Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

শেষ রক্ষা হলো না অধ্যক্ষের

প্রিন্ট সংস্করণ॥নুর মোহাম্মদ মিঠু

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯, ০৬:৫৮ পিএম


শেষ রক্ষা হলো না অধ্যক্ষের

অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে দেশের প্রথম মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে’র অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর লিয়েন বাতিল করে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তা লোভের বশবর্তী হয়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত এ কলেজে লিয়েনে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন প্রায় তিন বছর আগে। সূচনালগ্ন থেকেই সুনামের সঙ্গে চলমান এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রমকে ধ্বংসের মুখে পতিত করে নিজে ও নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন সিন্ডিকেটের আর্থিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় অবশেষে ব্যর্থ হয়েছে এ অধ্যক্ষ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আমার সংবাদে অধ্যক্ষ ইফতেকারের বিরুদ্ধে ‘অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ, নেপথ্যে অধ্যক্ষ ইফতেকার সিন্ডিকেট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নজরে আসে। আর সে দিনই ওই কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে অধ্যক্ষের ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি এবং এ অধ্যক্ষকে মন্ত্রণালয় থেকে শোকজও করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার মন্ত্রণালয় থেকে তার লিয়েন বাতিল করে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহযোগী অধ্যাপক (পরিসংখ্যান) হিসেবে বদলি করা হয়। যদিও এর আগে ইফতেকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সত্যতা মিললেও কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এছাড়াও অধ্যক্ষ ইফতেকার ও তার সিন্ডিকেটের সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার সংবাদের প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি (স্মারক নং- ০১(৭৭১) জাতী: বি:/প্রশা:/বিবিধ-৩/২০০৪ (অংশ)/১/২০০৩ স্মারকে অধ্যক্ষের লিয়েন বাতিলসহ পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের জন্য চিঠি দেয়া হয়। জানা গেছে, গতকাল রোববার তার লিয়েন বাতিল করে তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে ওএসডির আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্দেশ অমান্য করেই কলেজের মঞ্চে ওঠা, নিয়োগ বাণিজ্য, প্রায় দুই লাখ টাকা মাসিক বেতন-ভাতা গ্রহণ, লুটপাট ও ছাত্রীদের দিয়ে মানববন্ধন ও মিছিল করিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করাসহ নানান অভিযোগে তার লিয়েন বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি কলেজের অনুষ্ঠানে ইফতেকার আলীকে না দেখার মৌখিক নির্দেশ দিলেও মন্ত্রী চলে যাওয়ার সাথে সাথেই মঞ্চে উঠেই বিভিন্ন বিব্রতকর বক্তৃতা প্রদান করেন ইফতেকার। ইফতেকারের অনুগত গুটিকয়েক শিক্ষক ও ছাত্রীকে দিয়ে তার পক্ষে মিছিল করানোর পরিকল্পনা করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রীদের দিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করান। ইফতেকারের পক্ষে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের দুজন কর্তা ও কয়েকজন শিক্ষক। অথচ ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীদের উসকে দিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে স্বার্থ হাসিলের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে অধ্যক্ষ ইফতেকারের। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে লিয়েনে অধ্যক্ষ পদে ইফতেকারকে নিয়োগ দিয়ে কলেজটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগসহ অন্যান্য একাধিক অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ পদে ইফতেকার আলীর নিয়োগ অবৈধ। তাকে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী কলেজটিতে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কলেজটিতে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তকরণের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ওঠা ‘টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তকরণের’ অভিযোগটির সত্যতাও পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কর্মকর্তারা। দুই মাস আগে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনটির সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন না করে ফ্রিজে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে থাকা ইফতেকার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। তবে আমার সংবাদসহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় অধ্যক্ষ ইফতেকারের শেষ রক্ষা হলো না। জানা গেছে, ইফতেকার আলী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত পরিসংখ্যানের শিক্ষক। তিনি এর আগে ঢাকা কলেজে ছিলেন। তদবির করে লিয়েনে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ পদটি হাতিয়ে নেন তিনি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির দুই দফায় কোষাধ্যক্ষ পদে থেকেও ব্যাপক লুটপাট করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষকও তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে।

আরো পড়ুন :- অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ