Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ

প্রিন্ট সংস্করণ॥নুর মোহাম্মদ মিঠু

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯, ১০:৩৩ এএম


অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ

অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যের অপর নাম সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ। সুনামের সাথে চলমান এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমকে পুরোপুরি বিতর্কিত ভূমিকায় দাঁড় করিয়ে ধান্দাবাণিজ্যের আখড়ায় পরিণত করেছে নেপথ্যে থাকা বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান অধ্যক্ষ ইফতেকার আলী ও তার নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট। এ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের শুরুতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) গঠিত তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের সত্যতাসহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কার্যত তার বিরুদ্ধে আদৌ কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি মন্ত্রণালয় কিংবা মাউশি। অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার এতসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও বহাল তবিয়তেই আছেন অধ্যক্ষ ইফতেকার। সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি কলেজের একজন শিক্ষককে লিয়েনে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের যে সিদ্ধান্ত তা উপেক্ষা করেই অসদুপায়ে নিয়োগ লাভ করেন ইফতেকার আলী। নিয়োগের পরপরই সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে অনিয়ম-দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে পড়েন অধ্যক্ষ ইফতেকার। শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট সবাই জিম্মি ইফতেকার সিন্ডিকেটের কাছে। জানা গেছে, লিয়েনে নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই নিয়োগপ্রাপ্ত এ অধ্যক্ষ অস্বাভাবিকভাবে প্রায় দ্বিগুণ হারে আদায় করে নিচ্ছেন বেতন-ভাতাদি। অধ্যক্ষ ইফতেকারের বেতন ৭৫ হাজার টাকা হলেও কলেজ থেকে প্রতি মাসে বেতনের নামে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন ইফতেকার। যা অভিযোগ প্রাপ্তির পর মাউশির তদন্তের প্রতিবেদনেও কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইফতেকার আলীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ এবং এ পর্যন্ত যে পরিমাণ বেতন-ভাতাদি এ অধ্যক্ষকে পরিশোধ করা হয়েছে তাতে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ উপকৃত না হয়ে বরং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। শুধু তাই নয়, টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ গাইড বই ও সিলেবাস অন্তর্ভুক্তকরণ অভিযোগেরও সত্যতা পাওয়া গেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী শিক্ষককে হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অভিযোগটি প্রমাণিত না হলেও আর্থিক বিষয়াদি পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং সকল শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে সমআচরণের বিষয়ে তাকে আরও বেশি যত্নবান হওয়া আবশ্যক। যা কার্যত আদৌ হতে দেখা যায়নি বলে জানায় কলেজসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এছাড়া তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও আংশিক প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সূত্রে জানা গেছে, ইফতেকার আলী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত পরিসংখ্যানের শিক্ষক। তিনি এর আগে ঢাকা কলেজে ছিলেন। তদবির করেই সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ পদটি হাতিয়ে নেন তিনি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কোষাধ্যক্ষ পদে থাকা অবস্থায়ও ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা পড়লেও আদৌ তার বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে গ্রহণ করা হয়নি কোনো ব্যবস্থা। অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর নিয়োগ অবৈধ, তাকে বেসরকারি কলেজের নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়নি, স্বেচ্ছাচারিতাভাবে কলেজ পরিচালনা করছেন এবং কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগসহ টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করছেন উল্লেখ করে গত বছরের শুরুর দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়। তদন্ত কমিটি সত্যতা পেয়েছে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও তার বিরুদ্ধে কেন আদৌ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এমন প্রশ্নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গতকাল রাতে আমার সংবাদকে বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে এ মুহুর্তেই তিনি কিছু বলতে পারছেন না। অফিস চলাকালীন সময়ে তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনে জানাতে পারবেন। না জেনে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। গত বছরের শুরুতে অভিযোগ প্রাপ্তির পর তদন্তের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে দেয়া হলেও পরবর্তীতে ফের ১৩ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। তৎকালীন সময়ে মাউশির সহকারী পরিচালক আশেকুল হক এবং সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বনমালী মোহন ভট্টাচার্য্যকে তদন্তের ভার দেয়া হলে একই বছরের ১৪ অক্টোবর অভিযোগটি সরেজমিন তদন্ত করেন তারা। তদন্তের প্রেক্ষিতে গত ২ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদনও দাখিল করেন। অথচ প্রতিবেদন ফাইল আকারে মাউশিতে ফ্রিজে রক্ষিত করা হয়েছে বলে দাবি করছে কলেজসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এদিকে আজ মঙ্গলবার সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের শহীদ মিনার ও ছাত্রী কমনরুমের উদ্বোধন উপলক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপস্থিত থাকার কথা শুনে অধ্যক্ষ ইফতেকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের আশায় রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদেরও একাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ ইফতেকার আলী বলেন, তিনি এ কলেজ থেকে বেসিক ৭০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট দেড় লাখ টাকা বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করেন। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে, এ বিষয়ে মাউশি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ডাকা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদনে আংশিক সত্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সেখানে কোনো অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি সত্য না মিথ্যা তা পুরোপুরি উল্লেখ নেই। এছাড়া মাউশি থেকেও তাকে ডাকা হয়নি। লিয়েনে নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছ পন্থা অবলম্বনের অভিযোগ রয়েছে আপনার বিরুদ্ধে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মেনেই এবং পরিচালনা পর্ষদের অনুরোধে তিনি ঢাকা কলেজ ছেড়ে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।