Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বন্যার্তদের পাশে নেই খালেদা

আফছার আহমদ রূপক॥প্রিন্ট সংস্করণ

আগস্ট ২৯, ২০১৭, ০৫:৩৬ এএম


বন্যার্তদের পাশে নেই খালেদা

দেশের বিভিন্ন জেলা যখন বন্যার পানিতে ভাসছে তখন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে ব্যস্ত চোখের চিকিৎসায়। চোখের ছানির অপারেশন হয়েছে অনেকদিন আগেই। এখন তিনি সেখানে বসে আছেন ফলোআপ চিকিৎসার জন্য। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়ার চোখে যে ছানির অপারেশন হয়েছে তা বাংলাদেশের চক্ষু সার্জনদের বাঁ হাতের কাজ। আর ফলোআপের জন্য এতদিন লন্ডনে থাকার তো কোনো প্রয়োজনই নেই। এ ধরনের ফলোআপ চিকিৎসা খুব সহজেই বাংলাদেশে নেওয়া যায়।

এদিকে চোখের চিকিৎসার কথা বলে লন্ডনে খালেদার অবস্থানকে মেনে নিচ্ছেন না খোদ তার দলের অনেক নেতাকর্মীও। তাদের মতে বন্যার ভয়াবহতা এবং বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করে নিজের চোখের চিকিৎসাকে বেশি প্রয়োজনীয় মনে করাটা খালেদা জিয়ার মোটেও উচিত হচ্ছে না। এতে দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে ভালো চোখে দেখছে না। বন্যার্তদের বিপদের সময় খালেদা জিয়া লন্ডনে থাকার কারণে বিএনপিরও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির ছোটবড় অনেক নেতাই বন্যাকবলিত এলাকায় যাচ্ছেন এবং ত্রাণ বিতরণ করছেন। বাদ যাচ্ছেন না অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীরাও। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় শুধু নেই খালেদা জিয়া ও তার জ্যেষ্ঠপুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারা দুজনেই লন্ডনে। পরিবারের সঙ্গে বেশ আনন্দেই সময় কাটাচ্ছেন। যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কিছু নেতাকর্মী বন্যার্তদের মাঝে সাধ্যমত ত্রাণ বিতরণ করছেন। তাতে তো আর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতির অভাব পূরণ হবে না। তারা বন্যাকবলিতদের পাশে থাকা মানেই আলাদা মর্যাদা এবং গুরুত্ব বহন করে। নেতাকর্মীরা বলেন, এখনও যদি অন্তত খালেদা জিয়া দেশে ফিরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে যেতেন এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতেন তাহলে খালেদা এবং বিএনপির দুর্নাম কিছুটা হলেও দূর হতো।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, লন্ডন থেকে খালেদা জিয়া আগামী মাসে দেশে ফিরছেন। তবে নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক হয়নি। তার চিকিৎসক বলেছেন, একমাস হলে আবার দেখা করতে। চোখের অপারেশনের পর একমাস এখনও হয়নি। একমাস হলে আবার চোখ দেখিয়ে ঈদের পরপরই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। তার মানে আগামী মাসে ফিরবেন তিনি। সূত্রটি বলছে, খালেদা জিয়া যে আগামী মাসে দেশে ফিরবেন তা শতভাগ নিশ্চিত। তিনি দেশে ফিরবেন না আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন ধারণা একেবারেই ঠিক নয় বলে মনে করছে ওই সূত্রটি। সূত্রটি বলছে, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার জন্য খুবই উদগ্রীব। ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর তিনি ফুরফুরে মেজাজে আছেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে ত্রয়োদশ সংশোধনী রিভিউ করবেন কিনা সে বিষয়ে দেশে ফিরেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া বন্যার্তদের পাশে না থাকলেও আগামী মাসে দেশে ফেরার পরই বিশাল শোডাউন করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাপক সংবর্ধনা দেওয়া হবে তাকে। এ লক্ষ্যে নীরবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দুপাড়ে সারিবদ্ধ হয়ে ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেওয়া হবে। সংবর্ধনার দিন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো ঢাকাকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করবে। দেশে ফিরেই তিনি সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করবেন। রূপরেখা প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া এবং সরকারের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করবেন কিছুদিন। তারপর প্রয়োজন মতো সময়ে আন্দোলনের ডাক দেবেন। এসব বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গেও পরামর্শ করেছেন। ছেলের বাসায়ই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে আছেন তিনি। চিকিৎসা এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে গত মাসে লন্ডন পাড়ি জমান খালেদা জিয়া।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, বন্যার্তদের পাশে থাকা যেমন জরুরি, তেমনি খালেদা জিয়ার চোখের চিকিৎসাও জরুরি। চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে তো আসা ঠিক নয়। তিনি দলের চেয়ারপারসন হিসেবে বন্যায় আক্রান্তদের কাছে যেতে পারলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু তিনি তো রোগী। আর রোগী খালেদা জিয়াকে এজন্য দেশের মানুষ ক্ষমার দৃষ্টিতেই দেখবেন বলে তার বিশ্বাস।