Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

ঐক্যফ্রন্টের মামলা পাত্তাই দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

প্রিন্ট সংস্করণ॥মো. রফিকুল ইসলাম

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯, ০৮:০৪ পিএম


ঐক্যফ্রন্টের মামলা পাত্তাই দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের বয়স ৪৯ দিন। গত ৩০ ডিসেম্বর নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছে তারা। কিন্তু নির্বাচনের দিন থেকেই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোট ডাকাতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করে নির্বাচনের ফলাফল ‘প্রত্যাখ্যান’ করে। তারা শুধু নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানই করেনি, শেষ পর্যন্ত (ফ্রন্ট প্রার্থীরা) উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ‘ভোট কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ’ আনা হলেও রাজনৈতিক ইস্যুতে এটিকে আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আ.লীগের নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে আ.লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে মনে করছেন তারা। ফ্রন্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ধানের শীষ প্রতীকের ৭৪ জন প্রার্থী উচ্চ আদালতে নির্বাচনি মামলার আবেদন করেছেন। আবেদনে তারা একাদশ জাতীয় নির্বাচন বাতিল চেয়েছেন। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থীরা নির্বাচনি মামলা করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঐক্যফ্রন্ট। পরে তিনশ আসনে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করার ঘোষণা দেয় তারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত শুক্রবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে উচ্চ আদালতে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মামলার বিষয়ে সরকারি দল বিব্রত নয়। মামলার বিষয়টি ইসি দেখবে। মামলার বিষয়টি আমলে নেয়ার কিছু নেই। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার ইসির। ইসির সিদ্ধান্তের পর ট্রাইব্যুনালে যদি কেউ মামলা করেন, এ বিষয়ের দায় বর্তায় ইসির ওপর। ইসি এখন আদালতে গিয়ে মোকাবিলা করবে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই বলে দাবি করেন তিনি।১৪ দলীয় জোটের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা মনে করেন, বিগত দশ বছরে বিএনপি যেসব আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তার মধ্যে একটিতেও সফল হয়নি। বিশেষ করে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের পর বিভিন্ন আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা। এরপর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ঈদের পরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন শুরুর কথা বলেছিলেন। তখনো তারা সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন করতে পারেনি। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের জোট গঠন করেন। এই জোটের রাজনীতিতেও সফল হয়নি বিএনপি। বরং নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে ফ্রন্ট নেতাদের। তাই মাঠের আন্দোলন ছেড়ে এবার আইনের আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায় বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আ.লীগের নীতিনির্ধারণীরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় ৫০ জেলার নেতাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্স করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মামলা করার কথা। মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে সুবিচার না পেলেও নির্বাচন ইস্যুতে জনগণের কাছে দলের অবস্থান তুলে ধরতে চায় দলটি। এছাড়া মামলা দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তুলে ধরে কাজে লাগাতে চায় তারা। এরপর থেকেই দলীয় প্রতীকের প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন।আ.লীগ সূত্র মতে, নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে যে কোনো রাজনৈতিক দলের বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীও মামলা দায়ের করতে পারেন। এসব মামলা দেখার দায়িত্ব বর্তায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর। সেখানে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব কোনো দলের নয়। বিএনপি নির্বাচনে অনিয়মের যে অভিযোগ করছে, সেগুলো তদন্ত করে দেখতে পারে। বিচার বিভাগীয় যে তদন্ত দাবি করেছে ঐক্যফ্রন্ট, বিচার বিভাগ চাইলে তদন্ত করতে পারে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে মনে করছেন তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকেই বিএনপি বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ করে আসছিল বলে দাবি করছেন ক্ষমতাসীন আ.লীগ নেতারা। সে জন্যই জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর প্রথম জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে আ.লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ভোটের মাঠে ব্যর্থতার কারণ তুলে ধরেন। আজ সোমবার বেলা ১১টায় দলটির সম্পাদকম-লীর সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় ওই সভায় নির্বাচনি মামলার পর দলের নেতাদের করণীয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।আ.লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই তারা এই মামলা করেছেন। তিনি বলেন, তাদের নালিশ ছাড়া আর কিছুই করার নেই। বিএনপি নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। এ মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো মাথাব্যথা নেই। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু আমার সংবাদকে বলেন, যে দলের প্রার্থীরা ভোটের মাত্র ২ থেকে ৩ দিন আগে নির্বাচনি এলাকায় যায়, তাদের মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে কেন? তিনি বলেন, এত বড় একটি রাজনৈতিক দল যে দলের ভোটের দিন এজেন্ট দেয়ার মতো কর্মী থাকে না, তারা আর মামলা করে কী করবে। এটা তাদের নেতাকর্মীকে সান্ত¡না দেয়া ছাড়া কিছুই নয়।