ভিসের বাস চালানো বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত এর বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। এতে অনেক বাস মালিক সড়কে গাড়ি না নামালে দেখা দেয় পরিবহন সংকট। ব্যাপক সমালোচনার পর ১৯ এপ্রিল বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বিআরটিএ। সে সময় থেকে ১৫ দিন সিটিং সার্ভিস চলতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়। তবে এসব বাসে সরকার নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না বলে জানিয়েছিল বিআরটিএ। তবে সিটিং সার্ভিস থাকবে কি থাকবে না এমন সিদ্ধান্ত নিতে গত ২ মে ৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে বিআরটিএ। কমিটির মেয়াদ ৩ মাস। ২ আগস্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই মাসেই সিটিং সার্ভিস থাকবে কি থাকবে না বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানা গেছে।