Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

তবুও নির্বাচন করতে রাজি রাজশাহী ও সিলেটের মেয়র

জাকির হোসেন॥প্রিন্ট সংস্করণ

আগস্ট ৬, ২০১৭, ০৫:৪৯ এএম


তবুও নির্বাচন করতে রাজি রাজশাহী ও সিলেটের মেয়র

নির্বাচনের আর বাকি ১ বছরের মতো। কিন্তু গত চার বছরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বরখাস্ত ছিলেন ২৭ মাস। আর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এ সময়ে বরখাস্ত ছিলেন ২৩ মাস। বিএনপি সমর্থিত এ দুই মেয়র এই দীর্ঘ সময় দায়িত্বের বাইরে থাকায় ঠিকমতো উন্নয়নকাজ করার সুযোগ পাননি। তবে বিএনপি মনোনয়ন দিলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নেন বিএনপিনেতা আরিফুল হক চৌধুরী। আর এক বছরের মতো বাকি আছে তার মেয়াদকাল। প্রায় চার বছরের মধ্যে ২৭ মাস জেল খেটেছেন। জেলে গেছেন ৫ থেকে ৬ বার। শপথ নেয়ার পর মাত্র ১২ থেকে ১৪ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা এবং সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় গ্রেনেডহামলা মামলায় তিনি এতদিন জেল খেটেছেন। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে জানিয়ে সিলেটের মেয়র বলেন, আমি কাজ করার কোনো সুযোগ পাইনি। মেয়র হিসেবে যে পরিমাণ সহযোগিতা সরকারের কাছে পাওয়ার কথাছিল তাও পাইনি। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা, ষড়যন্ত্র, বিশেষ করে বিরোধী দলকে ঘায়েল করার সংস্কৃতি থেকে, রাজনৈতিক নোংরামি থেকে যদি বেরিয়ে আসা না যায় তাহলে উন্নয়ন হবে না। পরস্পরের কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ না হলে দেশ আগাবে না।

দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণ যাকেই নির্বাচিত করুক তাকে কাজ করতে দিতে হবে। প্রতিহিংসার কারণে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া যাবে না। মামলা হলেই তাকে সরিয়ে দেয়া যাবে না। পুরো বিচার সম্পন্ন হওয়ার পর যে রায় হয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে মামলার চার্জশিট গ্রহণ করলেই জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দেয়া যাবে না। সরিয়ে দিলে জনগণের ভোটের কি মূল্য রইল।

এত কিছুর পরও আগামী সিটি নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তার দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন। এদিকে ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ২১ জুলাই মেয়র হিসেবে শপথ নেন বিএনপিনেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রাার্থী ও বিদায়ী মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৪৫ মাসের মধ্যে ২৩ মাসই বরখাস্ত অবস্থায় ছিলেন রাজশাহীর এই মেয়র। কারাবন্দি ছিলেন এক বছরের বেশি সময়। ২০১৫ সালের ৭ মে প্রথমবার বরখাস্ত হন। গত ২ এগ্রিল আদালতের রায়ে পদ ফিরে পেয়ে দায়িত্ব গ্রহণের আট মিনিটের মাথায় নাটকীয়ভাবে দ্বিতীয়বারের মতো বরখাস্ত হন।

২০১৬ সালের ১০ মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই ৩০ এপ্রিল দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে যান মেয়র বুলবুল। মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার একঘণ্টার মধ্যেই তাকে ফের বরখাস্তের আদেশ জারি করে সরকার। উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে ২৩ মাস পর দায়িত্বে ফেরেন তিনি। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতাল চলকালে ৯টি মামলার আসামি করা হয় মেয়রকে। এর মধ্যে ৪টি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যামামলাও রয়েছে।

তবে একের পর এক মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক ছিলেন বুলবুল। অবশেষে গত বছরের ৭ মে পলাতক থাকা অবস্থায় তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গত ১০ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি এমদাদুল হক ও বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়ার যৌথ বেঞ্চ বুলবুলকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা মন্ত্রণালয়ের ও নির্দেশ অবৈধ বলে ঘোষণা করেন।

মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে ঠিকভাবে কাজ করতে দেয়া হয়নি। অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, কারাগারে নেয়া হয়েছে। তবে দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি আগামী সিটি নির্বাচনে অংশ নেবেন।