Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

তৃণমূলে কঠোর বার্তা আ.লীগের

প্রিন্ট সংস্করণ॥মো. রফিকুল ইসলাম

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০৫:৫২ এএম


তৃণমূলে কঠোর বার্তা আ.লীগের

মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্ট নেতারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। প্রধান প্রতিপক্ষ স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীকে অনেকটাই নমনীয়তা দেখাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে বিদ্রোহী ও দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হচ্ছে। তাই কোন্দল ঠেকাতে কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা পাঠাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। আ.লীগের সূত্রে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী দিলেও ভাইস চেয়ারম্যানের দুই পদেই উন্মুক্ত রাখে আওয়ামী লীগ। বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্যই ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখে দলটির হাইকমান্ড। শুধু ভাইস চেয়ারম্যান নয়, চেয়ারম্যান পদেও দলীয় প্রার্থী দিলেও অনেকটাই উন্মুক্তভাবেই নির্বাচন হচ্ছে। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই ক্ষমতাসীন দলটির। আপাতত দৃষ্টিতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার ব্যাপারে নমনীয় রয়েছে দলটির হাইকমান্ড। শুধু নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্যই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা। তবে নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে দলটির দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মাঠে ছড়িয়ে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। সে জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি দৃষ্টি রাখছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তথ্য মতে, অতীতের স্থানীয় সরকারের যে কোনো নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যায় সারাদেশেই কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করে। তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী নিজ নিজ বলয় সৃষ্টি করে মাঠপর্যায়ে নিজের শক্তির জানান দেন। একে অন্যের বিরুদ্ধে সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশ ও এক প্রার্থীর আরেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে বির্তকমূলক আলোচনায় জড়িয়ে পড়েন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একই অবস্থা তৈরি হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। বিশেষ করে ভাইস চেয়ারম্যান পদটি উন্মুক্ত রাখার কারণে একাধিক নেতা প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে কাজ করছে। একটি পদে একাধিক প্রার্থী হওয়ার কারণে তারা পরস্পরবিরোধী গ্রুপ তৈরি করে নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াতে পারে বলে ধারণা করছে আওয়ামী লীগ। এসব সমস্যা যেন দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে শুরু করেছে টানা তৃতীয় মেয়েদে ক্ষমতায় থাকা দলটি। তাই দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা পাঠাচ্ছে তারা। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে কোনো ধরনের সংঘাত দেখতে চায় না বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে ‘নমনীয়’ হলেও আর তাদের ‘ছাড়’ দিলেও এ সুযোগে সারাদেশের তৃণমূলে প্রার্থীরা পরস্পরকে ঘায়েল করতে নানাভাবে চরিত্র হননে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় প্রচারণায় একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগারের ঘটনা ঘটাচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ছাড় দিতে নারাজ বিদ্রোহীরা। তারা বলছে- ভোটের রাজনীতিতে কোনো ছাড় হবে না। এতে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এর আগে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা পড়ে হাজারো অভিযোগ। অনেক স্থানে বিতর্কিত নেতাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। সে জন্যই অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি হতে পারে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা বিদ্রোহীদের বিষয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এর আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বধীন বিএনপি-জামায়াত নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আলাদাভাবে অংশ নেয়ার পরামর্শ দেয় আওয়ামী লীগ। দলটির কৌশল ছিলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা। তাতে রাজি নন জোটের নেতারা। ফলে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তাই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি অনেকটা নমনীয় থাকবে আওয়ামী লীগ। কোনো কোনো উপজেলায় রয়েছে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রতীক বরাদ্দ না হলেও একই অবস্থা ওখানেও। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে এ পর্যন্ত ১৯৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ ও নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখে বোঝা যাচ্ছে বাকি ধাপগুলোতেও এমন বিদ্রোহী থাকার শঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের প্রকাশ ঘটলে এবং সেসবের জন্য দল সমালোচনার শিকার হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মাঠে ছড়িয়ে পড়ে কি না সেদিকেও দল থেকে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে। এবার বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে কেন্দ্রীয় পর্যায় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিলেও কোন্দলের জের ধরে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে ব্যবস্থা নিবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ইতোমধ্যে দলের সিনিয়র নেতাদের এমন নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করে। আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের দলীয় প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদটি উন্মুক্ত করার কারণে একটি পদের জন্য একাধিক প্রার্থী কাজ করছে। আশা করি এখানে কোন্দল হবে না। তিনি বলেন, কোনো নেতা যদি পরস্পরবিরোধী গ্রুপ তৈরি করে নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি করতে না পারে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখতে শুরু করেছি। অভিযোগ পেলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল নেই। আগামীতেও হবে না। আর যদি কেউ কোন্দলে জড়িয়ে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে দল তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।