Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

২৫ হাজার কেমিক্যাল গুদাম অবৈধ

প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯, ০৬:২২ পিএম


২৫ হাজার কেমিক্যাল গুদাম অবৈধ

পুরান ঢাকায় ২৮ হাজার কেমিক্যাল গুদামের ২৫ হাজার ৫০০ গুদামের লাইসেন্স নেই। বছরের পর বছর অবৈধ গুদাম মালিক প্রকাশ্যে ব্যবসা করে চলছেন। আর যাদের লাইসেন্স নেয়া দুই হাজার ৫০০ কেমিক্যাল গুদামের কার্যক্রম বসতবাড়িতে চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ফলে গত ১২ বছরে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম থেকে তিন শতাধিক অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে।সরেজমিন দেখা যায়, পুরান ঢাকার প্রতিটি বহুতল বাড়ির নিচে কেমিক্যালে ঠাসা। অধিকাংশ কেমিক্যাল গুদামের পাশে একটা করে বড় রুম, যেটা আবাসিক মেস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব মেসের পাশের গুদামেই রয়েছে গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোজ, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, মিথাইল-ইথাইল-কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোপাইল, টলুইনের মতো দাহ্য পদার্থ। ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হওয়ার পর কয়েক দফা অভিযান চালিয়েও পুরান ঢাকা থেকে এসব কেমিক্যাল গুদাম অপসারণ হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব কেমিক্যাল গুদামের ৯৮ শতাংশই অনুমোদনহীন। অগ্নিদুর্ঘটনার বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে এসব গুদাম।পুরান ঢাকায় আবাসিক এলাকায় ২০০ ধরনের অতি দাহ্য ও কম দাহ্য কেমিক্যাল ঠাসা। এসব কেমিক্যাল গুদাম উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হঠে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। পরে লাইসেন্সবিহীন কেমিক্যাল গুদাম উচ্ছেদের ঘোষণা আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এবারো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পুরান ঢাকার সব কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদ অভিযান চালাবে ডিএসসিসি। তবে ৯ বছর আগে নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের পর এসব কেমিক্যালের গুদামগুলো সরানোর দাবি উঠেছিল জোরেশোরে। স্থানান্তরের জন্য কেরানীগঞ্জে জায়গাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেকে সরেনি। নিমতলীর পর এবার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটল, যাতে নিহত হলো ৬৭ জন। এ ঘটনার কিছুদিন পর আবারো সিটি কর্পোরেশনের কেমিক্যাল গুদাম উচ্ছেদের অভিযানে শীতিলতা আসবে বলে মনে করছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গুদাম অপসারণের সময়ে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এখনো যেসব বাড়ির মালিকরা কেমিক্যাল গুদাম অপসারণের উদ্যোগ নেননি সেসব বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পুরান ঢাকার সব কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তর না হবে, ততক্ষণ এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান মেয়র।পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, কেমিক্যালের গুদাম থেকে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয়। সেই টাকা কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর নেতা থেকে শুরু করে বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত হারে বাজেট থাকে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম সরানো নিয়ে কেউ কেউ ভোটের রাজনীতি করেন। এসব কারণে গুদাম সরানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয় না।বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, রাজধানীতে বৈধর চেয়ে অবৈধ কেমিক্যাল গুদাম বেশি। বিস্ফোরক অধিদপ্তর পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্যের অনুমোদন দেয়। তবে পুরান ঢাকায় যেসব কেমিক্যাল গুদাম রয়েছে সবই অবৈধ বলে মনে করেন তিনি।রাজধানীতে বর্তমানে বৈধ এবং অবৈধ কেমিক্যাল গুদাম কতগুলো রয়েছে এর সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই কোনো সূত্রেরই। তবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরান ঢাকায় রয়েছে ২৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন বা রাসায়নিক দাহ্য বস্তুর গুদাম। এসবের মধ্যে ১৫ হাজার আছে খোদ বাসাবাড়িতেই। মাত্র আড়াই হাজার গুদামকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। বাকি ২২ হাজারের বেশি গুদামই অবৈধ।ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেন, ২০১০ সালে নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যুতে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের কারখানা ও গুদামগুলো সরানোর দায়িত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০১৭ সালের মার্চে একবার অভিযান শুরু করলেও কয়েকদিনের মাথায় তা থেমে যায়। তবে এবারের কার্যক্রম চলামান থাকবে।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আমার সংবাদকে বলেন, আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গুদাম সত্যি অবিশ্বাস্য। একই ঘরের বিস্ফোরক ও মানুষের বসবাস। আর পুরান ঢাকার অবকাঠামোগত অবস্থা এমন এখানে ট্র্যাজেডি স্বাভাবিক কথা। নীতিমালা না থাকায় মিশ্র ব্যবহারের নাম দিয়ে একই ভবন কারখানা, দোকানপাট, আবাসিক খাতে ব্যবহার হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে নিমতলী ট্র্যাজেডির পর রাজধানীর রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী, ঢাকা’ প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পায় আট বছর পর ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর। ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)।