প্রিন্ট সংস্করণ॥আব্দুল লতিফ রানা
জানুয়ারি ১২, ২০১৮, ০৭:৫৮ পিএম
সাভারের ম্যাবকো ফার্মাসিউটিকালস্’র লিমিটেডের মালিক ডা. আলিম ডিগ্রি ছাড়াই একজন ডাক্তার। এক সময় ঢাকার একটি ইউনানি ওষুধ কোম্পানির সহকারী পদে চাকরি করতেন। সেখান থেকেই পাক্কা শিকারি হয়ে সাভারে কারখানা বানিয়ে অবৈধ বডিফিট ও পিউভিট সিরাপ বাজারজাত করে ভেজাল ব্যবসায়ী হিসেবে সারাদেশে আলোচিত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত ২ থেকে ৩ বছর আগেও যিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, কিভাবে তিনি রাতারাতি ওষুধ কোম্পানির মালিক হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি সাভারের আশুলিয়ায় লাখ লাখ টাকার জমি ক্রয়সহ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। পুরান ঢাকার একটি ইউনানি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক জানান, ডা. আলিম ময়মনসিংহ থেকে ইউনানি পাস করেছেন বলে শুনেছি। তবে তিনি পিউটন নামের সিরাপটি বিক্রি করে প্রতি মাসে কম হলেও ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় করেন। আর এই টাকা দিয়েই আশুলিয়ায় জমি ক্রয় করাসহ বিশাল মূলধন নিয়ে বেভারেজ কোম্পানির করতে সব কিছুই গুছিয়েছেন। তার এই বিশাল অর্থের ভান্ডার হলো পিউটন সিরাপ। তিনি ডিলারদের কাছে মাত্র ৪০ টাকা দামে বিক্রয় করায় ইউনানি শিল্পের অন্যান্য কোম্পানির বারোটা বাজিয়েছে। ডিজিটাল ব্যবসায় কেউই তার সঙ্গে পেরে উঠতে পারছেনা। ম্যাবকোর পিউটন যেখানে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেখানে অন্যান্যরা এই টাকায় বিক্রি করার সাহসই পায়না। এই ব্যবসায়ীর অত্যাচারে খোদ ইউনানি ওষুধ শিল্প বিতর্কিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা ম্যাবকোর মতোই সিস্টেম ব্যবসায় সক্রিয় হয়েছেন। তারপরও ম্যাবকোর মালিক কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছেনা। তিনি দম্ভক্তি করে বলছেন, পত্রিকায় লিখলে তার কিছু যায় আসে না। ড্রাগ প্রশাসন, র্যাব, সাভার থানা পুলিশ ও মিডিয়ার বড় বড় ব্যক্তি তার পকেটে থাকে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রশাসনের যারা ডা. আলিমকে সহযোগীতা দিয়ে আসছেন তাদের মাসোয়ারা প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ যাবতকাল ড্রাগ কর্তৃক অনেক কোম্পানির ওষুধ পরীক্ষা করে উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করাসহ কারখানা সিলগালা করলেও ম্যাবকোর কারখানা সিলগালা করা দূরে থাক, কোন ওষুধ পরীক্ষা করা হয়নি। অনুমোদিত পিউটন (কথিত আমলকি) ওষুধে সিপ্রো হেফটামাইডিন, স্ট্রয়েট, প্যারাকটিন, রেকটোভিট ও হেপরোভিট মিশিয়ে বিষাক্ত আমলকির মতোই শক্তিবর্ধক, পুষ্টিবর্ধক ও পাকস্থলীর দূর্বলতা নাশক সিরাপ অবাধে বিক্রি করছেন। ঠিক আমলকির মতই ‘পিউটন’ বিক্রির ব্যাপারে ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা বলেন, আমলকি খেলে যেভাবে চিকন স্বাস্থ্য মোটাতাজা হয়, ঠিক তেমনি পিউটন খেলে মোটাতাজা হওয়া যায়। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না পিউটন সিরাপটি কতটা ক্ষতিকারক। তিনি অঞ্চলভিত্তিক ড্রাগ সুপারকে ম্যানেজ করে বৈধ্যতার আঁড়ালে অবৈধ ব্যবসা করে এখন আলোচিত ব্যবসায়ী। যখন বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক আমলকি বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়, ঠিক তখনই সুযোগ সন্ধানী এই ব্যবসায়ী পিউটন বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায়। তাছাড়া বিভাইন ও ম্যাবলেক্স সিরাপ দুটিও ক্ষতিকারক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ওষুধ ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, পিউটন ও বিভা-গেইন সিরাপ দুটি পরীক্ষা করলেই ডা. আলীমের কারসাজি বেড়িয়ে আসবে।
অপরদিকে জেনিয়াল ইউনানি ল্যাবরেটরিজের আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে হিমোজেন, লিমোজেন, মেলটন, ভিগোরি, কাইলোজেন, পরীশকার, লিউমা, ভিয়েক্স, জি গোল্ড, পেনি, জিনাফি, জিরিয়াল ও জি-টাইজার অবৈধভাবে উৎপাদন করে বাজারজাত করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জেনিয়াল ইউনানির অনেক সিরাপ বাজারজাত করেছেন ইউনী ফার্মা ল্যাবরেটরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ডা. আব্দুর রশিদ নিজেই যৌনবর্ধক পাউডার জিনাফি, জিরিয়াল ও জি-টাইজার হকার দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে বিক্রি করছেন। গত ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট সাভারের হেমায়েতপুরের কারখানায় র্যাব অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ওষুধ ও ক্ষতিকারক ক্যামিক্যাল পাওয়ায় যায়। এসময় নগদ ১ লাখ টাকা জরিমানা করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেনিয়াল ইউনানির কারখায় কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে সিলগালা ও জরিমানাও করে। তারপরও ওষুধ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি আরও সক্রিয় হয়ে বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক ওষুধের ব্যবসা করছেন। ডা. রশিদের সহযোগী এবং ভেজাল ব্যবসায়ী ওমর ফারুক ও ইব্রাহিম প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে ইউনানি ফার্মা ল্যাবরেটরিজের নাম পরিবর্তন করে ইউনানি ফার্মা ট্রেডিং করপোরেশন নামে ঠকবাজী চালিয়ে যাচ্ছেন। ডা. আব্দুর রশিদের ছত্রছায়ায় অসাধুচক্রটি ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়নগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙামাটিসহ সারাদেশে এজেন্সির মাধ্যমে বিক্রি করছেন। ডা. আব্দুর রশিদ জনস্বাস্থ্যবিরোধী কর্মকা- করলেও ড্রাগ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাকে সহযোগীতা দিয়ে ভেজাল ব্যবসায় উৎসাহ যুগিয়েছেন। ফলে, প্রতিষ্ঠানটির মালিক প্রকাশ্যে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এখনও বহাল তবিয়তে। এছাড়া মিরপুরে যে চিকিৎসা কেন্দ্র করেছেন তার আড়ালে অবৈধ ডিপো বানিয়ে ব্যবসা করছেন বিষয়টি ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক দৃষ্টি দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিলে সাধারণ মানুষ তার কবল থেকে মুক্তি পাবে। এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।