Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কমেছে মোটা চালের দাম

ওমর ফারুক॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ১৫, ২০১৭, ০৬:১০ এএম


কমেছে মোটা চালের দাম

দেশে সম্প্রতি সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বেশ কয়েকটি হাওর অঞ্চলের বেশিরভাগ ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়ে যায় এবং দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে সরকারি মনিটরিং জোরদার হওয়ায় দেশে বর্তমানে পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছে এর প্রভাব কিছুটা হলেও পড়ছে খুচরা বাজারে।

তবে রাজধানীর কিছু কিছু মহল্লাতে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল। মহল্লাবাসীর অভিযোগ, সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কারণে পাইকারী ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমলেও তেমন প্রভাব পড়েনি মহল্লাতে। বিক্রিতারা বলছেন, আগে থেকে মজুদ করে রাখা চাল শেষ না হাওয়া পর্যন্ত আগে দামে তাদেরকে বিক্রি করতে হচ্ছে। মজুদকৃত চাল শেষ হলে চালের বাজার স্বাভাবিক হবে।

তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাপে পড়ে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা এবং সরু চালের দামও ১ থেকে ২ টাকা কমানো হয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মুগদা, মানিকনগর, খিলগাঁও বাজারসহ কয়েকটি বাজার পর্যবেক্ষণ করে দামের এমন তারতম্য সর্ম্পকে জানা যায়। এদিকে গত সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা স্বর্ণা চাল ২ টাকা কমে প্রতি কেজি ৪১ টাকা, পারিজা চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৪৪ টাকায়। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারি নুরে আলম মোটা চাল প্রসঙ্গে আমার সংবাদকে জানান, গত মাস থেকেই মূলত মোটা চালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। তবে মোটা চাল বেড়ে যাওয়ার কারসাজির পেছনে জড়িত ছিল মূলত মিলমালিকেরা এবং দালালেরা। মিল মালিকেরা সুযোগ নিয়েছে। গোডাউনে চাল মজুদ রেখেছে কিন্তু কোন চাল বাজারে প্রবেশ করতে দেননি। তারা ভেবেছে দেশে চাল সংকট সৃষ্টি হলে তখন চালের দাম বেড়ে যাবে আর এ সুযোগে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করবে এবং অধিক মুনাফা অর্জন করবে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনাই সত্যি হয়েছে। দেশে মোটা চাল নিয়ে অস¦স্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে নিজেরা অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে পাইকারি বাজার থেকে। আর পাইকারি বাজার এর দায় চাপিয়েছে খুচরা বাজারে। আর শেষ পর্যন্ত এ ভার বহন করতে হলো খুচরা বাজার এবং জনসাধারণ অর্থাৎ ক্রেতাদের।

এদিকে রাজধানীর বাজারে মিনিকেট মানভেদে (ভালো) ২ টাকা কমেছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। উন্নত মানের নাজিরশাইল ৫৪ টাকা, বি আর২৮ ৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৭৪ থেকে ৭৬ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, বাসমতি ৫৪ টাকা, এবং পোলাও (নতুন) চাল ৮০ টাকা এবং পুরাতন ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম কমার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা আবার অন্যকথা বলছেন। আমার সংবাদকে জানান, অবৈধভাবে চাল মজুদ করায় ১৬ হাজার মিল মালিকদের আগামী ৩ বছরের জন্য ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হয়েছে এমন খবরের পর দেশের সকল মিল মালিকদের মনে আতংক সৃষ্টি হয়েছে যার কারণে মোটা চালের দাম ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে। তারা বলেন খাদ্য মন্ত্রী বলেছেন বাজারে চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার পর থেকেই চাল মজুদ করেছিল। আমরা যে ক্রয়মূল্য (৩৪ টাকা) দিয়েছিলাম, বাজারের মূল্যের সঙ্গে বিরাট ফারাক ছিল। ফলে আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি।

এদিকে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, যেসব মিল মালিকরা অসাধুভাবে চাল মজুদ করেছে তাদের আমরা তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা আর চাল কিনব না। আর টানা কয়েক বছর বাম্পার ফলনের কারণে টানা কয়েক বছর চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারি হিসাবে ৬ লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হয় হাওরে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করলেই সরকার উগ্যোগী হয়। সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য দরপত্র দেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।

অন্যদিকে, ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ভারতীয় চালের আমদানি ও ভিয়েতনামের চালবাহী জাহাজের আগমনের খবরে মোটা চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছে। হাওরে বন্যার অজুহাতে অসাধু দেশী চালকল মালিকরা চাল মজুদ করে সংকট করতে চেষ্টা করেছিলো। দেশের হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার পর অস্থির হয়ে উঠে দেশের মোটা চালের বাজার। তখন ৩২ টাকার মোটা চালের দাম হয়ে যায় ৫০ টাকা। এই পরিস্থিতিতে দাম কমাতে চাল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে শুল্ক কমিয়ে দেয় সরকার। দেশীয় চালের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা ভারতীয় চালও। আর সরকারের এ উদ্যোগের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের পাইকারি বাজার ও খুচরাবাজারে।

তবে রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরলে খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করেন, যেখানে ইমপোর্ট হয় সেখানেইতো দাম অনেক বেশি আর আমরাতো খুচরা বিক্রেতা। ভোক্তাদের প্রয়োজনে ৩ থেকে ৫ কেজি চাল সংগ্রহ করি আমরা। তবে যাদের ব্যবসা একটু বড় তারা ৬ থেকে ৯ বস্তা পর্যন্ত চাল ক্রয় করে। দাম বাড়ায় পিছনে মূলত মিলমালিক এবং চাল আড়ৎদারদের দায়ী করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে রাজধানীর খুচরা এবং পাইকারি বাজারের মধ্যে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের তারতম্য দেখা যায়। প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারের নূন্যতম ১০ টাকা বেশি। কোন একটি সবজি পাইকারি বাজারে দাম ৫০ টাকা হলে খুচরা বাজারে তার দাম পড়ে নিম্নে ৬০ টাকা অর্থাৎ ১০ টাকা করে বেশি দামে বিক্রেতা পণ্য বিক্রি করে।