Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করছে নগরবাসী

বেলাল হোসেন॥প্রিন্ট সংস্করণ

আগস্ট ১৪, ২০১৭, ০৫:২১ এএম


যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করছে নগরবাসী

রাজধানীতে বেশকটি ফ্লাইওভার, ব্রিজ তৈরি হলেও যানজট নিরসনে প্রত্যক্ষভাবে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। ফ্লাইওভারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ির মিছিল। এতে প্রতিনিয়তই যানজটের সাথে যুদ্ধ করছেন নগরবাসী। বিআরটিসি, বেসরকারি যাত্রীবাহী বাসের তুলনায় প্রাইভেটকারের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। যানজট নিরসনে বিশ্লেষকদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে কিছু জায়গায় ছোট ছোট ফ্লাইওভার তৈরি করে যানজট কমানো সম্ভব নয়। রাজধানীতে যানজট কমাতে চাইলে সবার আগে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে লোকাল এসি বাস কিংবা নন এসি বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গতকাল সরেজমিন রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, মৎস্যভবন মোড়, শাহবাগ, রূপসী বাংলা মোড়, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট ঘুরে দেখা যায় ভয়াবহ যানজটের চিত্র। গাড়ির চালক, যাত্রী ও সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকেই এ রকম তীব্র যানজট লেগেছিল প্রায় প্রতিটি সিগন্যালেই। স্বাভাবিক দিনে যে রাস্তা ১০ মিনিটে যাওয়ার কথা সেখানে গতকাল লেগেছে এক ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার উন্নয়ন ও পরিকল্পনাবিদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ফ্লাইওভার দিয়ে শতকরা ১০-২০ ভাগ গাড়ি চলে না। একটা সমন্বিত পরিকল্পনা করে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা উচিত, সেটা হচ্ছে না।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পায়ে হাঁটা পথ আর যান চলাচলের রাস্তার পাশাপাশি ফ্লাইওভারের একটা সমন্বয় থাকা দরকার। আমাদের যেভাবে দিন দিন লোকসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এর সাথে পাল্লা দিয়ে গাড়ির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের যে স্বল্প আয়তনের রাস্তা তা দিয়ে যানবাহনের জট কমানো সম্ভব নয়। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিচ্ছিন্ন ফ্লাইওভার দিয়ে যানজট কমানো সম্ভব নয়। তবে কিছু কিছু জায়গায় ফ্লাইওভারের কারণে সাময়িক যানজট কমলেও সামগ্রিক ঢাকা শহরের যানজট লেগেই থাকে। যানজট নিরসনে এ নগর উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদ বলেন, আমাদের শহরে আশঙ্কাজনকহারে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ট্রেনের যোগাযোগ বৃদ্ধি, পাবলিক বাসের মান ভালো করে বেশি বেশি বাস রাস্তায় নামলে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।

এদিকে অনেক রাজধানীবাসী অভিযোগ করে বলছেন, সরকার শুধু নতুন নতুন ফ্লাইওভার তৈরি করেই যাচ্ছেন। কিন্তু যানজটতো কমছে না। এক জায়গায় যানজট কমছে অন্য জায়গায় আবার বাড়ছে। কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেন, আগে বিজয় সরণির ফ্লাইওভার ছিল না। কিন্তু এটা হওয়ার পর এর সংলগ্ন রাস্তাগুলোতে কোনোটিতে যানজট কমলেও অন্য কয়েকটিতে অনেক বেড়ে গেছে। মগবাজার সাতরাস্তায় নতুন ফ্লাইওভার হওয়ার পর এখন আবার তিব্বত, নাবিস্কোতে যানজট বেড়ে গেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখাগেছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত ফ্লাইওভার খুলে দেয়ার পর থেকেই আশপাশ এলাকায় মাঝে মাঝে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট দেখা যায় ফ্লাইওভারের ওপরও। ফলে সাতরাস্তা থেকে মহাখালী এবং হলি ফ্যামিলি থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়ে।

সিএনজি ড্রাইভার খোকন বসে আছেন হাইকোর্টের সামনের রাস্তায়। তিনি আসছেন মহাখালী থেকে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে খোকন বলেন, আজকের মতো যানজট এ মাসে দেখিনাই, মহাখালী থেকে এখানে আসতে আমার সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা। প্রতিটি সিগন্যালেই প্রচ- যানজট ঠেলে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। মোটরসাইকেলে করে মহিউদ্দিন মাহী আসছেন যাত্রাবাড়ী থেকে। মিন্টো রোডে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সেজন্য অলিগলি ঘুরে প্রায় ১ ঘণ্টায় শাহবাগ পৌঁছেছি। আর শাহবাগ এসে দীর্ঘ যানজটে পড়েছি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান বলেন, উত্তরা যেতে সকাল ৯টায় সেগুনবাগিচা থেকে রওনা হন। মগবাজার হয়ে মহাখালী যেতেই সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। তিনি বলেন, দিনের শুরুতেই যানজটে আটকে যাওয়ায় আমার মতো অনেক অফিসগামীর গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। একই ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রামপুরা থেকে বিশ্বরোডগামী যাত্রীরা। তারা বলেন, ওই সড়কেও গাড়ি ধীরগতিতে চলেছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এক ঘণ্টার পথ যেতে তিন ঘণ্টা লেগেছে। গতকালের যানজট পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় প্রেসক্লাব মোড়ে দায়িত্বরত সার্জেন্টের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকেই গাড়ির প্রচুর চাপ।

রাজধানী ঢাকার যানজট সমাধানের স্থায়ী ব্যবস্থা কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্লেষক নগর প্রকল্পবিদ প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক হাসান বলেন, আসলে ফ্লাইওভার দিয়ে রাজধানীর যানজট কখনই দূর হবে না, একথাটি আমি আগেও বলেছিলাম এখনও বলছি। ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে হলে সিটিকে ডিসেন্ট্রালাইজ (বিকেন্দ্রীকরণ) করার বিকল্প নেই। মোট কথা, ঢাকার অফিস-আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গার্মেন্টসহ শিল্প-কারখানা এসব রাজধানী থেকে সরিয়ে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যেতে হবে। প্রতিটা জেলা শহরকে ঢাকার মতো উন্নত সুযোগ সুবিধাসহ স্ট্যান্ডার্ড লিভিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে ঢাকা থেকে নদীর ভাটার মতো মানুষ সরে যাবে।