Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

বিএনপি নেতাকর্মীদের আতঙ্ক কাটছে

আফছার আহমদ রূপক॥প্রিন্ট সংস্করণ

আগস্ট ১০, ২০১৭, ০৫:৩৩ এএম


বিএনপি নেতাকর্মীদের আতঙ্ক কাটছে

বিএনপির ঘরে ঘরে হামলা, মামলা, হত্যা ও গুমের যে আতঙ্ক ছিল তা কাটতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন নেতারা। তাই আন্দোলনের কথা এলেই নেতাকর্মীরা আর আগের মতো রাজপথে নামতে ভয় পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ঘর থেকে বেরিয়ে সাহস নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মোকাবিলাও করেছেন।

বিএনপিনেতারা বলছেন, মাঠে নামলেই পরবর্তীতে গুমের টার্গেট হওয়ার যে ভয় ছিল এখন আর তা করেন না। যদিও দেশে এমন পরিস্থিতি নেই। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনও ভয় বা আতঙ্ক নেই বলে মনে করছেন। আমার সংবাদকে তিনি বলেন, বিএনপিনেতাকর্মীরা এখন আর ভয়ে নেই। সহায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। তবে আন্দোলনের আগে সরকারের সঙ্গে সহায়ক সরকার নিয়ে সংলাপে আগ্রহী।

তার মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এজন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার অত্যন্ত আবশ্যক। দলের চেয়ারপারসন লন্ডন থেকে দেশে ফিরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করবেন। সেই অপেক্ষাতেই আছেন নেতাকর্মীরা। আন্দোলন করতে ভয় বা আতঙ্কের খবর ঠিক নয়। বরং দেশের প্রতিটি এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামতে প্রস্তুত এবং তাদেরকে যথেষ্ট সাহসী ও উজ্জীবিত দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির ঘর গোছানোর কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপি এখন বেশ শক্ত অবস্থানে। তবে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা আমার সংবাদকে বলেন, সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে রাজপথে নামা খুবই জরুরি। কিন্তু কি করব বলুন? রাজপথে নামলেই তো হয় গ্রেপ্তার হতে হবে, না হলে গুমের টার্গেট হতে হবে। পাশাপাশি সরকারি দলের হামলার শঙ্কা তো আছেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে বিএনপি ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে একটানা তিন মাস অবরোধ কর্মসূচি দিয়েও সফল হতে পারেনি শুধু ভয়-আতঙ্কের কারণে। রাজপথে না নেমে গোপনে পিকেটিং করেছিল। ফলে পুরো আন্দোলনই ফ্লপ হয়েছিল। এখনও একই আতঙ্ক আছে।

এ অবস্থায় আন্দোলন ডাকা হলেও ফলাফল হবে গত আন্দোলনের মতোই। তাই নেতাকর্মীরা গা বাঁচিয়ে চলতেই বেশি পছন্দ করছে। তবে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি বিদেশিদের মন জয় করে বর্তমান সরকারকে চাপে রাখতে পারেন এবং তখন আন্দোলনে নামা হয় তাহলে সফলতা আসতে পারে। আন্দোলন চাঙা হওয়া এবং নেতাকর্মীদের আতঙ্ক দূর হওয়া অনেকটা বুঝা যাবে খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর। তিনি কি বার্তা নিয়ে আসবেন- সেব্যাপারে নেতাকর্মীরা হিসাব-নিকাশ করছে।

এদিকে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতাকর্মীর গ্রেপ্তারভীতির কারণে রাজপথের বদলে বক্তৃতা ও বিবৃতিকেই বেছে নিয়েছে বিএনপি। চলতিবছর দলটি এ কৌশলেই চলবে বলে একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন। এসব নেতা বলেছেন, রাজপথে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মুখোমুখি হয়ে লড়াই করার মতো শক্তি ও সাহস কোনোটাই নেই বিএনপির। তারা বলেন, আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার ইস্যু এসেছে কয়েকবার, তবুও আন্দোলন না হওয়ার কারণ পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের ভয়। আর এখন তো এই ভয় আরও কাবু করে ফেলবে। আন্দোলন করে গ্রেপ্তার হয়ে প্রিজনভ্যানে গরমে সিদ্ধ হতে নেতাকর্মীদের কে চাইবে বলুন।

তাছাড়া যে নেতারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন, তাদের অনেকেই নানা রোগে কাবু। তাদের বয়সও ৬০ বছরের বেশি। তাই বুড়ো বয়সে জেলের ঘানি টানতে শরীর যে মানায় না। এদিকে বিএনপির বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী আমার সংবাদকে বলেছেন, তারা তো আওয়ামী লীগ সরকার পতন বা অন্য যেকোনো ইস্যুতে আন্দোলন করতে চান। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা চান না। তবে একথাও ঠিক যে, কর্মীদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। সবথেকে বেশি ভয় পুলিশকে। পুলিশের ভূমিকা এমন যে, তারা যেন সরকারি দলের কর্মী। আওয়ামী লীগের দলীয় অনুগত হওয়ায় পুলিশের সামনে দাঁড়াতেই পারছেন না নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের মনে এই জেল, হামলা, মামলা ও পুলিশের প্রতি ভয় শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচির ব্যর্থতা দিয়ে। এরপর এই ভয় দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকে ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের একবছর পূর্তির দিন (৫ জানুয়ারি) গণতন্ত্র হত্যা দিবস নাম দিয়ে ডাকা বিএনপির অবরোধ ফ্লপ হওয়ার পর থেকে। এক টানা তিন মাস অবরোধ চলাকালে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীকে রাজপথে অবরোধ করতে দেখা যায়নি। অথচ আন্দোলনের নাম ছিল অবরোধ। তখন-এখন শরিক দল জামায়াত-শিবিরের চিরচেনা চেহারারও দেখা পাওয়া যায় না।

তবে ওইসময় এই যুদ্ধাপরাধী দলটির দুয়েকটি চোরাগোপ্তা হামলার খবর মিডিয়ায় প্রকাশ হতে দেখা গেছে। আর শরিক অন্য ১৮ দলের তো অস্তিত্বই ছিল না। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের এই রূপ এখনও অব্যাহত। চার বছর ধরে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের দুয়েকটি আলোচনাসভা ও মাজার জিয়ারত করেই কর্তব্য শেষ হচ্ছে। জিয়ার জন্মদিনে দলীয় চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পই একটু উল্লেখ করার মতো। সাংগঠনিক এ অবস্থায় বিএনপির শেষ ভরসা আগামী জাতীয় নির্বাচন। আন্দোলনমুখী না হয়ে দলটি তার শরিকদের নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালের পুরোটাই প্রস্তুতিতে কাজে লাগাবে দলীয়-নেতাকর্মীদের।

পুলিশকে ভয় পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে ভয় পাচ্ছে না। কিছুদিনের মধ্যেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার পদত্যাগ না করলে এবং সহায়ক সরকার দাবি মানা না হলে আন্দোলন করবে বিএনপি। তখন দেখা যাবে সত্যিই দলটির নেতাকর্মীর সাহস আছে কি না এবং পুলিশকে ভয় করছে নাকি, পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীকে ভয় পায়। তিনি বলেন, তবে একথা ঠিক যে পুলিশ কারণে-অকারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুমও হয়েছে।

বিএনপিনেতা এই আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করলেও দুদফায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে আট বছরের অধিক সময়ে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছে। আর জয় হচ্ছে পুলিশের, না হয় আওয়ামী লীগের। একসময় ছাত্রদল ছিল বিএনপির আন্দোলনের কা-ারি। একই ভূমিকা ছিল অন্যতম অনুষঙ্গ যুবদলের। বিএনপির শাসনামলে যুবদলের দাপটও কম ছিল না। এর পাশাপাশি কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস, দলীয় চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবসহ প্রায় সব সংগঠনই তো নীরব। আন্দোলনে তাদের এক সময়কার সরব উপস্থিতি এখন হঠাৎ নীরব হয়ে গেছে। বিএনপির যে নেতারা রাজপথ কাঁপাত, তারাও গেল কোথায়।