Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

খোঁজা হচ্ছে অস্ত্র ও অর্থের যোগানদাতাদের

আব্দুল লতিফ রানা॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ৭, ২০১৭, ০৬:২০ এএম


খোঁজা হচ্ছে অস্ত্র ও অর্থের যোগানদাতাদের

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিহামলার তদন্ত দীর্ঘ এক বছরেও শেষ করতে পারেনি পুলিশ। হামলায় অস্ত্র ও অর্থের যোগানদাতাদের খোঁজ করছেন মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। আর জঙ্গিহামলায় সরাসরি জড়িতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে নিহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান আমার সংবাদকে জানান, মামলার তদন্ত চলছে। আমরা রাজীব গান্ধীকে অ্যারেস্ট দেখিয়েছি। এধরনের মামলার ঘটনা তদন্ত করতে গেলে অনেক তথ্যই পাওয়া যায়।

আর জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদেরকেও গ্রেপ্তার ও শ্যোন অ্যারেস্ট করা হবে। এজন্য মামলার চার্জসিট দিতে আরও বেশকিছু দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি। শোলাকিয়ার হামলার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোর্শেদ জামানের সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার সংবাদকে ব্যস্ততার কথা বলে পরে যোগাযোগ করতে বলে জানান, মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

ফলে এই চাঞ্চল্যকর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগত্র (চার্জসিট) দিতে আরও সময় লাগবে বলে জানান তিনি। তবে মামলার অনেকাংশে তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শোলাকিয়া জঙ্গিহামলার পর সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়। সেইসব অভিযানে এই মামলার অর্থাৎ শোলাকিয়ার মামলার তদন্তের অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরের ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় জঙ্গিহামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধী (৩২) নাম পাওয়া গেছে।

তাকে ২০১৬ সালের ২৯ মে তাকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমা-ে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত রাজীব গান্ধী কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিহামলার ব্যাপারে পুলিশের কাছে অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা এবং হামলার নেপথ্যে কারা কারা জড়িত ছিল তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়া হামলায় নিজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আর রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে এই রাজীব গান্ধী। আর জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিহামলার ঘটনায় আরও কারা কারা জড়িত তাদের নাম ঠিকানা জানিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ।

জানা গেছে, জাপানি নাগরিক ওসি কুনিও রংপুর এলাকায় জঙ্গিহামলায় খুন হন। আর রহমত আলী নামের একজন ধর্মান্তরিত, পঞ্চগড়ের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর, কুড়িগ্রাম জেলার মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী, গাইবান্ধা জেলার তরুণ দত্ত, দেবেশ ও ফজলে রাব্বী, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরে দর্জি নিখিল, পাবনা জেলার নিত্যানন্দ পা-ব, নাটোর জেলায় সুনীল গোমেজ নামের এক খ্রিস্টান, কুষ্টিয়ায় হোমিও চিকিৎসক সানাউল, রাজশাহীতে প্রফেসর রেজাউল করিম ও রাজধানীর গুলশান এলাকায় সিজার তাবেলা হত্যাকা-সহ নব্য জেএমবির জঙ্গিরা সারা দেশে আরও ২৪টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটিয়েছে। এইসব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্য থেকে বাছাই করে দু:সাহসিকদের রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গিহামলার দায়িত্ব পেয়েছিল।

শোলাকিয়ায় জঙ্গিহামলার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোর্শেদ জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের রোজার ঈদের দিন পুলিশের ওপর সরাসরি জঙ্গিহামলা চালায় দুজন যুবক। কিন্তু সেই হামলায় পাঁচজনে অংশ গ্রহণের পরিকল্পনা ছিল। আর এই শোলাকিয়া হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল জঙ্গিনেতা রাজীব গান্ধী। এছাড়া, জঙ্গিনেতা তামিম চৌধুরী, মারজান, সারোয়ান জাহান মানিক ও মেজর জাহিদ একত্রে হামলার পরিকল্পা তৈরি করেছিল। আর এসব জঙ্গিরা নব্য জেএমবির অন্যতম সদস্য ছিল।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেছেন, সারাদেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটানোই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল। জঙ্গিরা শোলাকিয়া ঈদের জামাতের ইমাম ফরিদউদ্দিন মাসউদকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। শোলাকিয়ায় জঙ্গিহামলায় পুলিশ সদস্য আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম নিহত হয়েছেন। আর দুই পক্ষের গোলাগুলির সময় ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামে এক নারী নিহত হন।

সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার হামলার পরিকল্পনা একসঙ্গেই করা হয়েছি। জঙ্গিহামলার আগে রাজধানী ঢাকায় জঙ্গিরা দুই দফা বৈঠক করেছিল। জঙ্গিনেতা রাজীব গান্ধী হামলাকারীদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ডন, খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল ওরফে বাঁধন, রোহান ইমতিয়াজ স্বপন ও শফিকুল ইসলাম ওরয়ে উজ্জ্বলকে দুটি হামলার দায়িত্ব দিয়েছিল।

এরপর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলায় অংশ নেওয়া মেজর জাহিদ রূপগঞ্জে, আকাশ গাজীপুরের পাতারটেকে, তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে, শরিফুল ইসলাম ডন পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়। এছাড়া আবির রহমান শোলাকিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার ত্রিবিদ্যা গ্রামে তাদের বাড়ি। তার বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম। নিহত আবির রাজধানী ঢাকায় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র ছিল। আর ঈদুল ফিতরের দিন জঙ্গিহামলার সময় পুলিশের গুলিতে জঙ্গি শফিউল ইসলাম ওরফে ডন গুরুতর আহত হয়।

এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বছরের ৪ আগস্ট র‌্যাবের একটি দল ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ নিয়ে আসার পথে নান্দাইল এলাকায় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় শফিউল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তার বাবার নাম আব্দুল হাই। দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট এলাকায় তাদের বাড়ি। কিশোরগঞ্জ পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করতে র‌্যাব নিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা য়ায়। কিশোরঞ্জের শোলাকিয়া ঈদের জামায়াতে পুলিশের উপর জঙ্গিহামলার ঘটনায় শফিউল ইসলাম ওরপে ডন, জাহিদুল হক তানিম এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত বছর ১০ জুলাই পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শামসুদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।