Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

আন্দোলনে নয়, বিএনপি নেতাদের সাহস বক্তৃতায়

আফছার আহমদ রূপক ॥প্রিন্ট সংস্করণ

আগস্ট ১৩, ২০১৭, ০৭:২৭ এএম


আন্দোলনে নয়, বিএনপি নেতাদের সাহস বক্তৃতায়

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ কিংবা সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে আপাতত মাঠে নামতে সাহস দেখাতে চাচ্ছেন না বিএনপিনেতারা। তবে সভা-সেমিনার, মানববন্ধন, টেলিভিশন টক শোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় বেশ সাহসী হয়ে উঠেছেন তারা। এসব অনুষ্ঠানে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছেন তারা। যেমন— গতকাল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় যুবদল আয়োজিত দোয়া মাহফিলপূর্ব আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রায়ের পর ক্ষমতায় থাকার নৈতিকতা হারিয়েছে সরকার। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রেক্ষিতে তিনি একথা বলেছেন। একই রায় প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে বর্তমান সংসদকে অকার্যকর বলা হয়েছে। অকার্যকর সংসদ দিয়ে দেশ চলতে পারে না। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে সরকার পদত্যাগ করত। এ রায়ের পর সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। শুক্রবার কুমিল্লার দাউদকান্দি সদরে উপজেলা ও পৌর ওলেমা দলের নতুন কমিটির পরিচিতি সভায় ্এসব কথা বলেন। শুধু এই দুজন নেতাই নন, বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাই প্রতিদিনই সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে দলকে ও দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বক্তৃতা দিয়ে এসব নেতা যতটা সাহসিকতার পরিচয় দেখান ততটাই পিছু হটছেন আন্দোলন ইস্যুতে। প্রধান নির্বাচন কমিশনের বিরোধিতা ও সহায়ক সরকারের দাবি জানালেও আন্দোলন করবেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। তাই হঠাৎ আন্দোলনের ডাক না দিয়ে বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপ করতে আগ্রহী বিএনপি। সরকার যদি শেষ পর্যন্ত সংলাপে রাজি না হয় তাহলে জনগণ জানে কীভাবে আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে হয়।

এদিকে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া যতদিন লন্ডনে থাকবেন ততদিন আন্দোলনের চিন্তাভাবনা মাথায় নেবেন না বিএনপিনেতারা। এমনকী তারা কোনো ভারপ্রাপ্তের কাছে খালেদা জিয়ার দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে নেই। ফলে দল পরিচালনা করা হচ্ছে লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার নির্দেশে ও নেতাদের সম্মিলিত চেষ্টায়। প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে লন্ডনে অবস্থানরত খালেদার মতামত নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দল গোছানো ও দলকে চাঙা রাখার লক্ষ্যে কাজ করছেন জোরালোভাবেই। বিশেষ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভা-সেমিনারে ও মানববন্ধনে আগের চেয়ে আরও বেশি জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছেন সরকার ও আওয়ামী লীগনেতাদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অতি আহম্মকও ওবায়দুল কাদেরর কথা বিশ্বাস করবে না। ফখরুল ওই অনুষ্ঠানে আরও একটি কড়া কথা বলেছেন। ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন মামলার ভয়ে লন্ডন পালিয়ে গেছেন খালেদা, আর দেশে ফিরবেন না।

এদিকে খালেদার অবর্তমানে বিএনপির নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে এবং দেশবাসীর সামনে দলীয় শক্তি জাহির করতে শুধু ফখরুল নন, আরও কেন্দ্রীয় নেতারা নির্ভীকতার পরিচয় দিচ্ছেন। সরকারের কড়া সমালোচনা করছেন। যেমন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরলে এ সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজের জবাব দেওয়া হবে। একইদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামও ত্রাণ বিতরণকালে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া লন্ডন থাকাবস্থায় বিভিন্ন ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে বিএনপির রাজনীতি সরগরম করবেন নেতারা। এরমধ্যে সহায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশনের বিরোধিতা এবং বন্যায় সরকারের ত্রাণ বিতরণের সমালোচনা প্রাধান্য পাবে। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে দাবি এবং আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে তা যেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে হোঁচট না খায় সেজন্য রাজনীতির মাঠ গরম রাখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়া লন্ডন থাকার কারণে তার অবর্তমানে নেতারা যেন গাছাড়া ভাব না দেখান এবং ভয় না পান সেটাই চান খালেদা জিয়া। বরং দলীয় কর্মকা-ে আগের থেকে আরও বেশি সক্রিয় দেখতে চান তিনি। সেইভাবেই সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। নেতারা আরও বলেন, খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় দলীয় কার্যালয়ে বন্দি থাকায় এবং ভালোভাবে প্রস্তুতি না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে তিনমাস একটানা অবরোধ কর্মসূচি দিয়েও ফল পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারকে টলানো সম্ভব হয়নি। এবার তাই লন্ডন থেকে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নির্দেশনায় ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েই তবে বাংলাদেশে আন্দোলন চালানো হবে। ভালো প্রস্তুতি থাকলে ভালো ফল আসে আন্দোলনে। জানা গেছে, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন গত মাসে। আর তারেক রহমান সেখানে আছেন ২০০৮ সাল থেকেই।