Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

যত্রতত্র এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারে নেই সতর্কতা

প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯, ০৬:৪১ পিএম


যত্রতত্র এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারে নেই সতর্কতা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তরলীকৃত পেট্রলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার ব্যবহার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ঢাকা সিটির পাশাপাশি বিভাগীয় ও বড় জেলা শহরগুলোর মার্কেট এরিয়াতে এলপিজি সিলিন্ডার বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। বাসাবাড়ির পাশাপাশি এখন ফুটপাতের খাবার দোকান ছাড়াও চায়ের দোকানগুলো গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে দেদার। এ সিলিন্ডারগুলো ব্যবহারের নেই কোনো সতর্কতা। কেউ মানছেন না নিয়ম। সবার একটায় চিন্তা, শুধু ব্যবসা। ঢাকা সিটিতে প্রায় দুই কোটি লোকের বসবাস। সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর ফুটপাতগুলো মানুষের পদচারণায় ঠাসা থাকে। এর মাঝেই ফুটপাতের সাথে লাগোয়া খাবারের দোকানগুলোতে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন কিছু দোকান আছে যেগুলোর নিত্যদিনের ব্যবহারের সিলিন্ডারগুলো ফুটপাতের উপরেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ থেকে যে কোনো মুহূর্তেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে পথচারিদের অভিযোগ। ঢাকাসহ সারাদেশে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। আর এসব বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা বেড়েই চলছে। জিপিও মোড়ের পাশে পীরইয়ামেনি মার্কেট সংলগ্ন ফুটপাতের সাথে একটি খাবারের দোকানের বড় গ্যাস সিলিন্ডার দাঁড় করানো ছিল। এটা দেখে বেশ কয়েকজন বলাবলি করছিলেন, যত্রতত্র সিলিন্ডার ব্যবহার করার কারণে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। আবার আরেকজন বললেন, মানুষের হাঁটাচলার পথে সিলিন্ডার রাখলে সিগারেটের আগুনেও যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কে রাখে কার কথা। প্রশাসনের কেউ তো তদারকি করে না। আবার আরেকজন বলেন, আমরা কেউ সতর্ক না। প্রশাসনের লোকজনও তো ফুটপাতে হাঁটে, তাদের কি এসব চোখে পড়ে না। এগুলো সব কথা বলে আক্ষেপ করছিলেন তারা। অনেকেই অভিযোগ করে বলছেন, যেখানে-সেখানে সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণেই পুরান ঢাকার চকবাজার থানার চুড়িহাট্টা অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। আর কত তাজা প্রাণ গেলে প্রশাসনের হুঁশ হবে। পীরইয়ামেনি মার্কেটের ফুটপাতের মতো প্রায় সব ফুটপাতেই কম-বেশি খাবরের দোকান আছে। আর বেশির ভাগই অসর্তকতা অবস্থায় সিলিন্ডার ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ আছে। তবে এ বিষয়ে মানতে নারাজ হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সতর্কতা মেনেই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন।এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন এলপিজি সিলিন্ডার বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তাই মানহীনতার কারণে বাড়ছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। তারা আরও বলেছেন, অবৈধভাবে বড় সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা বা ক্রস ফিলিংয়ের কারণে এলপিজি সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ছে। লোকাল মার্কেটে যেসব চুলা তৈরি করা হয়, সেগুলো তেমন মানসম্মত নয়। কিছুদিন ব্যবহার করার ফলে এসব চুলা থেকে গ্যাস বের হতে থাকে। এর ফলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়াও সিলিন্ডার গ্যাস যে পাইপের মাধ্যমে যায়, সেটা প্লাস্টিকের পাইপ। চুলার চারপাশে গ্যাসের পাইপলাইন জড়িয়ে রাখা হয়। চুলা থেকে পাইপের দূরত্ব রাখতে হবে। সেটা যদি না হয় তাহলে চুলার তাপে পাইপ গলে যেতে পারে, গ্যাস লিক হতে পারে। এভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।এলপি গ্যাস ব্যবহারের পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলিন্ডারে উচ্চচাপে এলপি গ্যাস ভর্তি করার কারণে বিস্ফোরণ হয় না। আর প্রকৃতপক্ষে সিলিন্ডারে উচ্চচাপে এলপিজি ভর্তিও করা হয় না। এলপিজি ভর্তিজনিত কারণে কোনো সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় না। প্রকৃত কারণ হচ্ছে সিলিন্ডার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম না জানা। অসতর্কতা এবং সঠিক পরিবেশে সিলিন্ডার ব্যবহার না করা। সেই সাথে সিলিন্ডারের গুণগত মান যাচাই না করা। তাই ব্যবহারকারী, উৎপাদনকারী ও বিপণনকারীকে সিলিন্ডার ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। তবেই দুর্ঘটনা কমে যাবে। দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু বিষয়ে সতর্কতা বিষয়ে জানিয়েছে সেগুলো হলো সিলিন্ডার চুলা বা আগুনের পাশে রাখা যাবে না। অতিরিক্ত গ্যাস বের করার জন্য সিলিন্ডারে তাপ দেয়া যাবে না। রান্না শেষে চুলা ও এলপিজি সিলিন্ডার রেগুলেটরের সুইচ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। চুলা সিলিন্ডার থেকে কমপক্ষে ছয় ইঞ্চি উপরে রাখতে হবে। বাল্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেগুলেটর ব্যবহার করতে হবে। রান্নার আধা ঘণ্টা আগে ঘরের দরজা-জানালা খুলে দেয়া ভালো। এলপিজি সিলিন্ডার খাড়াভাবে রাখা উচিত, কখনোই উপুড় বা কাঁত করে রাখা যাবে না এবং রান্নাঘরের ওপরে ও নিচে ভেন্টিলেটর রাখা জরুরি।