Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

আ.লীগ এমপিদের বিকল্প হওয়ার দৌড়ে শতাধিক তরুণ নেতা

নূরে আলম জীবন॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ১৩, ২০১৭, ০৬:০৫ এএম


আ.লীগ এমপিদের বিকল্প হওয়ার দৌড়ে শতাধিক তরুণ নেতা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী তরুণ নেতাদের অনেকেই এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক তরুণ নেতা আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপিদের বিকল্প হতে চান। এখন তারা বর্তমান এমপিদের থেকে অনেকটা বেশি আলোচিত এবং বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে তরুণ নেতাকর্মী ও ভোটারা তাদের দিকেই ঝুঁকছে বেশি। ফলে এসব আসনে বর্তমান এমপিরা অনেকটা বেকায়দায়। মনোনয়ন দৌড়ে বর্তমান প্রার্থীদের সামনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাড়িয়েছেন এসব তরুণ নেতা।

মনোনয়নপ্রত্যাশী আলোচিত তরুণ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সচিব আব্দুল মালেক (পটুয়াখালী-১), সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪), ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৫), দৈনিক আমার সংবাদ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা-২ আসন। এ আসনের জননন্দিত নেতা, গণমানুষের মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ, শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রসৈনিক হাশেম রেজা। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের উন্নয়নে ইতোমধ্যে ব্যাপক কাজ করেছেন তিনি। প্রতিদিনই তার কাছে ছুটে আসছেন এলাকার মানুষ। সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন হাশেম রেজা। তার এ মানবতাময় কাজে তরুণসমাজ তার বিকল্প হিসেবে আর অন্য কাউকেই দেখছে না।

বর্তমান এমপিদের আলোচনায় আরও আছেন কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ (নরসিংদী-৬), নেত্রকোনা থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সিলেট থেকে মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, কুমিল্লা-১ আসন থেকে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অন্তর্গত ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান আনিস, কুমিল্লা-৮ আসন থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হাবিবুল্লাহ্ বাহার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সদস্য খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ফরিদপুর-১ আসনে ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক ‘এই সময়’ সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, পিরোজপুর-১ আসনে আলোচিত হয়ে উঠেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা ও সাবেক ছাত্রলীগনেতা সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।

আলোচিত অন্য তরুণ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, হাসান আলী (সিরাজগঞ্জ-১), হাবিবুর রহমান স্বপন, চয়ন ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৫), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক ছাত্রলীগনেতা এএইচএম মাসুদ দুলাল, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪)।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জন নওগাঁ-৫ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নড়াইল-১ আসন কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নারী সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১) ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তরুণদের মাঝে, শাহে আলম (বরিশাল-২), মনিরুজ্জামান মনির (ঝালকাঠি-১), শফি আহমেদ (নেত্রকোনা-৪), অজয় কর খোকন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ঢাকার আসনগুলোতে নতুনদের মধ্যে আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন পনিরুজ্জামান তরুণ (ঢাকা-১), ড. আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম রেজা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও প্রবীণদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তাকে চাইছে বলে জানান তিনি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাউসার, দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট (ঢাকা-৮), সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন (ঢাকা-১৪), যুবলীগের মঈনুল হোসেন খান নিখিল, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু (ঢাকা-১৫)।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেকোনো একটি আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। আর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা-১৩ আসনে।

এছাড়া আলোচনায় আছেন শেখ সোহেল রানা টিপু (রাজবাড়ী-১), মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে তুমুল আলোচনা রয়েছে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বারবার বিএনপি সরকারের নির্যাতনের শিকার গোলাম সারওয়ার কবীর। রূপালী ব্যাংকের পরিচালক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহম্মেদ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৫ (নবীনগর), নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩)। সাবেক ছাত্রনেতা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান (পিরোজপুর-৩), নারী সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার লিটা, এমদাদুল হক (ঠাকুরগাঁও-৩), জামালপুরের ইসলামপুর থেকে নারী সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ, বিশ্বনাথ সরকার বিটু (রংপুর-২), সাফিয়া রহমান (রংপুর-৩), রাশেক রহমান, জাকির হোসেন সরকার (রংপুর-৫), কামাল আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট মমতাজ (নীলফামারী-২), মাজহারুল হক প্রধান, আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়-১), আব্দুল মালেক চিশতি (পঞ্চগড়-২)।

মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা সবাই নিজের যোগ্যতা ও বিজয়ের ব্যাপারে আস্থাশীল। তারা বলছেন, এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের কারণে তাদের একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলে তারা নিজের আসনটি দলীয় সভাপতিকে উপহার দিতে পারবেন।
নিজের মনোনয়নের প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের প্রার্থী হাশেম রেজা বলেন, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। রাজনীতি জনগণের কল্যাণের জন্য, তাই আগামী একাদশ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে সেই কল্যাণেই কাজ করবো। আমি সেই লক্ষ্যে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। দলের কাছে মনোনয়নপ্রত্যাশী। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

মনোনয়নের জন্য দলের সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের সঙ্গে কাজ করছি। নেত্রী আমাকে মহানগরে বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। এখন যদি তিনি আমাকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেন, আশা করি আমি তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব। তবে সবকিছুই নেত্রীর ওপর নির্ভর করবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট আমার সংবাদকে বলেন, রাজনীতি করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের কল্যাণ করা। একজন সংসদ সদস্যের অনেক কিছুই করার ক্ষমতা থাকে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে অবশ্যই আমি নির্বাচন করবো।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম রেজা আমার সংবাদকে বলেন, এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়। আর সেই পরিবর্তনে বিকল্প হিসেবে আমাকে তারা পছন্দ করেছে। তারা চায় আমি নির্বাচন করি। তাই দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে এলাকার উন্নয়নে আমি নির্বাচন করবো এবং জয়ী হতে পারবো।

মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা গোলাম সারওয়ার কবীর আমার সংবাদকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন, জাতীয় ইস্যুর উপর নির্ভর করে। সব কিছু বিবেচনা করেই দল ঠিক করবে কারা মনোনয়ন পাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী নির্বাচনটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমার আসনের ৬০ ভাগ তরুণের ছোঁয়া আমার গায়ে লেগেছে এবং তাদের গায়ে আমার ছোঁয়া লেগেছে। মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিবিড়। তারা যেকোনো প্রয়োজনেই আমাকে পাশে পায়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, কুমিল্লা-৮ আসনের মানুষের কল্যাণে আমি সব সময় আছি। আগামী নির্বাচনে দল যোগ্য তরুণদের মূল্যায়ন করবে মনোনয়নে, আমি যদি মনোনয়ন পাই তাহলে দলকে এ আসনটি উপহার দিতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী নির্বাচনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দলের হাইকমান্ড যাকেই মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।

ব্যারিস্টার জাকির আহম্মেদ বলেন, আমি এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি, তরুণদের মাঝে সচেতনতা ও মাদকমুক্ত নবীনগর করতে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করে আসছি। শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবো।