Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

দায়ী কৃষি সম্প্রসারণের ‘বালাইনাশক’ বিভাগও

আব্দুল লতিফ রানা॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ১৮, ২০১৭, ০৬:৪১ এএম


দায়ী কৃষি সম্প্রসারণের ‘বালাইনাশক’ বিভাগও

সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বালাই নাশক বিভাগ চিকুনগুনিয়া নামক মশার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছে কোন তথ্য নেই। অথচ দুর্নীতিবাজ বালাইনাশক বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাগণ দুর্নীতির মাধ্যমে মশা মারার কয়েল উৎপাদনকারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কেমিক্যাল আমদানির লাইসেন্স দিয়ে আসছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। সারাদেশে চিকুনগুনিয়ার মহামারির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বালাইনাশক বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষন শাখার পরিচালক অমিতাব দাস আমার সংবাদকে বলেন, চিকুনগুনিয়া মশার বিষয়ে আমাদের কাছে কোন প্রকার তথ্য নেই। আর আমাদের এখানে চিকুনগুনিয়া নিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, সারাদেশে মহামারি আকার ধারনকারী চিকুনগুনিয়া মশা, এডিস মশা নিয়ন্ত্রক করতে মশার কয়েল উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাত এবং কীটনাশক প্রয়োগের জন্য গবেষণা ও নিয়ন্ত্রন করার জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বালাইনাশক’ বিভাগ, পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত্ব বিভাগ ও বিএসটিআই। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বালাইনাশক ও রোগতত্ত্ব বিভাগের ছাড়পত্র ব্যতিত বিএসটিআই কোন প্রকার অনুমোদন দেয়া হয় না বলে জানা গেছে। বালাইনাশক ও রোগতত্ত্ব বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কোন প্রকার নজরদারী না থাকায় মশা মারার কয়েল উৎপাদনকারী বৈধ প্রতিষ্ঠানসমুহ গ্রাহকদের নজর কাড়ার জন্য অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন মাত্রার নকডাউন কীটনাশক ব্যবহার করে বাজারজাত করে আসছে।

আর এসব কেমিক্যাল মশা গ্রহণ করতে করতে মশা রেজিষ্ট্যান্স হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, কৃষি জমিতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তাদের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন কয়েল কোম্পানী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর উৎপাদনের নামে আমদানিকারকগণ লাইন্সেস নিয়ে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ফলে সিটি করপোরেশন চিকুনগুনিয়া মশা নিধনে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করছে তাতে মশা মরাতো দুরের কথা মশার ডিম্বাশয়ও ধ্বংস করা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এদিকে বালাইনাশক আইন, ২০১৭’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত ২০ মার্চ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন হয়। বেঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

সচিব বলেন, ‘পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্সকে বাংলায় অনুবাদ করে বালাইনাশক আইন হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি। নতুন আইনে অপরাধগুলোর ধরণ একই রয়েছে, তবে কোনো কোনো জায়গায় শাস্তি একটু বাড়ানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর ২০০৭ ও ২০০৯ সালে সংশোধন করে শাস্তি বাড়ানো হয়েছে।’ রেজিস্ট্রার্ড ব্র্যান্ডের কোনো বালাইনাশক বিক্রি বা বিক্রির জন্য উন্মুক্ত, মজুদ বা বিজ্ঞাপন দিলে যার ট্যাগ, লেবেল বা প্যাকেজ চিহ্নিত ব্র্যান্ডের প্রকৃতি, উপাদান বা গুণাগুণ যুক্ত না হলে এবং বিজ্ঞাপনে বালাইনাশক মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলে জানান তিনি। আর ‘খসড়া আইন অনুযায়ী প্রথমবার এসব অপরাধ করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, একই অপরাধ আবার করলে জরিমানা এক লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। আগে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করার ক্ষেত্রে জরিমানা ছিল ৭৫ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ জরিমানা ছিল এক লাখ টাকা।’ আর বিভিন্ন অপরাধের জন্য কারাদন্ড আগের মতোই এক বছর ও দুই বছর রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের আগে এনোফিলিস মশার জীবানু থেকে ম্যালিরিয়া জ্বর সারাদেশে ভয়াবহতা ছড়ায়। এরপর মশা মারার জন্য হেলথ্ ইন্সপেক্টর দ্বারা ডিউটি পাউডার ছিটানো হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে কোন সরকারই মশা মারার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পরে ২০০৮ সালে অজ্ঞাত রোগে জ্বর হলে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ এডিস মশার কামড়ে জ্বর হচ্ছে বলে আবিষ্কার করেন। এরপর কিছুদিন মশা মারার কার্যক্রম শুরু হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এখন সেই এডিস মশাই চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে রাজধানীসহ সারাদেশে আবির্ভূত হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ড. আলাউদ্দিন জানান, রাজধানীতে আগে খোলা খাল ও ড্রেন ছিল। এখন সেই ড্রেন বা খালগুলো নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে তা কতিপয় ব্যক্তিরা বরাদ্দ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে দখলে নিয়েছে। এজন্য সেখানে এখন আর পানি প্রবাহিত হয় না। আর ড্রেন, ডোবা নালা, খাল, রাস্তাঘাট, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে এসব জায়গায় এখন মশা মাছি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া, মশার কেমিক্যাল রেজিষ্ট্যান্স হচ্ছে। এ নিয়ে নতুন কোন পরিকল্পনা না থাকায় রেজিষ্ট্যান্স হওয়া কেমিক্যাল ছিটানো লোক দেখানো ও কোটি কোটি টাকার অর্থ অপচয়। আর সিটি করপোরেশন যে সব কীটনাশক ব্যবহার করছে, তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। কেমিক্যাল রেজিষ্ট্যান্স হওয়ার জন্য মশার কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ নষ্ট, ডোবা-নালা ও জলাধারে প্রবাহ না থাকা উচ্চ মাত্রার কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করা।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ চিকুনগুনিয়া মহামারির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে সঠিক নজরদারী ও দুর্নীতমুক্ত করতে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় এনে অবৈধভাবে নেওয়া মশা মারা কয়েলসহ কেমিক্যাল বাজারজাতকারীদের সকল লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। আর অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে উৎপাদন এর নামে আমদানী করা কেমিক্যাল খুচরা বাজারে বিক্রয় বন্ধ করার দাবি জানান। এছাড়া, যে সকাল অবৈধ উৎপাদনকারী অবৈধভাবে উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষতিপূনে উচ্চ আদালতের রুল দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।