Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

স্মার্টকার্ড নিয়ে আনস্মার্ট ইসি

তবিবুর রহমান॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ১৮, ২০১৭, ১১:৩৭ এএম


স্মার্টকার্ড নিয়ে আনস্মার্ট ইসি

বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় গত বছর ৩ অক্টোবর উন্নতমানের জাতীয় পরিচয় (স্মার্টকার্ড) বিতরণ শুরু হলেও নানা জটিলতার কারণে স্মার্টনেস-এর প্রমাণ দিতে পারেনি ইসির কর্মকর্তারা।

চুক্তি অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার কথা থাকলেও বিগত (অক্টোবর-জুলাই) ৮ মাসে মাত্র ২৪ লাখ ২০ হাজার ৯১৪ ভোটারের কার্ড বিতরণ করছে সংস্থাটি। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। হিসাব অনুযায়ী ৫ মাসে সাত কোটি ৮০ লাখ কার্ড তৈরি এবং প্রায় ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬টি কার্ড বিতরণ করতে হবে ইসিকে।

এমন অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়লে মুখথুবড়ে পড়বে বিতরণ কার্যক্রম এমন ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ অবস্থাতেই আজ স্মার্টকার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) হাতে পাচ্ছেন খুলনার ভোটাররা। খুলনা মহানগরীতে ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৪ জন। আর জেলার নয় উপজেলায় ভোটার আছেন আরও প্রায় সাড়ে ১০ লাখ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ঢাকা সিটিতে গত বছর ১ নভেম্বর থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্মার্টকার্ড বিতরণ হয়েছে ২১ লাখ ১২ হাজার ৭৫১টি। চট্টগ্রাম সিটিতে ১৬ মার্চ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্মার্টকার্ড বিতরণ হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৩টি।

রাজশাহী সিটিতে ২ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত কার্ড বিতরণ হয়েছে ৭৪ হাজার ২৩১টি। এদিকে বরিশাল ১৩ জুন থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত স্মার্ট বিতরণ হয়েছে ২ হাজার ৫৪৭টি। সবমিলে সারা দেশে স্মার্টকার্ড বিতরণ হয়েছে ২৪ লাখ ২০ হাজার ৯১৪টি। সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৯ কোটি নাগরিকের হাতে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয় (স্মার্টকার্ড) তুলে দেয়ার জন্য ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান এ প্রকল্প চালু হলেও সাত বছরে কার্ড বিতরণে অগ্রগতি হয়েছে শতকরা হিসাবে মাত্র দুই দশমিক ৫৫ ভাগ। জুলাই পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্পটির মেয়াদ আছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্প পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার তেমন মিল ছিল না। ফলে তৈরি করা কার্ড বিতরণের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সমন্বয়ের অভাব ছিল স্পষ্ট। এছাড়া কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অভাব ছিল প্রকট। শেষ পর্যন্ত যন্ত্রের অভাবের কারণেই কাজের গতি কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে পুরো প্রকল্পের ওপর। এব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের উপ-পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে স্মার্টকার্ড বিতরণ প্রকল্পের মেয়াদ।

এ প্রকল্প শুরুতে নানা জটিলতার কারণে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এখন তেমন সমস্যা নেই। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি দ্রুত স্মার্টকার্ড বিতরণ শেষ করার জন্য। ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তখনই বলা যাবে আর কতদিন লাগবে কার্ড বিতরণ করতে। তিনি বলেন, কমিশন অনুমোদন দিলে ২ হাজার ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ২ হাজার আইরিশ স্ক্যানার কিনতে পারব। এসব যন্ত্র কেনা হলে সব জায়গায় একই সঙ্গে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ শুরু করতে পারব।

নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের নয় কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সালে নেয়া হয় ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে আইডিইএ প্রকল্প। পরে প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের কার্ড দেয়ার কথা রয়েছে। জ্নু মাস পর্যন্ত কার্ড বিতরণে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র দুই দশমিক ৫৫ ভাগ। আর্থিক অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক। প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮৩৩ কোটি ২২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ৭৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাকি টাকা সরকারি তহবিলের।

চলতি বছর বরাদ্দকৃত এডিপির অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ২২ শতাংশ। আরও জানা গেছে, স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিস (ওটি) নামে এক কোম্পানির সঙ্গে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। ওই চুক্তির অধীনে নয় কোটি কার্ড উৎপাদন ও বিতরণের কথা রয়েছে।

দফায় দফায় পিছিয়ে সেই কার্ড বিতরণ শুরু হয় ২০১৬ সালে। চলতি মাসে এ কোম্পানির সঙ্গে ইসির চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নয় কোটি কার্ডের মধ্যে এ কোম্পানিটি এ পর্যন্ত ৫ কোটি ৮০ লাখ ব্ল্যাংক কার্ড আমদানি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে এ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন নাকি বাতিল করা হবে সে বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়ার চিন্তা করছে কমিশন।