Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

আ.লীগের তালিকায় ভিন্নপন্থি ও মাদক ব্যবসায়ীরা

প্রিন্ট সংস্করণ॥আসাদুজ্জামান আজম

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯, ০৭:১০ পিএম


আ.লীগের তালিকায় ভিন্নপন্থি ও মাদক ব্যবসায়ীরা

তৃণমূলে অবমূল্যায়িত হচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা। এক শ্রেণির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ জনপ্রতিনিধির আসনে আসীন হচ্ছে ভিন্নপন্থি ও মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষুব্ধ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা দল থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় আসার পরও একাধিকবার তিনি বিষয়টি নিয়ে সকলকে সতর্ক করেছেন। ইতোমধ্যে মাদক প্রতিরোধে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন মাদক ব্যবসায়ী ও প্রশ্রয়দাতারা। সূত্র মতে, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে অন্তত অর্ধলক্ষ ভিন্নমতের মানুষের। এদের অধিকাংশ বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ছিলেন। স্থানীয় সাংসদ ও দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের হাত ধরে তাদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। পরবর্তীতে এসব নব্য ও হাইব্রিড আওয়ামী লীগারের কর্মকা-ে বারবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে সরকারকে। অনেকেই দলীয় বোল পাল্টে মাদক ব্যবসা ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত। আবার অনেকেই আওয়ামী লীগের বড় নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু নেতা, সিনিয়র নেতাদের ম্যানেজ করে বাগিয়ে নিচ্ছেন সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান মনোনয়নসহ দলীয় পদ। ইতোমধ্যে এমন ঘটনাও ঘটেছে। একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নেন এক বিএনপি নেতার স্ত্রী। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ৪১টি নারী সংসদীয় আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। ওই তালিকায় খুলনা অঞ্চল থেকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পান শিরিনা নাহার লিপি। তার স্বামী কামরুল ইসলাম সজল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার আইনজীবী ছিলেন। সজল তার নিজের ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাসে খালেদা জিয়াকে মা সম্বোধন করেছেন। ওই তালিকায় লিপির নাম দেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। পরবর্তীতে শিরিনা নাহার লিপির পরিবর্তে টাঙ্গাইল থেকে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা মমতা নেহা লাভলীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কয়েকটি আসনে প্রার্থী তালিকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গডফাদারদের মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এদিকে, চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তালিকা নিয়েও নানা অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করে স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে বিতর্কিতদের মনোনয়নতালিকা কেন্দ্রে পাঠানো এবং পরবর্তীতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের দোসরসহ সরকারের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১১২টি চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ঘোষিত ওই তালিকায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়ন পেয়েছেন আব্দুল লতিফ প্রধান। ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সহায়তা করার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র মতে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা থেকে গত ৯ জানুয়ারি গাইবান্ধা পুলিশ সুপারকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মোফাজ্জল হোসেন প্রধানের বিরুদ্ধে মামলার জন্য তদন্ত কাজ করছে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আব্দুল লতিফ প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তির বিপক্ষে সাক্ষী না দিতে প্রকাশ্যে নিজে এবং সমর্থকদের দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-উপাত্ত বিনষ্ট করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আব্দুল লতিফ প্রধান ও তার সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয় ওই চিঠিতে। গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, গাইবান্ধায় যাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তিনি যুদ্ধাপরাধী বলে যে অভিযোগ উঠেছে; তা আমরা তদন্ত করে দেখব। অভিযোগ সত্য হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।তথ্য মতে, জেলাপর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি মূলত কয়েকটি বলয়ে বন্দি। এসব বলয়ের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এসব বলয় বা গোষ্ঠীর আশ্রয়দাতা স্থানীয় এমপি। কেন্দ্র তৃণমূলের মতামতের দোহাই দিলেও বাস্তব চিত্র উল্টো। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় স্থানীয় সাংসদের ইচ্ছার প্রতিফলনই ঘটেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। শত চেষ্টা করেও তালিকায় নাম পাঠাতে পারেননি সাংসদ বলয়ের বাইরের নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সম্পাদক জানান, প্রার্থী তালিকা নিয়ে আমরা লোক দেখানো কয়েকটি বর্ধিত সভা করেছি। সর্বশেষ দলীয় সাদা প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করে এমপিকে দিয়ে আসি, পরে তিনি নাম বসিয়ে জমা দিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। সূত্র মতে, অধিকাংশ উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। কার্যত্র স্থানীয় নির্বাচনের ত্রাণকর্তা এমপিরাই। খুলনা অঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি উপজেলার তালিকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এক ব্যবসায়ীর নাম পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। ওই প্রার্থীর ভাই বর্তমানে আসনটির সংসদ সদস্য। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ভাইয়ের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় ওই এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, উপজেলায় কোনো বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। দলীয় প্রার্থী তালিকার কিছু কিছু প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। আমরা ওই সকল প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহ করছি। নেত্রী (শেখ হাসিনা) দেশে ফিরলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।