Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

১৬ কোটি মানুষের দেশে ময়না তদন্তে চার নারী চিকিৎসক

আফছার আহমদ রূপক॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ১২, ২০১৭, ০৭:৫২ এএম


১৬ কোটি মানুষের দেশে ময়না তদন্তে চার নারী চিকিৎসক

দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রায় অর্ধেকই নারী। অথচ এই নারীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন কারণে মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগের লাশের ময়না তদন্ত করছেন পুরুষ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এর মূল কারণ নারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন মাত্র ৪ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজে তারা কর্মরত আছেন।

আর বাকি ২৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে নারী ও পুরুষের মৃতদেহের ময়না তদন্তে আছেন পুরুষ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যেসব মেডিকেল কলেজে নারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন, সেখানেও পুরুষ চিকিৎসকরা জটিল এবং জরুরি প্রয়োজনে নারীদের লাশের ময়না তদন্ত করছেন। কেবল লাশের ময়না তদন্তই নয়, কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলেও তার আলামত পরীক্ষা করছেন বেশিরভাগ পুরুষ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

এদিকে সরকারি মেডিকেল কলেজে ৪ জন নারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ থাকলেও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একজনও নেই। শুধু নারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞই নন, নেই নারী ডোমও। তাই নারী চিকিৎসক নারীদের লাশের ময়না তদন্ত করলেও লাশ কাটাছেঁড়া করতে তাকে সহায়তা করছেন ওই পুরুষ ডোমই। কাজেই নারীর গোপনীয়তা আর কোনোভাবেই রক্ষা হচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন নারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজে থাকলে অন্তত নারীদের ধর্ষণের আলামত পরীক্ষা তো আর পুরুষ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের হাতে দিতে হতো না।

এদিকে পুরুষ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও তীব্র সংকট। সারাদেশে ৩১টি সরকারি মেডিকেল কলেজে বড়জোর ৩০ জন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। অথচ প্রয়োজন কমপক্ষে ১৫০জন। প্রায় ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একজন করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও সেসব মেডিকেল কলেজ ব্যক্তিমালিকানায় হওয়ায় ময়না তদন্ত ও ধর্ষণের আলামত পরীক্ষা করার নিয়ম নেই। গাইনি এবং অন্যান্য ক্লিনিকেল বিষয়ে প্রবল আগ্রহ থাকলেও ফরেনসিক মেডিসিনে নারী ও পুরুষদের আগ্রহ কম কেন জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, অনাগ্রহের মূল কারণ এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার পর প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কম। মরা মানুষের চিকিৎসক মনে করে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী আসতে চায় না। মনে করে এরা তো মরা মানুষের ডাক্তার, তাই মরলে তাদের কাছে যাবনে। তাছাড়া অন্যদেশে প্রতিটি ময়না তদন্তের জন্য আলাদা প্রণোদনা বা ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে সেই সুবিধা নেই।

এদিকে ফরেনসিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞদের ২৪ ঘণ্টাই দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং ময়না তদন্তের পর নিজের রিপোর্টের সপক্ষে আদালতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যাও দিতে হচ্ছে। তখন ময়না তদন্তের রিপোর্ট যাদের বিরুদ্ধে যায় তাদের হাতে লাঞ্জিত হওয়ারও শঙ্কা থাকে। কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হয় না। এত ঝামেলার পর নারী তো বটেই, পুরুষ চিকিৎসকরাও ফরেনসিক বিষয়ে জীবন গড়তে চান না। তার মতে প্রতিটি ময়না তদন্তে আলাদা প্রণোদনা বা ভাতা দেওয়া হলে এবং আদালতে না যাওয়ার রীতি চালু করলে এ পেশায় নারী ও পুরুষ চিকিৎসকদের আগ্রহ আরো বাড়ত বলে মনে করেন তিনি। তবে সোহেল মাহমুদ সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান।