Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বিমানে তুলে দিলেই হবে না, শ্রমিকের নিরাপত্তার দায়িত্বও নিতে হবে

প্রিন্ট সংস্করণ॥কাওসার আজম

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯, ০৭:২৭ পিএম


বিমানে তুলে দিলেই হবে না, শ্রমিকের নিরাপত্তার দায়িত্বও নিতে হবে

‘জনশক্তি ব্যবসায়ীরা দালালদের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে যারা মহিলা কর্মী প্রেরণ করেন তারা নীতিমালা মানছেন না। আপনারা শুধু ব্যবসা করবেন, দায়-দায়িত্ব নেবেন না তা হতে পারে না। দালালের মাধ্যমে গ্রাম-গঞ্জ থেকে ধরে নিয়ে (শ্রমিক) এসে প্লেনে (বিমানে) উঠিয়ে দিলাম। ডলার পেলাম শেষ হয়ে গেল, এটা হবে না। কর্মীর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বও আপনাদের। যাদের বিদেশে পাঠাচ্ছেন তাদের ডাটাবেজ করতে হবে। এটা যদি না করেন ব্যবসা করতে দেয়া হবে না।’ গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) গণশুনানিতে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের এসব হুঁশিয়ারি দেন মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রয়েছেন। কর্মসংস্থানের উদ্দেশে যারা বিদেশে যান তাদের বিএমইটির স্মার্টকার্ড নিতে হয়। কয়েক বছর হলো পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি নারীকর্মী যাওয়ার হারও বেড়েছে। যদিও সম্প্রতি সৌদি আরবে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে নারী কর্মীরা উল্লেখযোগ্য হারে দেশে ফিরছেন। পুরুষ এবং নারী কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াতে দালাল চক্র সব সময়ই সক্রিয়। প্রতারণার শিকার হতে হয় কিছু অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকেও। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। চলতি মাস থেকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড মাসে একদিন এবং বিএমইটি সপ্তাহের প্রতি সোমবার প্রবাসী শ্রমিক, তাদের পরিবারের অভিযোগ শুনানির ব্যবস্থা করেছে। যেখানে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও নানা সমস্যার কথা জানাতে পারবেন বিএমইটি কর্মকর্তাদের কাছে। গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১২টি আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ভুক্তভোগী প্রবাসী ও তাদের স্বজন ছাড়াও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক-প্রতিনিধিদের অভিযোগ ও অভিযোগের জবাবের ব্যবস্থা ছিল। বিএমইটির ডিজি মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে শুনানিতে পরিচালক (ইমিগ্রেশন) আতাউর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন) ডিএম আতিকুর রহমানসহ উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকরাও উপস্থিত ছিলেন। শুরুতেই কেরানীগঞ্জের আমির হামজার আবেদনের ওপর শুনানি হয়। প্রায় ৪ মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে তার স্ত্রী সৌদি আরবে যান। নামিরা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ভাগ্যবদলের জন্য যাওয়া এই নারী গত ৩ মাস ধরে দেশটির বুরাইদা জেলে বন্দি আছেন। হামজা বলেন, সৌদিতে যাওয়ার দিন তার স্ত্রীকে একটি ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দেন নামিরা রিক্রুটিং এজেন্সি অফিসের ফয়সাল। বলে দেন সৌদি আরবে যাওয়ার পর বিমানবন্দর থেকেই কোনো একজন ব্যাগটি নিয়ে নেবে। কিন্তু, বিমানবন্দরে ব্যাগটি নিতে আসেনি আর কেউ। সরাসরি তাকে নেয়া হয় গৃহকর্তার বাড়িতে। সেখানেই কাজ করতে থাকেন তিনি। প্রায় এক মাস গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন তিনি। নিয়োগকর্তার বড় পরিবার। কাজ অনেক। এর ওপর ঠিক মতো খাবার দেয় না। বিষয়টি নামিরা এজেন্সিকে জানালে তারা কিছুদিন ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে একদিন বাড়িওয়ালা আমির হামজার স্ত্রীকে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগসহ থানায় দেন। প্রায় তিন মাস আগে থানায় নেয়ার পর হামজা তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এরপর আর কথা হয়নি। এখন তিনি কেমন আছেন, কোথায় আছেন জানে না পরিবার। এ নিয়ে গতকাল বিএমইটি গণশুনানিতে আমির হামজা তার স্ত্রীর খোঁজ পেতে আকুতি জানান। ঠিক কি কারণে স্ত্রীকে জেলে যেতে হয়েছে, তা জানা নেই আমির হামজার। শুনানি চলা অবস্থায়ই তার স্ত্রীর বিষয়ে খোঁজ নেন বিএমইটির কর্মকর্তারা। শুনানির শেষের দিকে বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজা জানান, হামজার স্ত্রীর ব্যাগের মধ্যে একটি ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল, যেটা সৌদি আরবে নিষিদ্ধ। অবৈধ এই ওষুধ বহনের অভিযোগে হামজার স্ত্রীর নামে মামলা হয় এবং তাকে জেলে যেতে হয়েছে। এ সময় ডিজি বিএমইটির কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর শুনানি হয় মোছা. জেসমিন আক্তার (১৮) নামে সৌদি আরবে গিয়ে নিখোঁজ গৃহকর্মীর। তার বোন জোসনা আক্তারের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আবেদনে বলা হয়, হবিগঞ্জের ধুলিয়াখাল গ্রামের মৃত মো. আরজু মিয়ার মেয়ে জেসমিন আক্তার ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর হিমেল এয়ার সার্ভিস নামের রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যান। আবেদনে জেসমিনের বোন জোসনা বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পর তিনি নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতো এবং আমার অ্যাকাউন্টেই মাসিক বেতনের টাকা পাঠাতো। কিন্তু বিগত অক্টোবর মাস থেকে আমি বা আমার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। এ ব্যাপারে আমরা চিন্তিত। সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির দ্বারস্থ হলেও তাদের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় জেসমিনের সন্ধান চেয়ে দেশে ফেরতের দাবি জানান তার বোন। বিস্তারিত তথ্য নিয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগসহ সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে তলব করতে নির্দেশ দেন ডিজি। ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে দেশে ফেরত আসেন মাহবুব। তিনি আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেন বিএমইটিতে। শুনানিতে মাহবুব বলেন, ঢাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আমাকে ফিটের সার্টিফিকেট দেয় এবং গত নভেম্বরে আমাকে মালয়েশিয়ায় পাঠায়। সেখানে যাওয়ার পর কাজে যোগ দেই। ডিসেম্বরে অফিস আবার আমাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানায় তুমি আনফিট। আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে এসে ক্যাথারসিস রিক্রুটিং এজেন্সি অফিসে গিয়ে এর প্রতিকার চাইলে তারা আমাকে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে আপনাদের দ্বারস্থ হয়েছি। শুনানিতে উপস্থিত ক্যাথারসিসের প্রতিনিধি জানান, ঢাকায় মেডিকেল করার পর তিনি ফিট ছিলেন। এরপর তাকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে আরও তিন মাস লেগেছে। পরের মেডিকেলে তার কিডনি সমস্যা ধরা পড়ায় আনফিট হয়েছে।কিডনি সমস্যা তো একদিনে হয় না। মেডিকেল ঠিক নাই। কোন মেডিকেলে করেছে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ক্যাথারসিস ইন্টার ন্যাশনালকেও ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেন বিএমইটির ডিজি। এ সময় ডিজি বলেন, অনেক সময় টাকাপয়সা দিয়ে মেডিকেলে ফিট করে বিদেশে পাঠানো হয়। যে রিক্রুটিং পাঠাচ্ছে এবং যারা আনফিট জেনেও যাচ্ছেন তারা উভয়ই দায়ী। কারণ ওখানে (বিদেশে) যাওয়ার পর তো আবারো মেডিকেল হয়।সবুজ মিয়া নামের একজন অভিযোগ করেন ২১ বছর ধরে সৌদিতে থাকেন। ওখানে যে কোম্পানিতে চাকরি করেন তার মালিকের অনুরোধে বাংলাদেশ থেকে মহিলা কর্মী নিতে খান এভিয়েশনের সাথে যোগাযোগ করে দেই। মহিলা কর্মী প্রেরণবাবদ আমার মালিক বাংলাদেশের এই রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ১২ লাখ টাকা পায়। দীর্ঘদিন ধরে এই টাকা না দেয়ায় আমার মালিক দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বলেছে, এই টাকা তুলে দিতে না পারলে সৌদিতে যেতে দেবে না। সবুজ মিয়ার এই বক্তব্য শোনার পর বলেন, আপনি কি সেখানে ভিসা ব্যবসা করেন? আপনাদের কারণেই সৌদিতে এই অবস্থা। গেছেন চাকরি করতে, ব্যবসা করতে হয়েছেন দালাল, এজেন্ট। আপনাদের মতো যারা তারাই পুরো মার্কেট ডুবাইছে। ওটা তো আপনাদের কাজ না। এ রকম হাজার হাজার ঘটনা। আইনগতভাবে আপনি নিজেই একটা অপরাধ করেছেন। ইফতি ওভারসিজের মালিক রুবেল শুনানিতে বলেন, আমার দুজন মহিলা যাত্রী সৌদি আরবে পাঠাই এক বছর আগে। যে কোম্পানিতে আমরা কাজ করছিলাম। তাদের সাথে কন্টাক্ট বাতিল করেছি। এরপর থেকে ওই দুই যাত্রীর খোঁজ পাচ্ছি না। আমি তাদের অফিসেও গেছি, খারাপ ব্যবহার করে। তাদের খোঁজ পেতে সহযোগিতা চান রুবেল। বিস্তারিত ঠিকানা ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে বিএমইটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন ডিজি। এসময় রুবেল বলেন, আমরা যারা সৌদি আরবে কাউন্টার পার্টের সঙ্গে কাজ করি, দেখা যায় ১০ জনের পেমেন্ট দেয়। পরবর্তীতে ১০-১৫ হাজার ডলার থেকে যায়। এই টাকাগুলো আমরা উঠাতে পারি না। এদের কীভাবে আয়ত্তে আনা দরকার। আমি ৯টি কোম্পানির কাছে ৮৪ হাজার ডলার পাই। না বলেই যাত্রীকে দেশে পাঠিয়ে দেয়।এসময় বিএমইটি ডিজি বলেন, আমাদের এখানে যেমন সৌদিতে যাত্রী পাঠাতে বিএমইটির তালিকাভুক্ত হতে হয়। নইলে ব্যবসা করতে দেব না। সৌদিতেও যারা কাজ করেন এই সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। সৌদি আরবে আমাদের যে অ্যাম্বাসি আছে সেখানেও তাদের (সৌদি নিয়োগকর্তা) তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা করবো। মো. আনোয়ার হোসেন নামের এক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বলেন, অনেক সময় ট্রেনিংয়ের জাল সার্টিফিকেট ধরা পড়ে। সেটা যাতে রিক্রুটিং এজেন্সি নিজেরাই পরীক্ষা করে নিতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। সন্দ্বীপ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল মালিক মো. ফসিউল আলম বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে একজন নারী সৌদিতে গেছে। তারা অভিযোগ করেছে আমাদের বিরুদ্ধে। আমরা কফিলের সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, প্রত্যেক মাসেই দেশে টাকা পাঠায় সে, তার মায়ের সাথেও নিয়মিত কথা বলে। ওই নারীর জন্য আমার ম্যান পাওয়ার সার্ভার লক। ঠিকমতো অফিস করতে পারছি না। এই মহিলাকে দেশে আনার জন্য যা খরচ আমি দেব। লক খুলে দিতে অনুরোধ করছি। সহযোগিতা চাই। আপনি কত মহিলা পাঠিয়েছেন। ২০০-র মতো। যতজন পাঠিয়েছেন সবার তথ্য থাকতে হবে। তাদের ডাটাবেজ আছে কিনা-জানতে চাইলে বলেন, আছে আশা করি। ডিজি তখন বলেন, আশা করি বললে হবে না। কর্মীর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের। ডাটাবেজ করতে বলা হয়েছে। এটা যদি না করেন ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। আমরা যে নির্দেশনা দেব তা মানতে বাধ্য। যে সমস্ত কর্মী পাঠিয়েছেন তাদের বিস্তারিত তথ্য কম্পিউটারে থাকতে হবে। আপনার দায়িত্ব শুধু এটা না যে, শুধু বাড়ি থেকে ধরে এনে প্লেনে উঠায়ে দেবেন। আর দায়-দায়িত্ব নাই। আপনারা এটাই মনে করেন। এটা যারা মনে করেন তারা ব্যবসা করতে পারবেন না। এ সময় পরিচালক (ইমিগ্রেশন) বলেন, সার্ভার লক করার অজুহাত অমূলক। অনেকে বললেন, সার্ভার লক করার জন্য ব্যবসা করতে পারছেন না। এটা ঠিক না। কারোর ভিসার মেয়াদ শেষ বা ফ্লাইটের সময় ঘনিয়ে এলে মানবিক দিক দেখা হয়। ক্ষণিক সময়ের জন্য হলেও সার্ভার খুলে দেয়া হয়। অনেকে মনে করেন দুই এয়ারপোর্ট (বাংলাদেশ এবং যে দেশে কর্মী যান সেখানে) পার করে দিলেই দায়িত্ব শেষ। ওখানে গিয়ে নাজুক অবস্থা পড়লে, সেখানে কিন্তু তাদের (শ্রমিক) আত্মীয়-স্বজন নাই। বাংলাদেশে খারাপ অবস্থা হলে আত্মীয়-স্বজন পাশে দাঁড়ায়। ওখানে দাঁড়াবে কে? এটা তো মাথায় রাখতে হবে। সার্ভার লকে ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে, এটা ঠিক না। লক করার কারণে ক্ষতি হয়েছে বলতে পারবেন না। বিএমইটির ডিজি এ সময় বলেন, আমরা বারবার বলছি বিশেষ করে যারা মহিলা কর্মী পাঠান, তাদের বারবার বলা হয়েছে, নীতিমালা করা হয়েছে। আপনারা সেটা মানছেন না। এই ধরনের ব্যবসা কিন্তু করতে দেব না। যারা সঠিকভাবে করবেন ব্যবসা করবেন, সঠিকভাবে না করলে করতে পারবেন না। রিক্রুটমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে আপনাদের থাকতে হবে। আপনারা দালালের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। দালাল যা এনে দেয় তাদের আপনারা ট্রেনিং সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। প্রথম কাজ হলো আপনি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক প্রত্যেকের রিক্রুটমেন্ট করার সময় উপস্থিত থাকবেন। এরপর আমাদের ট্রেনিং সেন্টারে (বিএমইটি) পাঠাবেন। আপনারা কেউ তাদের (বিদেশগামী) চেহারাই দেখেন না। কেউ জানেনই না। শুধু দালালের মাধ্যমে গ্রাম-গঞ্জ থেকে নিয়ে এসে কোনো মতে তুলে দিতে পারলেই যেন হলো। আপনি নিজে রিক্রুটমেন্ট করবেন, প্রত্যেক কর্মীকে রিক্রুটিং এজেন্সির যোগাযোগ ঠিকানা-নম্বরসহ কার্ড দেবেন, এটা আপনারা কেউ করেন না। যারা প্রফেশনাল ওয়েতে বিজনেস করবেন, করেন। যারা করেন তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু অভিযোগ আসে না। আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি ঠিক আছে। আপনারা তো দিতে পারেন, দেন না। তাদের চেহারাই দেখেন না। প্লেনে তুলে দিতে পারলেই যেন হয়ে যায়। এরপর দায়িত্ব হলো ফ্লাইটের আগে ব্রিফিং দেবেন, টেলিফোন নম্বর দিবেন। কোন এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছে তারা অধিকাংশই জানে না। এর নাম কি ব্যবসা? এজন্য কী আপনাকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে? আপনার লাইসেন্স যে বাতিল করিনি এটাই তো খাতির করছি। কাকে পাঠালেন, কোথায় পাঠালেন ডাটাবেজ করতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা শুধু ব্যবসা করবেন, আর দায়-দায়িত্ব নেবেন না, তা হতে পারে না। আগের ধ্যান-ধারণা বাদ দেন। গ্রাম থেকে দালালের মাধ্যমে ধরে নিয়ে আসলাম, প্লেনে উঠিয়ে দিলাম। ডলার পেলাম শেষ। এটা হবে না। স্থানীয় দালালের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের জয়নাল আবেদীন সৌদিতে যান। কাজ ও আকামা না পেয়ে পুলিশ রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি এর প্রতিকার চান। যেহেতু কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির নাম বলতে পারেননি তিনি তাই যে দালালকে টাকা দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে অভিবাসন আইনে মামলা করার পরামর্শ দেন ডিজি। শুনানিতে সৌদি থেকে ফেরত আসা হেলালুদ্দিন বলেন, ২০০৪ সালে সৌদি আরবে যান তিনি। এক কোম্পানি থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার পর অবৈধ হয়ে যান। ২০১০ সালে আউটপাস নিয়ে ফিঙ্গারিং দিয়ে দেশে আসেন। পরে আবার দুই বছর দুবাই থাকেন। সৌদির নিয়ম অনুযায়ী অবৈধ হয়ে ফিঙ্গারিং দিয়ে দেশে ফিরলে তার আর সেদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু, চট্টগ্রামের এক পরিচিত জনের মাধ্যমে ফের সৌদিতে যান তিনি। সেখান থেকে ফিরে আসতে হয় তাকে। এর প্রতিকার চাইলে বিএমইটির ডিজি বলেন, ফিঙ্গারিং দিয়ে দেশে এলে আপনি সৌদিতে ঢুকতে পারবেন না এটা ভালো করেই জানেন। এরপরও গেছেন। এর দায় শুধু রিক্রুটিং এজেন্সি বা ট্রেনিং সেন্টারের না। আপনারও।