Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আবার বেপরোয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হ্যাকাররা

আব্দুল লতিফ রানা॥প্রিন্ট সংস্করণ

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭, ০৫:৫৭ এএম


আবার বেপরোয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হ্যাকাররা

সারাদেশে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হ্যাকাররা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কিছু দিন দমনে থাকলেও এখন আবারও তারা প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হ্যাকারা সিম ক্লোনিং করে গ্রাহকের সকল তথ্য সংগ্রহ করে। পরে সুরেলা কণ্ঠের নারীদের ব্যবহার করে গ্রাহককে ফোন করে বলে আমি বিকাশ অফিস থেকে বলছি, স্যার আপনার নাম কি ওমুক? আপনি সর্ব শেষ কবে লেনদেন করেছেন আপনার একাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে, আপনি কি জানেন? আমাদের সার্ভিস চার্জ কমানো হয়েছে? আপনি যদি একাউন্টটি চালু করতে চান তা হলে এক চাপুন। আবার বলা হয়, আর যদি সার্ভিস চার্জ কমাতে চান তাহলে দুই চাপুন।এ কথা শুনে যদি বিকাশের কোন গ্রাহক এ সকল বাটন চেপে থাকেন তা হলে ঐ গ্রাহককে প্রতারকচক্র সর্বশান্ত করছে।

এরকম অনেক গ্রাহক সর্বশান্ত বা প্রতারিত হয়ে বিকাশের সার্ভিস সেন্টার এবং আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার কাছেও অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি মহিউদ্দিন জানান, গত ঈদের আগে আমার ফোনেও এ ধরনের একটি কল করা হয়। এরপর আমার বিস্তারিত তথ্য বলে এবং বিভিন্ন নম্বর টেপার জন্য বলা হয়। এরপর এবিষয়ে আমি বিকাশ অফিসের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেছি। ঐ কর্মকর্তা উত্তরে জানালেন, গ্রাহকদের একাউন্ট যদি বন্ধই হয় তাহলে গ্রাহকরা আমাদের অফিসে যোগাযোগ না করে ঐ হ্যাকারের কথা মতো কাজ করলে সর্বশান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক।

সূত্র জানায়, হ্যাকাররা কুরবানির ঈদের পশু কেনা-বেচার বাজারকে টার্গেট করেছিল। আর বাণিজ্যিক ব্যাংক সমুহে গ্রাহক সেবা বলে কিছু না থাকা এবং লেনদেন এ একাউন্ট থাকা ও ভোটার আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করার ফলে গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংকে না গিয়ে উচ্চ মুল্যের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংকে
হ্যাকারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে ভুক্তভোগিরা। অপরদিকে এয়ার্টেল কোম্পানীর এক মোবাইল গ্রাহকের মোবাইলে ঈদের আগে এক ব্যক্তি ফোন করেন।

ওই ব্যক্তি বলেন, স্যার গতকাল রাত ১ টার দিকে এয়ার্টেল কোম্পানীর একটি লটারি হয়েছে। তা আপনার জানা আছে কি? এরপর তাকে বলা হয় না বিষয়টি আমার জানা নেই। এরপর বলা হয়, উক্ত লটারিতে আপনার মোবাইল নম্বরটি ৭৫ হাজার ৫শ’ ৩০টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। এরপর বলা হয়, এই পুরস্কারের টাকা দুইভাবে আপনি পাবেন। এক হচ্ছে, মোবাইল ফোনে ফোন করে ব্যবহার করতে পারেন, আর অপরটি হচ্ছে, ক্যাশ করতে পারেন। এরপর ওই গ্রাহকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আমি কি পুরস্কারের টাকা ক্যাশ করবেন না মোবাইলে ফোনে কথা বলে শেষ করবেন?। এসময় এয়ার্টেলের গ্রাহক মোবাইল ফোনে ব্যবহারের কথা বলতে অপরদিক থেকে মোবাইল কলটি কেটে দেন।

জানা গেছে, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদেরকে ম্যাসেজের মাধ্যমে টার্গেট করে ম্যালওয়্যার ছড়ানোর কাজ করছে হ্যাকারচক্র। কোন পুরস্কার বা অন্য সুবিধা পাবার জন্য নির্ধারিত ম্যাসেজটি বিভিন্ন সংখ্যায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বলা হয়। একটি ম্যালওয়্যার ভাইরাল আকারে ছড়িয়ে পড়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। ম্যাসেজে বলা হচ্ছে, আগামী শনিবার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ প্রতি মূল্য আরোপ করবে। সুতরাং বিনামূল্যে করতে হলে এই ম্যাসেজটি আরও দশ জন গ্রাহকের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়। গত ২০১২ সালে বিরক্তিকর হোয়াক্স ম্যাসেজ একইভাবে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রহকদের টার্গেট করেছিল।

গত ২০১৬ সালে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্টদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে গ্রামীণ ফোনের দুই কর্মকর্তাসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা হলেন গ্রামীণ ফোনের দুই কর্মকর্তা শ্যামল বাড়ৈ ও কপিল, হাসানুর রাহমান, সাজুল্লাহ দস্তগীর, মুরাদ হাসান, ইমরান হোসেন ওরফে মিরাজ ও জাহিদ হাসান, দেলোয়ার হোসেন মোল্ল (২৮), মো. মাহবুব শেখ (২৮), ওসমান ওরফে সাদ্দাম (২৬) ও তন্ময় হোসেন ওরফে অমি (১৯)।

সূত্র জানায়, রাজধানীর ফকিরাপুলের ‘রাওহা এন্টারপ্রাইজের’ মালিক রফিকুল ইসলাম বিকাশ, মোবিক্যাশ ও ইউক্যাশসহ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট। প্রতারকচক্র কাস্টমার সেজে তার এজেন্ট নম্বরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ-ইন করায়। এরপর ওই এজেন্টকে প্রতারক চক্রের এক সদস্য বলে রফিকুল ইসলামের এজেন্ট নাম্বারে টাকাগুলো তার এক পরিচিত ব্যক্তি টাকা পাঠিয়েছে। এরপর এজেন্ট নাম্বারে টাকা ইনের ম্যাসেজ দেখে এজেন্ট রফিকুল ইসলাম ওই ব্যক্তিকে টাকা পরিশোধ করেন। টাকা নিয়ে প্রতারক চক্র চলে যাওয়ার পর অন্য এক কাস্টমার ১হাজার টাকা ক্যাশ-আউট করতে আসলে এজেন্টের নম্বরটি ডিজএক্টিভেটেড দেখায়। পরে ওই ব্যবসায়ী মোবাইল কোম্পানির সাে েেযাগাযোগ করে জানতে পারেন তার ব্যবহূত এজেন্ট ০১৭১৫৪১৭১৭০ নম্বরটি অন্য এক ব্যক্তি তুলে নিয়েছে। এরপর ব্যালেন্স চেক করতে গিয়ে দেখেন ওই নম্বরে কোনো টাকা নেই। পরে তিনি মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত করে সিআইডি।

একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ২০টি প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস রয়েছে। নিয়ম হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিকাশ ও ইউক্যাশ একাউন্টধারীরা নিজ নিজ মোবাইলে অর্থ লেনদেন করবেন। এক্ষেত্রে এসব মোবাইল ক্যাশ লেনদেনের দায়িত্বে থাকা এজেন্টরা গ্রাহকদের সহযোগিতা করবেন। কিন্তু নিয়ম ভেঙ্গে বিকাশ ও ইউক্যাশ, মোবিক্যাশ এজেন্টরা নিজেদের সিমে অর্থ লেনদেন করেন।

আর এ কারণে প্রতারকচক্র প্রতারণা করতে পারছে। প্রতারকচক্র কাস্টমার সেজে টার্গেট করা এজেন্ট নম্বরে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশ-ইন করায় এজেন্ট নম্বরে। এরপর ওই এজেন্টের কাছে গিয়ে নগদ অর্থ তুলে নেয়। গত কয়েক বছরে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার জিনের বাদশা, বালক পীর, লটারি, উপহার পেয়েছেন ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকেও অর্থ আত্মসাত করছে। ভুক্তভোগিরা এসব প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।